ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের জন্মদিন পালনকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত সময়ের পরও ছাত্রীদের নিয়ে হলের বাইরে ছিলেন নেত্রীরা। হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই তারা সেখানে অবস্থান করেন বলে জানা গেছে। এবিষয়ে ছাত্রলীগ-হল প্রশাসন এবং সাধারণ ছাত্রীরা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন। ফলে ছাত্রীহলগুলোসহ পুরো ক্যাম্পাসে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের জন্মদিন ছিল। এ উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রিন্সের অনুসারীরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসানসহ কেন্দ্রীয়, বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর ও হল শাখার নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানে অন্যান্য হলের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ছাত্রী হল ( কবি সুফিয়া কামাল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী) থেকেও প্রায় শতাধিক ছাত্রী যোগ দেয়। রাত ৮টা থেকেই নেত্রীরা মেয়েদের নিয়ে জন্মদিন উদযাপনস্থলে আসা শুরু করেন। রাত ৯টা ২০ মিনিট থেকে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। জন্মদিন উপলক্ষে উড়ানো হয় ফানুস, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যে লাগানো হয় ব্যানার। পুরো এলাকায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। অর্ধশত আতশ বাজি ফাটিয়ে এবং প্রায় অর্ধ ডজন কেক কেটে উদযাপন করা। এসময় সাধারণ ছাত্রীদের নেতার ‘প্রটোকল’ এ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে করে হলে ফিরতে তাদের রাত ১০টা পার হয়ে যায়। অনুষ্ঠান চলে রাত ১১টা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, রাত সাড়ে ৯টার সময় আমি সেখানে যাই। কোন মেয়েকে পাই নি। সাড়ে ৯টার পর একটা মেয়েও বাইরে ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে ছাত্রীদের হলে প্রবেশ করতে হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী রাত সাড়ে ৯টার পর কেউ হলে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিয়ে নির্ধারিত সময়ের পর হলে প্রবেশ করলে বিষয়টি অবশ্যই শাস্তিযোগ্য। কোন ছাত্রসংগঠনের কর্মসূচীতে বা নেতার জন্মদিন পালনে যোগ দেওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম কোন নিয়ম নেই। কেউ যদি ব্যক্তিগত কাজ দেখায় সেক্ষেত্রে সময় উল্লেখ করতে হয় যে, এসময়ের মধ্যে ফিরে আসবো। কি কাজে যাচ্ছে সেটাও উল্লেখ করতে হয়। এদিকে অনুষ্ঠানে ছাত্রীদের জোর করে নিয়ে আসার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেত্রীদের বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের এক ছাত্রী বলেন, ‘রাত আটটায় নিশি আপু (হল ছাত্রলীগের সভাপতি) ‘প্রোগ্রাম’ আছে বলে টিএসসি নিয়ে যায়। আমরা পরীক্ষা চলছিল কিন্তু তাকে সেটা বলতেই সাহস পাইনি। কারণ এক ছাত্রীর পরদিন সকালেই পরীক্ষা ছিল। তাকেই ছুটি দেয়নি। তাই আমাদেরকেও সেখানে যেতে হয়েছে। অনেক রাত পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রেখেছে। হল বন্ধ হয় সাড়ে নয়টায়। আপু তারও অনেক পর আমাদের নিয়ে হলে ঢোকে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল ছাত্রলীগের সভাপতি বেনজির হোসেন নিশি বলেন, ১০টা পর্যন্ত লেইট পারমিশন নেয়া ছিল। পৌণে ৯টায় হলে প্রবেশ করি।
জানতে চাইলে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকিয়া পারভীন বলেন, ‘সাধারণত রাত সাড়ে ৯টার পর কেউ বাইরে থাকলে অনুমতি নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু গত সোমবার কেউ বাইরে গেছে কিনা আমি জানিনা, আমার থেকে কেউ অনুমতিও নেয়নি। অবশ্য অনুমতি ছাড়া কারও বাইরে যাবার কথাও না।’
কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফত জাহান এশা‘র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা হল প্রভোস্টের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছেন। তবে সাড়ে ৯টার মধ্যে হলে ফিরে গেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হল প্রবেশ করলে অনুমতি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেরী হতে পারে তাই আগেই অনুমতি নিয়ে রেখেছিলাম। তবে ওই হলের দায়িত্বরত দারোয়ান বলেছেন, ছাত্রীরা হল সভাপতি এশার সঙ্গে রাত ১০টা ১০ মিনিটের দিকে হলে প্রবেশ করেন।
এদিকে হল প্রভোস্টের কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সাবিতা রোজোয়ানা রহমান। তিনি বলেন, হলে ১১টার সময় প্রবেশ করলে তা পূর্বেই বাইরে থাকার কারণ জানিয়ে অনুমতি নিতে হয়। সোমবার ছাত্রলীগ সম্পাদকের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ছাত্রীরা নির্ধারিত সময়ের পর হলে প্রবেশ করে এবিষয়ে তিনি বলেন, এমনি হতে পারে তারা হলেই আসে নাই। নরমালি হল গেইট দিয়ে প্রবেশের কথা নয়। গেইটের চাবি ১০টার পূর্বে টিচারদের কাছে চলে যায়। অনুমতি নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে নেই নাই। এসব বিষয়ে ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, প্রোগ্রাম শেষ করার আগেই মেয়েদের হলে পাঠিয়ে দেই।