প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের আস্থা ও সমর্থনের প্রতীকে পরিণত
হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের আগেই উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে। দেশের মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে সরকারের প্রতিজ্ঞার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইতিমধ্যে সরকার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। চীন থেকে দু’টি সাবমেরিন ক্রয় সম্পর্কে সংসদ নেতা বলেন, সাবমেরিন দু’টি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হয়েছে, যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানকে উন্নত করেছে। আমি বিশ্বাস করি, চীন থেকে সাবমেরিন ক্রয় বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকেন্দ্রিক একটি সিদ্ধান্ত এবং এর ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে না। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর-পর্বে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়ে ’৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে আমার চলার পথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, বরং কণ্টকাকীর্ণই ছিল। অনেক চড়াই-উৎরাই, ঘাত-প্রতিঘাত ও বাধা অতিক্রম করেই আমাকে চলতে হয়েছে এবং হচ্ছে। অসংখ্যবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি, কিন্তু কখনো ভয় পাইনি। কারণ সত্য ও সততার পথে থাকলে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা যায়। কারণ সবসময় আমার আত্মবিশ্বাস আছে যে, আমি কোনো অন্যায় করিনি। জনগণ নিশ্চয় তা একদিন বুঝতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে আমি প্রস্তুত। আমি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম, নিজেও তিনবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু কখনোই নিজের জন্য কী করবো কখনো তা চিন্তা করিনি। ছেলেমেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছি, সেটাই তাদের বড় সম্পদ। কিছু দিতে হবে এমন কোনো বিরক্ত আমার ছেলেমেয়েরা করে না। বরং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, অসহায় অটিজম শিশুদের জন্য সারাবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণে ছেলেমেয়েরা কাজ করে যাচ্ছেন। বোনের মেয়ে টিউলিপ বৃটিশ পার্লামেন্টে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছে। এটাই আমাদের কাছে বড় পাওয়া। তিনি বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পেরেছি- এটাই আমার স্বস্তি। দেশের জনগণ আমাকে বার বার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশসেবার সুযোগ দিয়েছে, দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে- এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের আয় বেড়েছে, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ করার সাহস নিতে পেরেছে। একটি মানুষও গৃহহীন না থাকার প্রত্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালিয়ে আমাদের সরকার প্রতিটি নাগরিকের মনে আকাঙ্ক্ষার প্রদীপ জ্বালিয়ে তুলছে। নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে প্রশংসিত বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হতো উন্নয়নের টেস্ট কেস হিসেবে, আর আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ। বাংলার কৃষ্টি, বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার রক্ত দিয়ে লেখা আমাদের বাংলা জাতীয়তাবাদ। আর সেই কারণে আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের মহাসড়কে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য জনগণকে এগিয়ে চলার শক্তি যোগাচ্ছে। উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় লাল সবুজের নিশানা নিয়ে, আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজকের ১৬ কোটি জনগণের আস্থা ও সমর্থনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের আগেই উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে।
রাষ্ট্রীয় যেকোনো কাজ বঙ্গবন্ধুই প্রথম শুরু করেছিলেন: সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম ফজিলাতুন সেনা বাপ্পির মূল প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র ১১ মাসের মাথায় জাতিকে একটি শাসনতন্ত্র উপহার দেয়াসহ সকল ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্বল্পকালীন শাসনামলে উদ্যোগ গ্রহণ করে গেছেন। আজও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোনো কাজ করতে গেলে দেখা যায় সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই প্রথম কাজ শুরু করে দিয়ে গেছেন। কামাল আহমেদ মজুমদারের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ২০১০ সালের জুন মাসে জাতিসংঘের প্যারিস প্রিন্সিপ্যালের আলোকে সকল শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একজন চেয়ারম্যান ও ৬ জন সদস্য নিয়ে কমিশন গঠনপূর্বক নতুন উদ্যমে কার্যক্রম শুরু করা হয়। কমিশন স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে তাদের কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। সরকার ইতিমধ্যে কমিশনকে ৪৮ জন জনবল প্রদান করেছে। কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে বাজেট ও যানবাহনসহ বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হয়েছে।
সাবমেরিন ক্রয়ে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে না: স্বতন্ত্র দলীয় সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চীন থেকে সাবমেরিন ক্রয়ের চুক্তি হয়েছিল, যার আওতায় সাবমেরিন দুটি গত বছরের ২৫শে ডিসেম্বর বাংলাদেশে আগমন করে এবং এ বছরের ২৫শে মার্চ আমি সাবমেরিন দুটি বানৌজা নবযাত্রা ও বানৌজা অগ্রযাত্রা নামে কমিশনিং করি, যা বর্তমানে আমাদের নৌবহরে যুক্ত আছে। তিনি বলেন, সাবমেরিন দু’টি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হয়েছে, যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানকে উন্নত করেছে। আমি বিশ্বাস করি, চীন থেকে সাবমেরিন ক্রয় বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকেন্দ্রিক একটি সিদ্ধান্ত এবং এর ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে না। সংসদ নেতা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ আজ একটি সম্মানজনক ও উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য এখন সর্বজনবিদিত। বিগত আট বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দূরদর্শী, দায়িত্বশীল পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব কূটনীতিতে বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে একটি সফল রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করেছে।