রসরাজ দাসের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ধর্মীয় অবমাননাকর ওই ছবি কে পোস্ট করেছিল তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ
সেটি কার মোবাইল থেকে বা কোনো জাতীয় ডিভাইস ব্যবহার করে পোস্ট করা হয়েছে তা শনাক্ত করার জন্য সিআইডি’র সহায়তা চাওয়া হয়েছে। রসরাজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট জানতো এমন কয়েকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে জেলহাজতে থাকা রসরাজের জামিন শুনানি হবে আগামী ৩রা জানুয়ারি।
নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের রসরাজ দাশ দেশ-বিদেশে এখন আলোচিত নাম। রসরাজের ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি আপলোড করার ঘটনায় তুলকালাম হয় নাসিরনগরে। ছবি আপলোড করার পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে পাঠায় জেলহাজতে। রসরাজের পক্ষে এমন কাজ করা সম্ভব নয় বলে ঘটনার পর থেকে দাবি করে আসছেন তার স্বজন ও এলাকার মানুষ। রসরাজের মা নমিতা রাণী দাশ বলেন, তার ছেলে নির্দোষ। সে খুব ভালো। সে কখনোই এমন কাজ করতে পারে না।
তাহলে কে এই ছবি পোস্ট করলো তার উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে রসরাজের মোবাইল ফোনের বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা হয়েছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনে। তাতে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ, ছবিটি রসরাজের মোবাইল থেকে আপলোড হয়নি। অন্য কোথাও থেকে সেটি আপলোড হয়েছে। এর সন্ধান করতেই সিআইডি’র সহায়তা চেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, পোস্টটি কার মোবাইল থেকে বা এক্ষেত্রে কোন জাতীয় ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে আমরা পত্র দিয়েছে সিআইডি’র কাছে। ওই দিন পোস্টটি রসরাজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে অ্যাকটিভ করতে কোন জাতীয় ডিভাইস ইউজ করা হয়েছে এবং সেই আইপি অ্যাড্রেসটি কী তা জানার চাহিদা রয়েছে প্রেরিত পত্রে। তিনি বলেন, আইপি অ্যাড্রেসটি পেলে আইপি অ্যাড্রেসের লোকেশান অনুযায়ী ডিভাইসটি কার জানতে পারবো। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে রসরাজ তার এক ভাইয়ের মাধ্যমে ৮-১০ মাস আগে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খোলে। তার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জানতো আরো ২ থেকে ৩ জন। পাসওয়ার্ড জানতো তার আপন ছোট ভাইও। এরমধ্যে আশুতোষ দাস নামের একজন রসরাজের ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জানতো। ধর্মীয় অবমাননাকর ছবিটি পোস্ট করার ২০-২২ ঘণ্টা পর আশুতোষ রসরাজের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তার (রসরাজ) পক্ষে মুসলমানদের শান্ত থাকার এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিল। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, এতে নিশ্চিত আশুতোষ রসরাজের ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জানতো। আশুতোষসহ আরো কয়েকজনকে ধরতে পারলেই সব বেরিয়ে আসবে। পুলিশ এ বিষয়টিকেই এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা। এদিকে বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হরিপুরের আল আমিন সাইভার ক্যাফের মালিক জাহাঙ্গীর আলম রসরাজের ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে। সে এজন্য আশুতোষকে দায়ী করে। ছবি পোস্ট করার ব্যাপারে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় থাকা কজনের একজন জাহাঙ্গীর। তবে ঘটনার পর তার দোকান থেকে পুলিশের জব্দ করা দুটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক এর বিশেষজ্ঞ পরীক্ষায় তেমন আলামত পাওয়া যায়নি। ওই সময় দোকানের একটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক না পাওয়ার কথা জানিয়েছিল পুলিশ। জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আরো দুটি হার্ডডিস্ক উদ্ধার করে পুলিশ। সেগুলো এখন বিশেষজ্ঞ পরীক্ষার জন্য রয়েছে।
ছবি আপলোড করার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে গত ২৯শে অক্টোবর পুলিশ রসরাজকে গ্রেপ্তার করে এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠায়। এর জের ধরে পরদিন ৩০শে অক্টোবর নাসিরনগর ও হরিপুরে তাণ্ডব চলে। রসরাজ এখনো কারাগারে রয়েছে। আগামী ৩রা জানুয়ারি তার জামিন শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী মো. নাসির মিয়া। তিনি বলেন, আদালত ওই দিন রসরাজের মোবাইল ও মেমোরি কার্ডের ফরেনসিক রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে।
এদিকে ঘটনার পর ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রসরাজের পরিবার বাড়িতে ফিরেছে সপ্তাহখানেক আগে। রসরাজ হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাশের ছেলে। তারা পাঁচ ভাইবোন।