কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান পানি। গতকাল সকালে রাজধানীর বেশকিছু এলাকার সড়কে ছিল এমন চিত্র। টানা বৃষ্টিতে জলজটের সৃষ্টি এসব সড়কে। এতে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকাসহ অনেক এলাকার লোকজনকে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ফলে বিভিন্নস্থানে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। একদিকে চলছে সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ি আর অন্যদিকে জলাবদ্ধতা। সব মিলিয়ে গতকাল নগরবাসীর দুর্ভোগের শেষ ছিল না। সরজমিন দেখা যায় নগরীর মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল, কমলাপুর, আইডিয়াল স্কুলের গলি, রাজারবাগ, শান্তিনগর, গোড়ান, মাদারটেক, নন্দীপাড়া, মালিবাগ, আবুল হোটেলের গলি, বকশী বাজার, নাজিম উদ্দিন রোড, যাত্রাবাড়ী, কালশি, বাসাবো, পুরান ঢাকার একাধিক এলাকা পানিতে থৈ থৈ করছে। এসব এলাকা দিয়ে চলাচলকারীরা জলাবদ্ধতা উপেক্ষা করেই দৈনন্দিন কাজে বের হচ্ছেন। রাজারবাগে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, এমন এক এলাকায় থাকি যেখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্যা হয়ে যায়। আশেপাশের এমন কোনো রাস্তা নাই যেখানে পানি নাই। পীরজঙ্গি মাজারের সামনে ব্যবসায়ী হাসান আলী জানান, শুনেছি সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট হাতে নেয়। কিন্তু কই কোনো উন্নতি নাই। মতিঝিল ব্যাংক পাড়ায় গিয়ে দেখা যায় শাপলা চত্বর থেকে শুরু করে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে জলাবদ্ধতা। ব্যস্ততম এই এলাকায় চলাচলরত হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। একদিকে পায়ে হাঁটা মানুষের দুর্ভোগ আর অন্যদিকে গাড়ির চাপে নাকাল এলাকার বাসিন্দারা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোহেল হায়দার জানান, দুর্ভোগ যেন ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা আর বিভিন্ন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে অল্প বৃষ্টিতে বিড়ম্বনার শেষ নেই। আর বর্ষার বৃষ্টি রাজধানীবাসীর মহাবিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই দুর্ভোগের শেষ হবে কবে। ফকিরাপুলে দেখা যায়, কোমর সমান পানিতে এই এলাকার ব্যবসায়ী এবং আরোহীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে ফুটপাথে বসে যারা ব্যবসা করেন তাদের বসার জায়গাটুকু খুঁজে পাচ্ছেন না। আনোয়ার নামের এক হকার জানিয়েছেন গত কয়েক দিন ধরেই মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। এই এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে কয়েকদিন ধরেই ব্যবসা হচ্ছে না। ফকিরাপুল মোড়ে এক শিক্ষার্থী জানান, বৃষ্টি হলেই আর এই এলাকার বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হতে পারে না। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশি ভোগান্তি পোহান। কারণ জলাবদ্ধতা থাকলে রিকশাচালকরা বাড়তি ভাড়া দিলেও যেতে চায় না। আর হাঁটু ও কোমর সমান পানিতে ভিজে স্কুলে যাওয়া যায় না। নাজমুন নাহার নামে এক গৃহিণী জানান, গত কয়েক দিন ধরেই পানি জমে আছে এই এলাকায়। কিন্ত গতকাল ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে সবকিছু তলিয়ে গেছে। এই অবস্থায় এই বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। গোড়ানের আলী রব জানান, জলাবদ্ধতায় এই এলাকায় সবসময়ই দুর্ভোগ থাকে। এমনিতেই এই এলাকা একটু নিম্নাঞ্চল। সামান্য বৃষ্টি হলেই শুরু হয় ভোগান্তি। আর একটু বেশি বৃষ্টি হলেই ঘর থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় থাকে না। কিছু কিছু বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে জলাবদ্ধতা আর খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি ও রিকশায় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। যানজটের কারণে গুলিস্তান, মতিঝিল, মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডাসহ রাজধানীর বিভিন্নস্থানে যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিস ও স্কুলগামীরা এবং জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় বের হওয়া লোকজন। যানজট আর জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে শিশুসহ নারী-পুরুষদের গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে হেঁটেই গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে। যানজট সামাল দিতে ট্রাফিক পুলিশকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। সকাল থেকেই প্রগতি সরণির শাহজাদপুর থেকে রামপুরা-মালিবাগের দিকে এবং খিলগাঁওর ফ্লাইওভার মৌচাক থেকে মালিবাগ হয়ে মধ্যবাড্ডা পর্যন্ত যানবাহনকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া গুলিস্তান, মতিঝিল, দৈনিক বাংলামোড়, পল্টন, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মিরপুর এলাকায় সকাল থেকেই রয়েছে তীব্র যানজট। মতিঝিল শাপলা চত্বর মোড়ে নিউ ভিশন বাসের চালক রহিম জানান, বৃষ্টি হলেই যতো সমস্যা। কিছু কিছু এলাকায় অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা শুরু হয়। আর তখনই যানজটের সৃষ্টি হয়। অবস্থা কখনো এতো বেগতিক হয় ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টরা যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়।