থেমে থেমে চলছে গাড়ি। কোথাও কোথাও থমকে আছে পুরোপুরি। ১০ মিনিটের যাত্রা ২ ঘণ্টায়ও শেষ হচ্ছে না। যানজটের এই চিত্র প্রধান সড়ক থেকে পৌঁছে গেছে মহল্লার অলিগলিতেও। রমজানের শুরু থেকে রাজধানীজুড়েই এ চিত্র। সকাল সাতটা থেকে শুরু হয় যানজট। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোগান্তি। দুপুরে কিছুটা শিথিল থাকলেও বিকাল থেকে থমকে দাঁড়ায় ব্যস্ত রাজধানী। প্রচণ্ড যানজট আর ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস নগরবাসীর। পরিবারপরিজনদের সঙ্গে ইফতার করতে ঘরমুখী হলেও রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সিটিং সার্ভিস, যত্রতত্র পার্কিং আর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাজধানীতে যানজট বেড়েছে। তবে, এ পরিস্থিতিকে অনেকটা স্বাভাবিক বলছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ট্রাফিকের ডিসি। তিনি বলেন, বিকালে অফিস ফেরত ঘরমুখী মানুষের চাপে যানজট বেশি থাকে। তবে রমজান জুড়ে যান চলাচল নির্বিঘ্ন রেখে নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এই ফোর্স আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
ভুক্তভুগি মো. রতন মিয়া বলেন, সোমবার বিকাল পাঁচটায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে উত্তরা থেকে কাওরান বাজার যাই। সাধারণত সর্বোচ্চ ৪৫ মিটিন সময় লাগলেও ওই দিন পৌঁছাতে প্রায় সাতটা বেজে যায়। তিনি বলেন, যানজটের কারণে পুরো রাস্তায় দুপাশে যানবাহন থেমে থেমে চলছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়িগুলো যেন একেবারেই থমকে যায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আলমগীর হোসেন বলেন, ডেমরা থেকে ধানমন্ডি এসে নিয়মিত অফিস করি। সময় লাগে দুই ঘণ্টার কম। রোজার শুরু থেকে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। গুলিস্তান, পল্টন ও শাহবাগ এলাকায় নিয়মিতই যানজটে আটকা থাকতে হয়। বেসরকারি চাকরিজীবী মহসিন আলী বলেন, নিয়মিত মোহাম্মদপুর থেকে পল্টন এসে অফিস করি। কিন্তু রমজানের প্রথম দিন থেকে বাসায় যেতে তিন ঘণ্টা আসতেও তিন ঘণ্টা। মিরপুর-নিউ মার্কেট রাস্তা থেকে পল্টন পর্যন্ত গাড়ি যেন যেতেই চায় না।
মঙ্গলবার রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই রাজধানীতে তীব্র যানজট। সময় যতো বাড়তে থাকে ক্রমেই যানজটের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। বেলা ১০টার পর থেকেই যানজট অসহনীয় রূপ নেয়। গুলিস্তান এলাকার পথচারীদের বেশ কয়েকজন জানান, রাজধানীর পোস্তগোলা, জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, টিকাটুলি, সদরঘাট থেকে গুলিস্তান, কমলাপুর, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা পর্যন্ত সীমাহীন যানজট। একই অবস্থা শাহবাগ, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, মিরপুর রোড, শ্যামলী, কল্যাণপুর, সাত মসজিদ রোড, ঝিগাতলা, ধানমন্ডির বিভিন্ন রাস্তা, বাংলামোটর, ফার্মগেট পর্যন্ত রাস্তারও। এদিকে নাবিস্কো থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা ও মহাখালী থেকে ফার্মগেটসহ রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তাঘাটই প্রায় অবরুদ্ধ থাকছে। বেশ ক’জন জানান, রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, বায়তুল মোকাররম, জিপিও, স্টেডিয়াম এলাকাসহ বেশকিছু এলাকায় সকাল থেকেই হকার বসেছে। অনেক এলাকার রাস্তায় লাইন দিয়ে ভ্যানগাড়িতে পণ্য সাজিয়ে ব্যবসা করছে হকাররা। বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ পার্কিংয়ের জন্যও তীব্র যানজট। বাংলামোটর লিঙ্ক রোড, হাতিরপুল, এলিফ্যান্ট রোডের দুই পাশজুড়ে রয়েছে শত শত পার্কিং করা যানবাহন। মতিঝিল এলাকায় রাস্তার দুই পাশজুড়ে দেখা যায় শত শত গাড়ি পার্কিং করা। এসব এলাকায় বড় বড় ভবন ও মার্কেটগুলোয় যথেষ্ঠ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় গাড়ি রাখা হয়েছে। গত কয়েক দিনে একই চিত্র দেখা যায় কাকরাইল মোড় থেকে পল্টন থানা পর্যন্ত। এই এলাকায় বেশ কয়েকটি ব্যস্ত মার্কেট থাকলেও ওই সব মার্কেটের পার্কিং ব্যবস্থা নেই। কোনো কোনো এলাকার রাস্তার পুরোটাই দখল করে পার্কিং বানানো হয়েছে। বিশেষ করে ওইসব পার্কিংয়ে সরকারি যানবাহনই দেখা যায়। সচিবালয় ও জাতীয় প্রেস কাবের মাঝের রাস্তাটি পুরো পার্কিংয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে এই এলাকার রাস্তাগুলোয় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার পাশে যানবাহন পার্কিং করায় রাস্তার আকৃতি ছোট হয়ে যায়। ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। নটর ডেম কলেজের উল্টো পাশের রাস্তায় এখন অঘোষিত বাস ডিপোতে পরিণত হয়েছে। এখানে থামিয়ে রাখা হয় কয়েক শ’ গাড়ি। এরমধ্যে বিআরটিসির গাড়িও রয়েছে। এমনকি ঢাকার বাইরের গাড়িও এই রাস্তায় পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকায় অস্তত ১০টি স্পটে বসেছে কাঁচাবাজার। মাছ-গোশত-তরিতরকারি বিক্রি হচ্ছে রাস্তার ওপরে। ফলে ওইসব স্পটে দিনভর লেগে থাকছে তীব্র যানজট। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার রমজানে যানজট নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও কোনো আয়োজন লক্ষ করা যায়নি গতকাল। কোনো কোনো এলাকায় ট্রাফিক পুলিশও দেখা যায়নি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে সাধারণ মানুষদের। এ ব্যাপারে ডিএমপি অ্যাডিশনাল কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সবাই ইফতারের আগে বাসায় ফিরতে চান। এতে একসঙ্গে গাড়ির চাপ তৈরি হচ্ছে। ঢাকা শহরের রাস্তার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। যে কারণে সব সময় চাপ থাকে। এছাড়া রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করাও যানজটের একটি বড় কারণ। তবে রমাজানে মানুষের ভোগান্তি যেন কিছুটা কম হয় সেজন্য আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।