দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনে একজন উপস্থাপক-মডেল হিসেবে দাপটের সঙ্গে কাজ করে আসছেন মাসুমা রহমান নাবিলা। নতুন নতুন সব অনুষ্ঠান উপস্থাপনা কিংবা বিজ্ঞাপনে ভিন্ন ভিন্নরূপে হাজির হয়ে বরাবরই দর্শক মাতিয়ে রাখছেন তিনি। তবে একসঙ্গে নানামুখি ব্যস্ততায় থাকতে পছন্দ করেন না নাবিলা। যখনই যে কাজটি করেন, মানের দিকটায় খেয়াল রাখেন আগে। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
নাবিলা বলেন, আমি কাজের মানের ওপর জোর দিই। মানসম্মত না হলে কোনো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা কিংবা বিজ্ঞাপনে কাজ করি না। আমার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত যা করেছি তার সবই যাচাই-বাছাই করেই করেছি। বিশেষত কোয়ালিটির কথাই ভেবেছি। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়েছি। আমি মনে করি, ভালোভাবে হলে একটি শো-ই যথেষ্ঠ। বেশি কাজের দরকার পড়ে না। আর তাছাড়া আমি পারিও না। এ মুহূর্তে টেলিভিশনে একটি মাত্র অনুষ্ঠানের কাজ করছেন নাবিলা। একুশে টিভিতে প্রচার চলতি ‘এক ডিশ দুই কোক’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছেন তিনি। এটি পরিচালনায় রয়েছেন শাহরিয়ার শাকিল। এ প্রসঙ্গে নাবিলা বলেন, আমার ভীষন ভালোলাগার কিছু কাজের মধ্যে এটি একটি। আগেও অনেক শো-এর হোস্টিং করেছি। কিন্তু এই অনুষ্ঠানের ধরনটা একটু আলাদাই বলা চলে। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে একুশে টিভিতে এটি প্রচার হচ্ছে। দারুণ সাড়া পাচ্ছি দর্শকের কাছ থেকে। আশা করছি দর্শক নিয়মিত অনুষ্ঠানটি দেখবেন।
উপস্থাপনা তারকা খ্যাতি এনে দিয়েছে নাবিলাকে। একেক চ্যানেলে একেক অনুষ্ঠানে দর্শক তার ভিন্ন উপস্থিতি দেখেছেন। তবে দর্শক যতই নাবিলাকে উপস্থাপনায় সাবলীল দেখেছেন ততটাই নান্দনিক দেখেছেন অভিনয়ে। অভিনয়শৈলীতে যে এতটাই দক্ষতা রয়েছে সেটা বোঝাই যেত না যদি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সফল ছবি ‘আয়নাবাজি’তে অভিনয় না করতেন। টিভি নাটকে তেমন কোনো উপস্থিতি নেই নাবিলার। তাই অভিনয়ে দর্শক খুব একটা দেখেননি। বলা চলে, অমিতাভ রেজার আয়নাবাজি’তেই সব। ক্যারিয়ারে একটি মাত্র চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন নাবিলা। আর সেখানেই বাজিমাত। গতবছর মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। উপস্থাপক নাবিলা দর্শকের হৃদয়ে স্থান করলেন অন্য ভূমিকায়। সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার ক্যারিয়ারে চলচ্চিত্রের বিষয়টি স্মৃতি হয়ে থাকবে। প্রথম ছবিতে এতটা সাফল্য পাবো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। মুক্তির পর এত এত সাড়া পেয়েছি তা বলে বোঝাতে পারবো না। আয়নাবাজি’র গল্প তো গেলো। হয়তো এ নিয়ে আরো কথা হবে আগামীতে। নতুন কি পরিকল্পনা চলচ্চিত্র নিয়ে?
এমন প্রশ্নে জবাবে নাবিলা বলেন, এখনো তেমন কিছু ঠিক করিনি। কথা চূড়ান্ত না হলে তো বলা ঠিক হবে না। তবে এটা ঠিক যে আমি একটি ভালো গল্পের চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই। আর সেজন্যই অপেক্ষা করছি। ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় পার করে এসেছেন নাবিলা। ভবিষ্যৎ নিয়ে কি পরিকল্পনা করলেন তিনি? জানতে চাইলে নাবিলা বলেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনোই কিছু ভাবিনি। আর সেটা ভেবে হয়ও না কিছু। হ্যাঁ, অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করবো। আগে যেমন ভালো ভালো কাজ করেছি। সামনেও তা-ই করবো। আর সিনেমার কথা আগেই বলেছি। আয়নাবাজির মতো ভিন্নঘরনার চলচ্চিত্রের কাজ পেলে অবশ্যই করবো। সৌদি আরবের জেদ্দায় বেড়ে ওঠা নাবিলার। সেখানে মাধ্যমিক পড়া শেষে দেশে ফিরেন পরিবার সহ। এখানে এসেই জড়িয়ে যান মিডিয়ার সঙ্গে।
২০০৬ সালে বাংলাভিশনের প্রচার চলতি ‘এবং ক্লাসের বাইরে’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টিভি পর্দায় অভিষেক হয় নাবিলার। এরপর ‘জানার আছে বলার আছে’, ‘মিউজিক টুগেদার’, ‘ভোক্যাব’, ‘হীপ হীপ হুররে’, ‘লাকি লাইন’, ‘এক্সট্রা ইনিংস’, ‘রবি সেরা প্রতিভা’, ‘ব্র্যাক ব্যাংক মেঘে ঢাকা তারা’, ‘দ্য মিউজিক ট্রেন’, ‘স্টার ডান্স’, ‘মার্কস অলরাউন্ডার’ সহ অনেক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন। উপস্থাপনার পাশাপাশি শার্প ব্লেড, ফেয়ার অ্যান্ড লাভালি, বাংলা লিংক, রবি, ডাবর ভাটিকা হেয়ার ওয়েল, আমিন জুয়েলার্স-এর বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় তো কাটিয়ে দিয়েছেন কাজের মধ্য দিয়ে। বিয়ে নিয়ে কি পরিকল্পনা তার? নাবিলা বলেন, বিয়ে নিয়ে এখন কিছু ভাবছি না। আমি পরিবারের বড় মেয়ে। এই প্রেসারটা এক সময় ছিল। এখন সেটা নেই। তবে আমি অবশ্যই বিয়ে করতে চাই। তবে সেজন্য উপযুক্ত পাত্র প্রয়োজন। শুধু তাই নয় উপযুক্ত সময় আসতে হবে।