রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মৈত্রীর পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের কূটনৈতিক সম্পর্কে সংকটের মুখে পড়েছে। দু’দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এই তীব্র মতদ্বৈধতার কথা স্বীকার করেছেন বৃটিশ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, রাশিয়ার প্রতি নরম মনোভাব নিয়ে নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ‘খুবই কঠিন’ আলোচনা চলবে সামনের মাসগুলোতে। নির্বাচন জয়ের পর গণমাধ্যমে দেয়া নিজের প্রথম সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি সিরিয়ার বিদ্রোহীদের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করবেন। পাশাপাশি তিনি ‘সুন্দর’ চিঠি পাঠানোর জন্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ জানান। এর পরপরই দীর্ঘদিনের মিত্র বৃটেনের অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এ খবর দিয়েছে বৃটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ। সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বরং রাশিয়ার সঙ্গে জোট বাঁধবেন এবং আইএস নির্মূলে মনোযোগী হবেন। এর আগেও তিনি আইএস’র বিরুদ্ধে মার্কিন-রাশিয়ার জোট গঠনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে তার এমন দৃষ্টিভঙ্গি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র সম্পূর্ণ বিপরীত। সিরিয়ায় নৃশংস সহিংসতা সংঘটনের জন্য তেরেসা মে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, সিরিয়ার দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ হতে হবে অবশ্যই আসাদকে ছাড়া। এছাড়া বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ এনেছেন। রাশিয়া ইস্যুতে মার্কিন নীতিতে নাটকীয় এই পরিবর্তন বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তাই আগামী তিন মাস, অর্থাৎ হোয়াইট হাউসে প্রবেশের আগপর্যন্ত ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার গুরুত্ব বোঝাবে বৃটেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন জনসন। ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। এসব সাক্ষাতে তিনি স্পষ্ট করবেন, বৃটেন বিশ্বাস করে যে, আসাদকে অবশ্যই সরে যেতে হবে। সম্প্রতি রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজ ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে সিরিয়ান উপকূলে পৌঁছেছে। এখান থেকেই জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস’র বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান শুরু করবে আসাদের মিত্র রাশিয়া। এর আগে আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিল। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার বদলে আইএসকে নির্মূল করাই হবে তার প্রশাসনের অগ্রাধিকার। তিনি এ-ও বলেন, আমরা এখন সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সহায়তা দিচ্ছি। অথচ, আমরা জানিও না, এরা কারা। এছাড়া প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকারকে আক্রমণ করলে, তা শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করাটা যুক্তরাষ্ট্রের একনম্বর অগ্রাধিকারে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্পকে বোঝাবে বৃটেন। আগামী দুই মাস ধরে এটিই হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান অগ্রাধিকার। বৃটিশ সরকারের প্রত্যাশা ছিল, নির্বাচনে জিতলে এ ইস্যুতে ট্রাম্প গলবেন। কিন্তু তার সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত মিলে যে তিনি অনেক বড় ইস্যুতে নরম হতে চাইলেও, রাশিয়ার সঙ্গে মৈত্রী গড়ার ইচ্ছায় কোন বদল আসেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, ট্রাম্পকে বোঝানোর কাজটি খুবই কঠিন হবে। কিন্তু তারা জোর দিয়ে বলেছেন, বৃটেন নিজেদের অবস্থান পাল্টাবে না। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে খুবই স্পষ্ট ছিলাম যে, ভবিষ্যতের সিরিয়ায় আসাদের কোনো স্থান নেই। তার হাতে ৪ লাখ মানুষের রক্ত।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক সূত্র জানান, পুতিনের সঙ্গে সরাসরি লেনদেনে গেলে নিজের অবস্থান পাল্টাতে বাধ্য হবেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, পুতিনকে ব্যাক্তি হিসেবে দেখেন ট্রাম্প। তার সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি। কিন্তু তিনি যখন আবিষ্কার করবেন পুতিন কোনো যুক্তি মানেন না, তখন হয়তো অবস্থান পাল্টাবে ট্রাম্পের। তবে এর জন্য সময় প্রয়োজন।’ সম্প্রতি ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ হিসেবে রাশিয়ান সীমান্ত থেকে ন্যাটোর সৈন্য প্রত্যাহারে ডনাল্ড ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়েছেন। পুতিনের মুখপাত্র বলেন, সীমান্ত থেকে ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতি একেবারে সরিয়া বা শ্লথ করলে দু’দেশের সম্পর্ক উন্নতির দিকে যেতে পারে। আবার ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। ট্রাম্প বলেছেন, সদস্য দেশগুলো ন্যায্য হারে অর্থ পরিশোধ না করলে, তিনি মার্কিন সমর্থন প্রত্যাহার করবেন। বৃটেন এ কারণে সদস্য দেশগুলোকে নিজেদের বাধ্যবাধকতা পূরণে উৎসাহিত করতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে।