মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, গুম ও অপহরণের পর আটকে রেখে নির্যাতনসহ ১৪টি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেম আলীর বিচার হয়।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল— এর মধ্যে ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড আর বাকি ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মোট ৭২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে মীর কাসেমকে খালাস দিলেও ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখে ১১ নম্বর অভিযোগ।
২, ৩, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ড বহাল এবং ৪, ৬ ও ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে কাসেমকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ।
২০১৩ সালের ১৬ মে মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়— এর মধ্যে ২টি অভিযোগে ৮ জনকে হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৮টি অভিযোগে আরও ৭২ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
গত ৮ মার্চ মীর কাসেম আপিল করলে ট্রাইব্যুনালের ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর দেয়া সাজাই বহাল থাকে। পরে ৬ জুন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনার জন্য ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম।
মীর কাসেমের অপরাধ:
১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর মীর কাসেমের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী ওমরুল ইসলাম চৌধুরীকে অপহরণ করে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেল ও পাঁচলাইশ থানার সালমা মঞ্জিল এবং চামড়ার গুদামে নিয়ে নির্যাতন।
১৯ নভেম্বর চাকতাই থেকে লুৎফর রহমান ফারুককে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নির্যাতন। মীর কাসেমের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে নির্যাতন। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ ৬ জনকে অপহরণের পর হত্যা।
মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ ৬ জনকে হত্যার অপরাধে মীর কাসেমকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
তবে মীর কাসেমের নির্দেশে চট্টগ্রামে রঞ্জিত দাস ও টুন্টু সেনকে অপহরণের পর হত্যার অপরাধে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ।
স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে যে কজন এদেশিয় দোসর সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছেন তাদের অন্যতম হলেন মীর কাসেম আলী।
শুধু পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাই করেননি নিজ হাতেও চালিয়েছেন নির্যাতন, করেছেন হত্যা।
সেই সময় চট্টগ্রামে আলবদর বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ডালিম হোটেলে তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী মানুষদের ধরে এনে নির্যাতন এবং অনেককে হত্যা করা হয়।