ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা, প্রতিনিধি ঃ আমাগো ইসকুল নদীতে ভাইসা গেছে, আমরা এহন ইসকুল যামু কেমনে ? আমাগো বাড়ী-ঘর এহন এইহানে নিয়া আইছে আমাগো বাজান। মা কইছে এহন থাইকা আমাগো এহানে থাকতে হইবো। ইসকুল নাই। ইসকুল যামু কেমনে। পড়া লেহা করতে তো মনে চায়। আমাকো স্যার তো এহন এহানে আইসা পড়াইবো না। বই খাতা তো আমাগো আছে। আমাগো মা বাজান পড়া লেহা জানে না পড়াবো কেমনে ? এভাবেই কোমলমতি শিশুশিার্থীরা একের পর সংবাদকর্মীদের কাছে প্রশ্ন করেই চলেছে। কিন্তু কোন উত্তর নেই সংবাদকর্মীদের।
এসব শিশুদের মন রার্থে বলা হলো তোমরা সকলেই বই খাতা নিয়া আসো তোমাদের জন্য এখানেই স্কুল হবে। তোমরা আবারও আগের মত স্কুলে যাইবা। পড়া-লেখা করবা। শিতি হয়ে অনেক বড় হইবা। এই বলতেই হাতে বই খাতা নিয়া ছুটে আসে ফুলছড়ি গ্রামের বাঁধে আশ্রয় নেয়া আজিজের শিশু কন্যা তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী আজিজা, ছামছুলের শিশু পুত্র প্রথম শ্রেণীর ছাত্র মোমিনুর,শফিকুলের শিশু কন্যা চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী শান্তি আক্তার,শাহাজাহানের শিশু পুত্র দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র আহাদুল,দারব আলীর শিশু পুত্র চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আসিক,আতোয়ার হোসেনের শিশু পুত্র তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র মিামুন ও বেরিবাধে আশ্রয় নেয়া কালামের কন্যা পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মমেনা,মোহাম্মাদ আলীর কন্যা ৬ষ্ট শ্রেণীর ছাত্রী ইসমোতারাসহ অসংখ্য শিশু কিশোর ছুটে আসে বই-খাতা হাতে নিয়ে।
ছবি তুলতেই ছুটে আসে আশ্রয় নেয়া এসব শিশুদের অভিভাবকবৃন্দ। তাদের মধ্যে এসব শিশুদের অভিভাবক আব্দুল হালিম,শাহাজাহান,কাদের জানান, আমরা ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দু:শ্চিন্তায় আছি। হঠাৎ করে সর্বনাশী তিস্তা আমাদের বাড়ী-ঘরের সাথে সাথে ছেলে মেয়েদের স্কুলগুলিও নদী গ্রাস করে গিলে ফেলেছে। আমরা তো কোন মতে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু আপাতত পেয়েছি।
প্রশাসন থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষজন আমাদের খোঁজ খবর মোটামুটি ভালোই নিচ্ছে। খাওয়া দাওয়াসহ কোন কিছুর অসুবিধা হচ্ছে না। এমন কি স্বাস্থ্য সেবা হাতের নাগালেই পাচ্ছি । সরকারী ভাবে স্বাস্থ্য বিভাগ মেডিকেল ক্যাম্প করেছে । কিন্তু দু:চিন্তায় পড়েছি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে।
নদনদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় প্রায় ২/৩ মাস ধরে স্কুলে যেতে পারেনি ছেলে-মেয়েরা। এভাবে চলতে থাকলে এসব কোমল মতি শিশুরা আর স্কুলে যেতে চাইবে না। এক সময় তারা ঝড়ে পড়বে। এলঅকার এক জন স্বচেতন ব্যক্তি নয়ন বলেন, আমি বুঝে উঠতে পাড়ছিন যে কেন এখনও প্রশাসন এসব কোমল মতি শিশুদের কথা চিন্তা করে আপাতত অস্থায়ী ভিক্তিতে বাঁধে একটি স্কুল ঘর নির্মাণ করে আশ্রয় নেয়া শিশুদের পড়ালেখা চালু করছে না। তাছাড়া যে সব স্কুল নদীগর্ভে বিলীণ হয়ে গেছে সেসব শিক্ষকবৃন্দ তো আছেই। তাদেরকে দিয়েই এই শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব। তা না হলে আর কিছু দিন গেলে এরা ঝড়ে পড়ে যাবে। পড়াশুনায় মনোবেশন করতে চাইবে না। এমনিতেই তারা এখন ছিন্নমূল পথ শিশুর মতোই ঘুরে ফেরছে ইেদক সেদিক।
উফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় তিস্তা ব্রম্মপুত্র ভয়াবহ বন্যায় ভাঙ্গনের শিকার একাধীক ইউনিয়নের একের পর এক গ্রামগুলির সবকিছুই বিলীন হয়ে যাওয়ায় ওই এলকার বসবাসকারী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কায্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
ফুলছড়ির এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ান নদী বেষ্টিত সর্বনাশী তিস্তার গতিপথ এবারে পরিবর্তন হয়ে নতুন একটি চ্যানেল সৃষ্টি হওয়ায় ইউনিয়টির ৬ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,১টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ১টি কিন্টার গার্ডেন বিদ্যালয় বন্যা ও ভাঙ্গনের কবলে পরে ধ্বংস হয়ে গেছে। বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন না হলেও এক বুক পানিতে তলিয়ে রয়েছে। উপজেলা ঘাঘটনদী বেষ্টিত কামারজানী ইউনিয়নটি বন্যা ও ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠানসহ ইউনিয়নটির ৪-৯ ওয়ার্ডের গ্রামগুলি ফুলছড়ির মানচিত্র হতে হাড়িয়ে যেতে বসেছে। ৬টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১টি উচ্চ বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় শিক্ষা কায্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ মোল্লারচর মধ্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানের হাঠ বাবুপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জিঞ্জিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, টেপাখালী ২নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্বখড়িবাড়ী প্রাথমিক সরকারী বিদ্যালয়, হায়দার পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একতার বাজার কিন্টার গার্ডেন বিদ্যালয়ও ইউনিয়নটির একমাত্র টেপাখড়িবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়টি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
শিক্ষা কার্যক্রমের খবর নিতে কথা হয় ফুলছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে তিনি জানান, বন্যায় ও ভাঙ্গনের কারনে বিদ্যালয়টির অস্তিত্ব প্রায় বিলীনের পথে। আমার বিদ্যালয়ে ৪৭২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। গত প্রায় দুই মাস ধরে পাঠদান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের ভবিষৎ জীবন হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। টেংরার সরকারী প্রাথমিক দ্যিালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, তার বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে বিদ্যালয়টি পানিতে তলিয়ে গেছে। ৩১৮ জন শিক্ষর্থীর পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) হাবিবুল আলম জানান,, যে কোন ভাবেই হোক এসব শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। প্রয়োজনে টিনসেড অস্থায়ী ঘর নিমার্ণ করে হলেও জরুরী ভিক্তিতে এসব শিশুদের পড়া-লেখার দিকে ফিরে আনতে হবে। এ জন্য সংশিষ্ট কর্তৃপরে তড়িৎগতিতে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।