ব্যক্তিগত কারণে ম্যাচটি আলাদা তাৎপর্যের দু’দলের অধিনায়কের কাছে। আর দু’দলের কাছে সিরিজের গুরুত্বটা র্যাঙ্কিং প্রশ্নে। ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা চার ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট মাঠে গড়াচ্ছে আজ। ঐতিহাসিক লর্ডস মাঠে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায়। অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে প্রথমবার ইংল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জো রুট। আর দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হচ্ছে ডিন এলগারের। ম্যাচে দুই স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজাতে পারে ইংল্যান্ড। লর্ডস মাঠে গত ২৫ বছর এমনটি দেখা যায়নি। সর্বশেষ ১৯৯৩’র লর্ডস টেস্টে অফস্পিনার পিটার সাচ ও বাঁ-হাতি স্পিনার ফিল টাফনেলকে নিয়ে একাদশ সাজায় ইংল্যান্ড। ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ৬৩২ রানের জবাবে ইনিংস ব্যবধানে হার দেখে স্বাগতিকরা। এবার অফ স্পিনার মঈন আলীর সঙ্গে সুযোগ পেতে পারেন বাঁ-হাতি স্পিনার লায়াম ডসন। ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে ২৩ উইকেট নেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। তবে সিরিজের শেষ টেস্টে দলে সুযোগ নিয়ে ব্যাট-বলে নৈপুণ্য দেখান ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) থেকে ভারতে দলের সঙ্গে যোগ দেয়া অলরাউন্ডার লায়াম ডসন।
২০১২’র ইংল্যান্ড সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে সিরিজ জিতে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ স্থান দখলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার যদিও চিত্রটা ভিন্ন। এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-০তে সিরিজ জিতলেও র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করতে পারবে না তারা। ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলেও আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের একনম্বর দল ভারতের চেয়ে ১ রেটিং পয়েন্টে পিছিয়ে থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এবার প্রোটিয়া দলের মিশনটা কঠিনই। ২০১২’র সিরিজের মাত্র পাঁচজন প্রোটিয়া ক্রিকেটার (হাশিম আমলা, জেপি ডুমিনি, ফাফ ডু প্লেসি, মরনে মরকেল ও ভারনন ফিল্যান্ডার) খেলছেন এবারের সিরিজে। তাও অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিকে সিরিজের প্রথম টেস্টে দলে পাচ্ছে না প্রোটিয়ারা। চলতি মিলিনিয়ামে ইংল্যান্ডে সফরকারী দলগুলোর মধ্যে টেস্টে সবচেয়ে সফল দলের ছবিটা দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০০৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এখানে ১২ ম্যাচের ৬টিতে জয় দেখেছে প্রোটিয়ারা। তিন হারের সঙ্গে তাদের রয়েছে তিনটি ড্র। হারজিতের অনুপাত ২.০০০। দ্বিতীয় সফল দল অস্ট্রেলিয়া এখানে ২০০১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ২৫ ম্যাচে ১১ হারের বিপরীতে জয় দেখেছে ৮টি। অজিদের হারজিতের অনুপাত ০.৭২৭। ইংল্যান্ডে সফরকারী দলগুলোর মধ্যে একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকাই হারের চেয়ে জয় দেখেছে বেশি। আর বিলাতের মাটিতে দুই সিরিজ হারের সঙ্গে দুইবার সিরিজ জয়ের গর্ব কৃতিত্ব রয়েছে প্রোটিয়াদের। বর্ণবাদের দায়ে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ক্রিকেট প্রত্যাবর্তনে ইংল্যান্ডের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দেখায় ২০০৮’র সফরে। আর ২০১২তে এখানে সিরিজ জিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে কেড়ে নেয় তারা টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান। এবারের টেস্ট সিরিজে খেলতে নামার আগে বিলাতের হাওয়া-পানিতে মানিয়ে নিতে যথেষ্ট সময় পেয়েছে প্রোটিয়ারা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে তারা। এখানে তারা খেলেছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আসরেও। তবে এর প্রত্যেকটিতে হারের স্মৃতি প্রোটিয়াদের। লর্ডসে সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলতে পারছেন না ফাফ ডু প্লেসি। হাশিম আমলা ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংক্রমের শীর্ষ চার ব্যাটসম্যানের তিনজনই নবীন খেলোয়াড়। হেইনো কান, আইডেন মার্করাম, থিউনিস ডি ব্রুইন, কেশব মহারাজের মতো নবীন খেলোয়াড়েরা। উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক, পেসার কাগিসো রাবাদা ও তেম্বা বাভুমার টেস্ট অভিজ্ঞতাটা মাত্র ২০/২১ ম্যাচের। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের সঙ্গে নতুন চুক্তি করছেন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। আর ইংলিশদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলতে নামার আগে কোচ ডোমিঙ্গো বলেন, দলে তরুণ খেলোয়াড় সুযোগ পাচ্ছে। এটা দলে অসম্ভব শক্তি উদ্দীপনা আনবে। ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন প্রোটিয়া পেসার ভারনন ফিল্যান্ডার। আর লর্ডস টেস্টে শুরুর আগে ফিল্যান্ডার বলেন, ২০১২’র সফরের আগেও এবারের মতো কালচার ক্যাম্প করেছিলাম আমরা। সেবারও দলে ছিল একঝাঁক তরুণ খেলোয়াড়। যা দলের শক্তি ও উদ্যম বাড়িয়েছিল। গত জুনে র্যাঙ্কিংয়ের ৭ নম্বরে নেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পৃথক চার সিরিজ জয় শেষে র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে তারা। আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের একনম্বর দল ভারতের সংগ্রহ ১২৩ রেটিং পয়েন্ট। দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ১১৭। যথাক্রমে ১০০ ও ৯৯ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড।