এর আগে ২০ জুলাই র্যাব নিখোঁজ ২৬১ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে। ৯ আগস্ট সবশেষ হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী নিখোঁজ ৭০ জন বলে জানানো হয় রিপোর্ট আইজিপি একেএম শহীদুল হকসাম্প্রতিক সময়ে ঘরছাড়া যুবকদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর খবর প্রকাশের প্রেক্ষাপটে এবার নিখোঁজ ৪০ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে পুলিশ।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আগে র্যাব একটি নিখোঁজ তালিকা প্রকাশ করেছিল, এসবিও একটি তালিকা তৈরি করেছে। কিন্তু আমরা সেসব তালিকা নিয়ে যাচাই-বাছাই করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করিনি। এখন যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের পর আমরা জানতে পেরেছি, সারাদেশে নিখোঁজের সংখ্যা ৪০ জন।’
জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণেই এরা নিখোঁজ হয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নিখোঁজ হওয়ার আগে এদের চালচলন পরিবর্তনের বিষয়ে যে তথ্য আমরা পেয়েছি, তাতে ধারণা হচ্ছে, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণেই তারা নিখোঁজ হয়েছে। ‘কারণ এই ৪০ জনের অনেকেই নিখোঁজ হওয়ার পর ফোন কিংবা এসএমএসে পরিবারকে জানিয়েছেন যে তারা ভালো আছেন।’
গত জুলাইয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নজীরবিহীন সন্ত্রাসী হামলার পর জড়িতদের কয়েকজনসহ আরো অনেকের দীর্ঘদিন ধরে নিরুদ্দেশ থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে।
এরপর ২০ জুলাই র্যাব নিখোঁজ ২৬১ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে। পরে দুই দফা এই তালিকা হালনাগাদ করা হয়। ২৫ জুলাই প্রথম হালনাগাদ তালিকায় ৬৮ জনকে নিখোঁজ দেখানো হয়। ৯ আগস্ট সবশেষ হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী নিখোঁজ ৭০ জন।
আগের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অধিক কর্মঠ ও শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও জঙ্গিদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে শহীদুল হক বলেন, ‘এই ব্যাপারটি ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তৈরি হয়। তাছাড়া ফেসবুক, ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে তারা মোটিভেটেড এবং সংগঠিত হয়। তবে পুলিশ এখন বুঝতে পেরেছে তারা কিভাবে সংগঠিত হয়, মোটিভেটেড হয়। তাই পুলিশ এখন সতর্ক। আমরা আশা করছি, এই ধরনের মোটিভেটিং কার্যক্রম আর বাড়বে না।’
সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় নিহত তিনজনের পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন।
তারা হলেন তামিম চৌধুরী (৩০), যাকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ‘মূল হোতা’ হিসেবে বলে আসছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী। কানাডায় বেড়ে ওঠা তামিমকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও ছিল।
পুরস্কারের টাকা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জে নিহত অন্য দুইজন হলেন- কাজী ফজলে রাবি্ব (২২) ও তাওসিফ হোসেন (২৫)।
গুলশান হামলার পর যশোর পুলিশ নিখোঁজ যে পাঁচজনের ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপিয়েছিল সেখানে দুই নাম্বারে রাবি্বর ছবি ছিল। আর ধানম-ির ৪৯ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা ডা. মো. আজমলের ছেলে তাওসিফ গত মার্চে ঘর ছাড়েন বলে পুলিশের তথ্য।
গুলশানের ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে নিহত নিবরাস ইসলাম, শোলাকিয়ায় হামলার পর পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত আবীর রহমান এবং কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত শেহজাদ রউফ অর্কও একই সময়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন বলে তাদের পরিবারের ভাষ্য।
গত ১ জুলাই গুলশানের ক্যাফেতে হামলার আগে ঢাকার এই চার তরুণই ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিলেন বলে জুলাইয়ের শেষদিকে জানিয়েছিলেন জঙ্গি-তদন্তে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তারা সে সময় বলেন, এই চারজনসহ মোট আটজন ওই মেসে থাকতেন এবং তারা সবাই গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় জড়িত ছিলেন বলে তাদের ধারণা।