পাক-ভারত ক্রিকেট দ্বৈরথে বোদ্ধাদের এমন মূল্যায়নটা দীর্ঘদিনের। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, বিরেন্দর সেওয়াগ, সৌরভ গাঙ্গুলিদের বিপক্ষে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, আকিব জাভেদ, শোয়েব আখতারের লড়াইটা চোখভরে উপভোগ করতেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের আগেও আলোচনাটা তেমনই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হচ্ছে আজ। আর শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচকে বোদ্ধারা দেখছেন ভারতের টপঅর্ডার ব্যাটিং বনাম পাকিস্তানের পেসারদের লড়াই হিসেবে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের আগে দু’দলের পরিসংখ্যানটাও বলে তেমন কিছুই।
৯১.৫ এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেরা ৯১.৫ ব্যাটিং গড় ভারতের। ওভারপ্রতি সেরা ৬.২৩ গড়ে আসরে ভারতের সংগ্রহ সর্বাধিক ১০৯৮ রান।
৩১ উইকেট শিকার পাকিস্তানি বোলারদের। আসরে আর কোনো দলের এমন কৃতিত্ব নেই। অস্ট্রেলিয়ার পর আসরের দ্বিতীয় সেরা ৩১.৭৭ বোলিং গড় পাকিস্তানের। আর দক্ষিণ আফ্রিকার পেছনে আসরের দ্বিতীয় মিতব্যয়ী ৪.৯৯ ইকোনমি গড়টাও পাকিস্তানি বোলারদের।
৮৭৪ রান সংগ্রহ ভারতের তিন টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানের। শিখর ধাওয়ান ৩১৭, রোহিত শর্মা ৩০৪ ও বিরাট কোহলির সংগ্রহ ২৫৩ রান। আসরে দ্বিতীয় সর্বাধিক ৪৮৩ রান সংগ্রহ ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডারের শীর্ষ তিন খেলোয়াড়ের। আসরে ভারতের শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যান গড়েন চারটি শতরানের জুটি।
২৩.৭৮ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ৩১৯ রান দেয়ার পর শেষ তিন ম্যাচে পাকিস্তানের বোলিং গড় ২৩.৭৮। এ তিন ম্যাচে ৪.৪৬ ইকোনমি গড়ে পাকিস্তানি বোলারদের শিকার ২৮ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে তাদের ইকোনমি গড় ছিল ৬.৬৪।
১৩-২ আইসিসির টুর্নামেন্টে ১৫ সাক্ষাতে ভারতের পক্ষে হারজিত ১৩-২ । এর এক ম্যাচে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ টাই শেষে বোল আউটে জয় দেখে ভারত। আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টে দুই হারের বিপরীতে ভারত জয় দেখেছে ৮ বার। ওয়ানডে বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়ের স্মৃতি নেই পাকিস্তানের। আইসিসির টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের দুটি জয়ই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। ২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ জয় দেখে পাকিস্তান। পরের ৭ ম্যাচে টানা হারের স্মৃতি পাকিস্তানের। যদিও মোট সাক্ষাতে পাকিস্তানের পাল্লা ভারি। ১২৮ সাক্ষাতে ৫২ হারের বিপরীতে পাকিস্তান জয়ে দেখেছে ৭২ বার।
২-০ ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের হারজিত ২-০। ২০০৭ টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়ে শিরোপার গৌরব কুড়ায় ভারত। আইসিসির টুর্নামেন্টের বাইরে ১৯৮৫ সালে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিকেট আসরের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারায় ভারত। এ দুই আসরেই গ্রুপ পর্বেও ভারতের কাছে হার দেখে পাকিস্তান।
৪ বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে খেলার গৌরব ভারতের। আর কোনো দলের এমন কৃতিত্ব নেই। ২০০০ আসরে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার দেখে ভারত। ২০০২-এ বৃষ্টিতে পণ্ড ফাইনাল শেষে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। আর ২০১৩ ফাইনালে ভারতের কাছে হার নিয়ে স্বপ্ন ভাঙে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের। আসরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলছে পাকিস্তান।
৩৪-৭ আইসিসির টুর্নামেন্টে ২০১১ সালের শুরু থেকে ছয় বছরে ভারত ৭ হারের বিপরীতে জয় দেখেছে ৩৪ বার। এ সময় আর কোনো দলের সাফল্যের এমন রেকর্ড নেই। এতে ২০১১ বিশ্বকাপ ও ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শিরোপাও ওঠে ভারতীয়দের হাতে। দ্বিতীয় সেরা হারজিতের অনুপাতটা নিউজিল্যান্ডের। গত ছয় বছরে আইসিসির আসরে ১২ হারের বিপরীতে কিউইরা জয় দেখেছে ২১ বার।
৫ পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে সব ফরমেটের ক্রিকেটে ১৭ ম্যাচে পাঁচবার ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার ওঠে বিরাট কোহলির হাতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে এর বেশি ম্যাচ সেরার পুরস্কারের কৃতিত্ব রয়েছে কেবল সৌরভ গাঙ্গুলি ও শচীন টেন্ডুলকারের। মহেন্দ্র সিং ধোনিরও এমন পাঁচটি ম্যাচ সেরার পুরস্কার। তবে ধোনি খেলেছেন ৪৫ ম্যাচ।
৩ বার বিরাট কোহলির উইকেট নিয়েছেন পাকিস্তানের পেস তারকা জুনাইদ খান। আর জুনাইদের বিপক্ষে ২২ বলে কোহলি সংগ্রহ মাত্রই ২ রান।
১৬৪৯ ক্যারিয়ারে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে শোয়েব মালিকের সংগ্রহ ১৬৪৯ রান। রানের গড় ৪৮.৫০। ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চসহ শোয়েব মালিকের ৯ সেঞ্চুরির চারটিই ভারতের বিপক্ষে।
যে পথে ফাইনালে
ভারত
পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২৪ রানে (ডি/এল) জয়
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ উইকেটে হার
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮ উইকেটে জয়
বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯ উইকেটে জয়
পাকিস্তান
ভারতের বিপক্ষে ১২৪ রানে (ডি/এল) হার
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৯ রানে (ডি/এল)
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ উইকেটে জয়
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে জয়
মুখোমুখি পরিসংখ্যান
ম্যাচ জয় (ভা) জয় (পা) পণ্ড
১২৮ ৫২ ৭২ ৪
নিরপেক্ষ ভেন্যু ম্যাচ জয় (ভা) জয় (পা) পণ্ড
৭১ ৩০ ৩৯ ২
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ম্যাচ জয় (ভা) জয় (পা) পণ্ড
৪ ২ ২ ০