শেরপুরে মেধাবী কলেজছাত্রী ও তরুণী গৃহবধূ আশরাফুন্নাহার লোপাকে নির্যাতনের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে স্বামী ডিএমপি পুলিশের এসআই শাহিনুল ইসলাম শাহিনকে। ১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানালে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে তা নাকচ করে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
শুনানীকালে আসামীপক্ষে মোহাম্মদ সুরুজ্জামান ও মুহাম্মদ আখতারুজ্জামানসহ ৩ জন আইনজীবী অংশ নিলেও বাদীপক্ষে জেলা বারের সভাপতি একেএম মোছাদ্দেক ফেরদৌসী, সাবেক সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র হোড় ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম আধারসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আইনজীবী অংশ নেন।
এর পরপরই বাদীপক্ষের বিক্ষুব্ধ আত্মীয়-স্বজন ও উৎসুক জনতার ভিড় বেড়ে গেলে অতিরিক্ত পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তায় এসআই শাহিনকে দ্রুত কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে বুধবার হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের অর্ন্তবর্তী জামিন আদেশের শেষ দিনে এসআই শাহিন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিননামা দাখিল করে। ওই মেয়াদ শেষ হওয়ায় বৃহস্পতিবার তাকে নতুনভাবে জামিনের আবেদন করতে হয়।
এদিকে যৌতুকলোভী এসআই শাহিনকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাদীপক্ষ, মানবাধিকার ও নারী সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল। এ বিষয়ে জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী জয়শ্রী দাস লক্ষ্মী, জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া ও জনউদ্যোগের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, তরুণী গৃহবধূকে নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর মামলায় প্রধান আসামী পাষন্ড স্বামী পুলিশের এসআই শাহিনকে কারাগারে পাঠানোর মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচারের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিষয়টি সকলকে সতর্ক করে দিচ্ছে এই ভেবে যে, আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। তারা ওই ঘটনায় এসআই শাহিনসহ তার সহযোগীদের দ্রুত বিচার দাবি করেন। নির্যাতিতা লোপার মা ও মামলার বাদী স্কুলশিক্ষিকা সেলিনা আক্তার লাকী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অবস্থার কারণে পুলিশ মামলা নিলেও আসামীদের গ্রেফতারে কোন তৎপরতা চালায়নি। কিন্তু আদালত ‘আসামী কে’ তা বিবেচনায় না নিয়ে কেবল অপরাধী বা আসামী হিসেবেই বিবেচনায় নিয়েছে বলেই যৌতুকলোভী পাষন্ড এসআই শাহিনকে কারাগারে যেতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, শেরপুর শহরের দমদমা মহল্লার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের একমাত্র কন্যা ও সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী লোপাকে পার্শ্ববর্তী শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া গ্রামের বাড়িতে গত ২২ মে রাতে ২০ লাখ টাকার যৌতুকের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অমানসিক নির্যাতন চালায় স্বামী এসআই শাহিন ও তার পরিবারের লোকজন। ওই ঘটনায় শ্রীবরদী থানায় ৫ জুন এসআই শাহিনসহ পরিবারের আরও ৪ সদস্যকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ)/৩০ ধারায় মামলার পর সকলের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে ফুঁসে উঠে স্থানীয় মহিলা পরিষদ ও মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন সংগঠন।