প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আধুনিক এবং শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলায় তার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের পিজিআর (প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট) সদর দপ্তরে পিজিআর-এর ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই এবং আমরা চাই না কোন কিছুতেই পিছিয়ে থাকি। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে আরো আধুনিক এবং শক্তিশালী করে গড়ে তুলছি। তিনি এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মতো দু’টি সামাজিক দানবকে দমিয়ে আনায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে এ ধারা অব্যাহত রাখারও সংকল্প ব্যক্ত করেন। পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর হারুন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচালিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাচ্ছে। সেখানে অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে তাদের কাজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যেন কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে না থাকে, সেদিক থেকে তাদের জন্য আমি সার্বিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিভাবে তাদের আরো উন্নত, সমৃদ্ধ করা যেতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে ঢেলে সাজাচ্ছি। তিনি বলেন, বড় বড় দেশ, উন্নত দেশ। তাদের সবই আছে। কারণ তাদের সম্পদ আছে। আমাদের হয়তো সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরেও আমরা একটা স্বাধীন দেশ। স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে যা যা থাকা দরকার, যদি একেবারে অল্প পরিমাণেও থাকে সেটা থাকতে হবে। উন্নত দেশের মতো অত বেশি আমরা পারবো না, কিন্তু তারপরেও আমাদের যা আছে এইটুকু যেন আমরা বলতে পারি গর্ব করে এবং বিশ্ব সভায় যেন মাথা উঁচু করে আমরা চলতে পারি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর সেই সম্পর্কে (আধুনিক প্রযুক্তি লব্ধ) জ্ঞানটাও সব থেকে দরকার, প্রশিক্ষণ দরকার। সেই প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান যেন সকলের থাকে। আমরা সেটাই চাই। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন আজকে সারা বিশ্বব্যাপী, একটা সমস্যা আছে। এটা শুধু বাংলাদেশে না। সেটা হলো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। তিনি বলেন, সেখানেও আমি বলবো, এই কাজটা আমরা সফলভাবে করতে পেরেছি। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ এবং সব শ্রেণি-পেশা এবং আমাদের সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সশস্ত্র বাহিনী থেকে শুরু করে সকলে মিলেই কিন্তু এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে অত্যন্ত সফলতা অর্জন করেছি, যা বিশ্বব্যাপী একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই ধারাটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। এর আগে ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী পিজিআর সদর দপ্তরে আসলে রেজিমেন্টের কোয়ার্টার গার্ডে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এবং পিজিআর-এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর হারুন তাঁকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সকল অফিসার, জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং কুশলাদি বিনিময় করেন। একদল চৌকস গার্ড তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করেন। তিনি সকলের উপস্থিতিতে রেজিমেন্টে কর্মরত অবস্থায় নিহত শহীদদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের মাঝে উপহার সামগ্রী ও অনুদান হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (অব.), নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদীন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আখতার হোসেন ভুঁইয়া ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।