দীর্ঘদিন উপেক্ষিত থাকার পর আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে জায়গা পেয়েছিলেন নাসির হোসেন। সেখানে খেলতে সুযোগ পান মাত্র এক ম্যাচে। এরপর ফের বাদ টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরমেটেই এই অলরাউন্ডারের বিকল্প হিসেবে কোচের পরিকল্পনাতে ছিলেন সাব্বির রহমান। তবে পরিসংখ্যান বলছে টেস্ট ও ওয়ানডেতে পারফরম্যান্সে নাসির হোসেনই এগিয়ে সাব্বিরের তুলনায়। আসন্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সফরের জন্য ঘোষিত ২৯ সদস্যের দলে রাখা হয়েছে নাসিরকে। তবে মূল একাদশে কি জায়গা হবে তার? নাকি কিছুটা ফর্মের বাইরে থাকা সাব্বিরই সুযোগ পাবেন স্কোয়াডে! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০০তম টেস্টের পর আর কোনো ম্যাচ খেলেনি টাইগাররা। মুশফিকুর রহীম বাহিনীর ঐতিহাসিক জয়ের সেই ম্যাচে সাব্বিরকে চারে খেলিয়েছিলেন প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে। দল থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনে খেলা টেস্ট স্পেসালিস্টখ্যাত মুমিনুল হক। এছাড়াও অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দলে রাখা হয়নি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেশের মাটিতে কি থাকবে একই ধরনের পরিকল্পনা! নাকি সাব্বিরের পরিবর্তে সুযোগ আসতে পারে নাসিরের? এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আসলে আমরা বাইরে থেকে বললেও সেটি খুব একটা কর্যকর হবে না। কারণ দলের যে কোচ তার একটা পরিকল্পনা থাকে। তিনি দলটা কেমন হবে তার মতো করে সাজান। এখানে নাসিরকে দলে রাখা বা সাব্বিরকে দলে রাখা শুধুই তার হাতে। তবে আমার মতে পারফরম্যান্স বিবেচনাতে নাসিরকে কোচ সুযোগ দিতে পারেন। নাসির ফর্মে আছে, সাব্বিরকে হয়তো একটু বিশ্রাম দিতে পারে।’
পারফরম্যান্স ধরন ও বয়স বিবেচনা করলে নাসির-সাব্বিরের মিল অনেক। তবে অভিষেকের পর থেকে ওয়ানডে ও টেস্টে নাসির ব্যাট-বল দু’টিতেই এগিয়ে রয়েছে সাব্বিরের চেয়ে। দু’জনের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে গিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘দেখেন দু’জনই প্রতিভাবান। দু’জনই পারফরম্যান্স করতে সক্ষম। পরিসংখ্যানে নাসির এগিয়ে থাকলেও সাব্বির সম্ভাবনাময়। তাকে কোচ হয়তো সুযোগ দিয়ে সেরাটাই বের করে আনতে চাইছে। ওয়ানডেতে এখন সাব্বির তিনে খেলে। যদিও ত্রিদেশী সিরিজ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কিছু ম্যাচ তাকে খেলানো হয়নি। আমি মনে করি ওকে তিনে সুযোগ দেয়ার প্রয়োজন ছিল আরো বেশি ছিল। কারণ সাব্বির যদি দেখতো দল তার উপর আস্থা রাখছে সে প্রতিদান দেয়ারও চেষ্টা করতো। সাব্বির যেহেতু তিনে খেলছে আমি মনে করি নাসিরের সঙ্গে ওয়ানডেতে ওকে আর তুলনা করার কারণ নেই। তবে টেস্টে আমি বলবো নাসির সুযোগ পেতে পারে। তবে আবারও বলছি কোচের পরিকল্পনাটাই আসল।’
টাইগারদের শেষ টেস্টে ইমরুল কায়েসকে তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে না পাঠিয়ে খেলানো হয় সৌম্য সরকারকে। অভিষেকের পর থেকে টেস্ট স্পেসালিস্ট নাম পাওয়া মুমিনুল খেলতে পারেননি শততম টেস্ট। ২২ টেস্টের ৪০ ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরি ও ১১ ফিফটি হাঁকানো এই ব্যাটসম্যান ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে ছিলেন ব্যর্থ। অবশ্য তার কিছুটা ইনজুরিও ছিল। তাই সালাউদ্দিন মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মুমিনের খেলাটাও সহজ নয়। তিনি বলেন, ‘শেষ টেস্টে মুমিনুলকে খেলানো হয়নি। তাই আমি বলতে পারছি না সামনের টেস্টে মুমিনুল নিশ্চিত। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মতামত তাকে এই ভাবে বাদ দেয়া ঠিক হয়নি। এক দু’টি ম্যাচ খারাপ খেললেই বাদ দিতে হবে এমটা ঠিক নয়। এটি দলের ক্রিকেটারদের সবার জন্যই সমান বিষয়। রোজ একই ক্রিকেটার পারফরম্যান্স করবে এমন নয়। বা প্রতিটি সিরিজে ভাল করবে এমনও নয়। সাব্বির, নাসির, ইমরুল, মুমিনুল যার কথাই বলেন না কেন আমি মনে করি তাদের এই ভাবে বাদ দেয়া ঠিক নয়। তাদের একটি পজিশনে ধারাবাহিকভাবে খেলালে তারা পারফরম্যান্স করতে মরিয়া থাকবে। কারণ তারা সবাই প্রফেশনাল ক্রিকেটার তাদের সবারই জানা পারফরম্যান্স না করলে দলে থাকা কঠিন।’
বাংলাদেশ দল অনুশীলন শুরু করবে ১০ই জুলাই থেকে। হাতে এখনও দু’টি মাস সময় আছে
অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরে আসার। তাই জাতীয় দলের সাবেক কোচ বলেন, ‘দেখেন অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সফরে আসবে দেড় মাস হাতে আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতেও অনেক সময় হাতে আছে। এর মধ্যে নাসির ও সাব্বির ফিটনেস ট্রেনিং করবে। আশা করি দুই একটা প্রস্ততি ম্যাচও খেলবে। শুধু ওরাই নয়, প্রাথমিক দলে সুযোগ পাওয়া সব ক্রিকেটারকেই কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্ট দেখবেন। এখন নাসির ফর্মে আছে, সেই সময় নাও থাকতে পারে। আবার এখন সাব্বির ফর্মে নেই কিন্তু সুযোগ পেলে সে দারুণ কিছু করতেও পারে। যে কারণে আমি বলতে চাই, স্কোয়াড ঘোষণা যারা করবে তারা অনেক বুঝেই করবে। তাই আমাদের এখনই রায় না দিয়ে দেখার জন্য অপেক্ষা করা উচিত।’