আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনও প্রায় দেড় বছর। এরই মধ্যে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক জোটের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পাবনাতেও।
আর ঈদকে কেন্দ্র করে পাবনায় নির্বাচনী আমেজ পেয়েছে নতুন মাত্রা। জমে উঠেছে তৃণমূলের রাজনীতি।
রমজানের শুরু থেকে ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত রাজনীতিবিদরা ছিলেন এলাকামুখী। ঈদের নামাজ শেষে গ্রামে গ্রামে ঘুরে জনগণের সাথে কুশল বিনিময় আর আপ্যায়নেই কেটেছে তাদের ঈদ।
দলের মনোনয়ন পেতে দেখাচ্ছেন নানা কর্মতৎপরতা। এই তালিকায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান এমপি-মন্ত্রীরা; রয়েছেন নতুন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারাও।
সংবিধান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
ফলে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের জন্য আগামী নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
পাশাপাশি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের জন্যও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। ফলে উভয় জোটই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেকটা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
আগের নির্বাচনগুলোয় মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের অধিকাংশেরই একাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুই জোটের পক্ষ থেকেই প্রতি আসনে ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও দলের জন্য অতীতের ভূমিকার আলোকে তিনজন করে প্রার্থী প্রাথমিক তালিকায় রাখা হচ্ছে। বাদ দেওয়া হচ্ছে বিতর্কিতদের।
মনোনয়নের এমন রদবদলের খবরে প্রার্থীতালিকায় নাম রাখতে দিনরাত জনগণের কাছে ছুটে যাচ্ছেন পাবনার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
এরই অংশ হিসেবে তারা সদ্যবিদায়ী রমজান মাসে ইফতারসামগ্রী বিতরণ ও ইফতার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণসহ নিয়মিতভাবে নির্বাচনী এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন।
এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় যাকাতের অর্থ, বস্ত্র, চাল, চিনি, সেমাই বিতরণের মাধ্যমে মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় তারা ঈদের দিনও নির্বাচনী এলাকার গিয়ে ঈদের জামাত আদায়সহ জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
বিভিন্ন সভা-সমাবেশে, ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান, গণ্যমান্য ব্যক্তি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠকদের সাথে আড্ডা, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগাম বার্তা দিচ্ছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঈদ উপলক্ষে প্রচারের খবর নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, বিএনপির সাবেক মন্ত্রী, সিনিয়র নেতা ও অপেক্ষাকৃত তরুণ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঈদ করেছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়।
দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাঠ আওয়ামী লীগের একক নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এবার প্রচারের দৌড়ে সমান তালেই রয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা।
প্রতিকূল রাজনৈতিক আবহাওয়ার কারণে এত দিন বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের পিছুটান লক্ষ করা গেলেও সম্প্রতি তারা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। রমজানের শুরু থেকেই ইফতার ও বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগেও প্রতি আসনে একাধিক প্রার্থী সমান তালে প্রচার চালাচ্ছেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও বিভিন্ন সাফল্যগাথা জনগণের সামনে তুলে ধরছেন।
পাবনায় ঈদকে কেন্দ্র করে কদর বেড়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। অপেক্ষাকৃত অবহেলার স্বীকার তৃণমূলের রাজনীতির আবহই বদলে গেছে। সারাক্ষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ছুটছেন তারা।
তবে ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্পষ্ট হয়েছে দলের মধ্যে বিভাজনও। প্রতি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় অনেকটা দ্বিধাবিভক্ত তৃণমূলের কর্মীরা।