আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, যারা এ পথে যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে বিপথে পরিচালিত করছে তাদের কেউ রেহাই পাবে না। প্রধানমন্ত্রী গতকাল ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বক্তব্য রাখেন।
আগে পড়াশোনা পরে রাজনীতি- ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এমন পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতির পাশাপাশি তোমাদের প্রধান লক্ষ্যই থাকবে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদের গড়ে তোলা। কারণ তোমাদেরই আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দিতে হবে। আদর্শ-নীতি নিয়ে দেশ সেবার ব্রত নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলবে। নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ছাত্রলীগকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে নিজ নিজ এলাকায় যারা নিরক্ষর মানুষ আছে তাদের খুঁজে বের করে অক্ষর দান করতে হবে। যাতে দেশের কোনো মানুষ নিরক্ষর না থাকে। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। যেহেতু ছাত্রলীগের নীতি হচ্ছে শিক্ষা শান্তি প্রগতি। কাজেই শিক্ষার আলো জ্বেলে প্রগতির পথ বেয়ে শান্তির পথ হয়ে প্রগতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। দেশকে আমরা প্রগতির পথে এগিয়ে নিতে চাই। আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। এটা যেন থেমে না যায়। তার জন্য ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে নিজেকে তৈরি করতে হবে। এই দেশ এই রাষ্ট্র পরিচালনায় একদিন তোমাদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ উঠে আসবে। কিন্তু সেসময় যেন আর পেছনে ফিরে যেতে না হয়। আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ অন্ধকার থেকে এখন আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। দেশ আজ সবদিক থেকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই আলো ও প্রগতির পথে অগ্রযাত্রা যাতে থেমে না যায় সেজন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিজেদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।
মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা মানুষকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দেয়। মাদকাসক্তি শুধু একজন মানুষকে নয় একটা পরিবারকে ধ্বংসের দিকেও ঠেলে দেয়। আর জঙ্গিবাদ নতুনভাবে আবির্ভূত হয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয় এটা একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এই সমস্যার উৎসটা কি? আমরা ধর্মে বিশ্বাস করি। ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের স্থান নেই। মানুষ খুন করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে প্রলুব্ধ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা ভালো ও অর্থশালী পরিবারের সন্তান হয়েও তারা কিভাবে জঙ্গিবাদের পথে যেতে পারে? কিসের আশায়, জঙ্গিবাদের পথে গেলেই বেহেশতে যাবে? যারা গেছে তারা কি তাদের খবর পাঠিয়েছে তারা বেহেশতে গেছে? সেই খবর তো কেউ দিতে পারেনি। তাই এদের যারা বিভ্রান্ত করছে তাদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ার জন্য ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধন-সম্পদ চিরদিন থাকে না। আদর্শ ও নীতি নিয়ে দেশকে কিছু দিতে পারাই সবচেয়ে বড় সম্পদ। একমাত্র শিক্ষাই দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারে। আমি নিজের ছেলেমেয়েদেরও একটাই সম্পদ দিয়েছি- তা হলো শিক্ষা। শিক্ষাকে কেউ কোনোদিন ছিনতাই করতে পারবে না, কেড়ে নিতে পারবে না। শিক্ষা থাকলে সেটাই হবে তাদের চলার পাথেয়। অশিক্ষিতের হাতে দেশ পড়ে কী দুরবস্থা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে দেশের মানুষ তা দেখেছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, খালেদা জিয়া যখন হুমকি দিলো আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে ছাত্রদলই যথেষ্ট। আমি তখন ছাত্রলীগের হাতে কাগজ-কলম তুলে দিয়েছিলাম। তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছেন। বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্ব সভায় আমরা যে মর্যাদা পেয়েছি সেই মর্যাদা আমাদের সমুন্নত রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী রূপকল্প-২০২১ ঘোষণার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, এখন বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে আছে। বাংলাদেশ নিম্নে থাকবে না, ঊর্ধ্বে উঠবে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা অবশ্যই মধ্যম আয়ের দেশ করতে পারবো। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। সে ভাবেই আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে একটি শান্তির বাংলাদেশ। সেই ভাবে আমরা দেশকে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে সুইজারল্যান্ড অফ দ্য ইস্ট। অর্থাৎ প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে তিনি বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আমাদের এই সুযোগ আছে। আজকে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি আর মাত্র ১০টি বছর বেঁচে থাকতেন তবে বাংলাদেশ আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠতো।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। এ সময় মঞ্চে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত জীবিত থাকা ছাত্রলীগের অধিকাংশ সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই উপস্থিত ছিলেন। দলের এসব সাবেক নেতাদের ক্রেস্ট ও উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে সম্মান জানায় ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব।
খারাপ সংবাদের শিরোনাম না হওয়ার শপথ আর কখনো খারাপ সংবাদের শিরোনাম না হওয়ার শপথ নিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের এ শপথ পড়ান। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা আজকে শপথ নেব, আর কখনও খারাপ সংবাদের শিরোনাম হবো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জনকে ম্লান হতে দেবো না।’ তিনি আরো বলেন, ‘খারাপ শিরোনাম নেত্রীর অর্জনকে ম্লান করে দেয়। আর শেখ হাসিনার ১০/১২টা উন্নয়ন দুইটা খারাপ কাজের মধ্য দিয়ে ম্লান হয়ে যায়। আমরা শেখ হাসিনার অর্জনকে ম্লান হতে দেব না।’ বক্তৃতায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেত্রী বলেছেন, রাস্তা বন্ধ করে কোনো শোভাযাত্রা করা যাবে না। আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। তাই জনভোগান্তি যেন না হয়, সেটা দেখতে হবে। আজকের দিনের জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’
জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে এখন থেকে কেবলমাত্র শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে রাজধানীতে কোনো সভা, সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করবে না ছাত্রলীগ। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পরপরই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমরা শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন ছাড়া অন্য কোনোদিন রাজধানীতে সমাবেশ কিংবা শোভাযাত্রা করবো না।