৫ই জুন শেষ হয়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগের এবারের আসর। ১২ দল অংশ নিয়েছে, এরমধ্যে সুপার লীগে খেলেছে ছয়টি। এরই মধ্যে বোলিং অ্যাকশন রিভিউ কমিটির হাতে এসেছে বোলিং অ্যাকশনে সন্দেহে থাকা পাঁচ ক্রিকেটারের নাম। যেখানে আছেন একজন বিদেশি ক্রিকেটারও। মাঠের আম্পায়ারদের রিপোর্টে ফের সন্দেহের তালিকাতে আছে সুপার লীগে খেলা প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়ক আসিফ আহমেদ রাতুল। এছাড়াও চাকিংয়ে অভিযুক্ত কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সঞ্জিত সাহা, পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের নুরুজ্জামান মাসুম ও ভিক্টোরিয়ার শফিউল হায়াত হৃদয়। বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে নাম রয়েছে ব্রাদার্সে খেলা ভারতের হরিয়ানার ৩২ বছর বয়সী ক্রিকেটার মানবিন্দর বিসলার। সন্দেহের তালিকাতে থাকা সব ক্রিকেটারই স্পিনার। একবছর ধরে দেশের ক্রিকেটারদের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কাজ করছে রিভিউ কমিটি। বিশেষ করে গত বছর ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালে পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার আরাফাত সানি অবৈধ অ্যাকশনের দায়ে আইসিসি কর্তৃক নিষিদ্ধ হন। বোলিং অ্যাকশন কমিটির কার্যক্রম নিয়ে বিসিবির এমআইএস ম্যানেজার জাতীয় দলের সাবেক উইকেটরক্ষক নাসির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বোলিং অ্যাকশন রিভিউ কমিটির কার্যক্রম নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। তবে একটি বিষয়ে এখনো আমরা পিছিয়ে আছি। যদি সবগুলো ম্যাচের ভিডিও পাওয়া যেতো তাহলে আমাদের কাজ আরো নিখুঁত ও ভালো হতো।’
ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগের শেষ আসরেও ছিল ভিডিওর ব্যবস্থা। তবে সেটি বোলিং অ্যাকশন রিভিউ কমিটির কাজে আসেনি বলে জানান নাসির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এবার যে ভিডিওর ব্যবস্থা ছিল সেটি আমাদের কাজে আসেনি কারণ সেখানে ঢালাওভাবে ম্যাচে ভিডিও করা হয়েছে। যে ফুটেজ থেকে আমরা একজন বোলারকে চিহ্নিত করে তার অ্যাকশন অবৈধ প্রমাণ করতে পারিনি। যেমন ধরেন গত আসরেও আসিফ আহমেদসহ বেশ কয়জন ক্রিকেটার আমাদের কাছে পরীক্ষা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে গেছে। কিন্তু যে সময় আমরা পরীক্ষা করেছি তখন শুদ্ধ অ্যাকশনে বল করেছিল তারা। যদি আমাদের হাতে সফটওয়্যার দিয়ে তৈরি সেই ম্যাচের ফুটেজ থাকতো তাহলে রাতুল বা যারা বৈধ বলে প্রমাণ হয়েছিল তাদের দেখাতে পারতাম যে কোথায় তাদের ভুল। তবে আশা করছি একটু ব্যয় বহুল হলেও আমরা সফটওয়্যার ব্যবহার করে আরো কিছু ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে অন্তত প্রিমিয়ার লীগের ভিডিওগুলো শুরু করতে পারবো।’
অন্যদিকে প্রথম বিভাগের ১২ জন বোলার থেকে পরীক্ষার পর ৭ জনের অবৈধ অ্যাকশন প্রমাণ হয়েছে। যাদের দ্রুত রিহ্যাব শুরু হবে বলে জানান এমআইএস ম্যানেজার। এছাড়াও সদ্য সমাপ্ত তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লীগেও অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য অভিযুক্ত হয়েছেন তিন বোলার। তারা হলেন বাংলাদেশ পুলিশের মনিরুল আলম ও শাহাদাত হোসেন ও প্রগতি সংঘের মোহাম্মদ শুভ। তবে তৃতীয় বিভাগে এতো কম সন্দেহের তালিকাতে আসায় কিছুটা বিস্মিত নাসির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রথম বিভাগে অভিযুক্ত ১২ জন থেকে আমরা ৭ জনের ত্রুটি পেয়েছি। তাদের নিয়ে দ্রুত স্পিন বোলিং কোচ ওয়াহেদুল গনি কাজ শুরু করবেন। আর তৃতীয় বিভাগে মাত্র তিনজনের নাম এসেছে। আমার মনে হয় সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারতো। এসব কারণেই বলছি, গুরুত্বপূর্ণ ঘরোয়া ক্রিকেটের আসরে প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে ম্যাচগুলো ভিডিও করা গেলে আমাদের বোলিং অ্যাকশন শুধরাতে বেশ কাজে আসতো।’
এরই মধ্যে বিসিবির বোলিং অ্যাকশন রিভিউ কমিটি তাদের ল্যাবের কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানান নাসির আহমেদ। তবে এই ল্যাবটি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও চেন্নাইয়ের মতো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ল্যাবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার, বল ট্র্যাকার, পিচ ম্যাপসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি পেয়েছি। আমরা কাজও শুরু করেছি। তবে এটি অস্ট্রেলিয়া বা চেন্নাইয়ের মতো ল্যাব নয়। আমি বলতে পারি এটি একটি মোবাইল ল্যাব। এখানে থাকা প্রযুুক্তিগুলোর ব্যবহার আমরা যে কোনো জায়গাতে ব্যবহার করতে পারি। যেমন ধরেন বিকেএসপিতে যদি আমাদের অ্যাকশন পরীক্ষা করতে যেতে হয় তাহলে আমরা সেখানেই ল্যাবের কার্যক্রম চালাতে পারবো। আবার এখন বৃষ্টির দিন। মাঠে না হলে আমরা আমাদের ইনডোরেও ল্যাব স্থাপন করে কাজ করতে পারবো।’