রাঙ্গামাটির লংগদুতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার রাত থেকে সেনাবাহিনীর লংগদুর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল আবদুল আলীম চৌধুরীর নেতৃত্বে এ অভিযান শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। যৌথবাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত আস্তানা থেকে ২টি একে-৪৭ রাইফেল, একটি চায়না রাইফেল, একটি অটোমেটিক চায়না রাইফেল, ১২৪ রাউন্ড এ্যামুনেশন, ৪টি ম্যাগাজিন, মোবাইল ফোন, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করে। লংগদুর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল আব্দুল আলীম চৌধুরী জানিয়েছেন, লংগদু সদর ইউনিয়নের গোলাছড়ি এলাকায় একটি সশস্ত্র গ্রুপ অবস্থান করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে।
লংগদু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। যৌথবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা মাইনী খাল দিয়ে সাঁতরিয়ে পালিয়ে যায়।
নিরাপত্তা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে সংগঠিত দুইটি প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানে তাদের পাশে থাকার ছদ্মবেশে নিজেদেরকে জনসাধারণের কাতারে মিশিয়ে আবারো সংগঠিত হতে শুরু করেছে পাহাড়ের সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা আঞ্চলিক দলগুলো। দেশে-বিদেশে পাহাড়ের উপজাতীয়দের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে মর্মে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে সংগৃহীত অর্থের একটি অংশ বিতরণ করে। এসময় স্থানীয় জনসাধারণের আবেগকে পুঁজি করে দুর্বল সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার মানসে আঞ্চলিক দলীয় সন্ত্রাসীরা নিজেদেরকে জনগণের কাতারে আবদ্ধ করতে শুরু করে। এসময় তারা স্থানীয়দেরকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের সশস্ত্র কার্যক্রমসহ আবারো চাঁদাবাজির প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই ধরনের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে বুধবার রাতে অভিযানে নামে সেনা-পুলিশের যৌথবাহিনীর একটি টিম। নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বশীল একজন অফিসার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানালেন, আমরা স্থানীয় পাহাড়িদের কাছ থেকে নিশ্চিতভাবেই জেনেছি যে, উক্ত স্থানে ১৩ থেকে ১৫ জনের একটি দল তাঁবু গেড়ে অবস্থান করছে। তাদের কাছে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদও মজুত রয়েছে। এই তথ্য পাওয়ার পরপরই আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এসময় আমাদের অস্তিত্ব টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও তাদের আস্তানা থেকে উপরোক্ত অস্ত্র-গোলাবারুদ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করি। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযানে সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা আঞ্চলিক দলীয় সন্ত্রাসীরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এতে করে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অনেকগুলো আস্তানা হাতছাড়া হয়ে যায়। তাদের চাঁদা আদায়সহ সশস্ত্র কর্মকাণ্ড অনেকটাই কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলো নিরাপত্তা বাহিনী। এতে করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগকে পুঁজি করে সাধারণ পাহাড়িদের আবেগকে নিজেদের কব্জায় এনে এই সব আঞ্চলিক দলীয় সন্ত্রাসীরা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার নাম করে এলাকায় ছদ্মবেশে প্রবেশ করে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করে আবারো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু স্থানীয় ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে তারা সংগঠিত হতে পারেনি। ভবিষ্যতেও এই ধরনের তথ্য দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন ঊর্র্ধ্বতন এই কর্মকর্তা।