গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানীর বনশ্রী এলাকা। প্রতিবাদে এলাকাবাসী দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভ থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়লে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। বিক্ষুব্ধ লোকজন একটি ব্যক্তিগত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। নিহত গৃহকর্মীর নাম লাইলি বেগম (২৫)। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এমন খবর পেয়ে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা লাইলির গৃহকর্তার বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং সামনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাড়ির মালিক মুন্সি মাঈনুদ্দিনসহ ৪ জনকে আটক করেছে। বিক্ষুব্ধ জনতার ইটের আঘাতে পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি সাইফুল ইসলাম আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খিলগাঁও থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রীর জি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় কাস্টম অফিসার মুন্সি মাঈনুদ্দিনের ফ্ল্যাটে কাজ করতেন লাইলি বেগম। গতকাল সকাল ১০টার দিকে ফ্ল্যাটের একটি বেডরুমে লাইলিকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান বাড়ির লোকজন। অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড অভিযোগ করে এলাকাবাসী মাঈনুদ্দিনের বাড়িটি ঘেরাও করে। তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বাড়ি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতাকে পুলিশ সেখান থেকে সরে যেতে বললে তাদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। বিক্ষুব্ধরা একটি প্রাইভেট কারে আগুন এবং দুইটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব হোসেন জানান, ওই গৃহকর্মীকে বাড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় বের করতে দেখেন এলাকাবাসী। তখন এলাকায় কে বা কারা গুজব ছড়িয়ে দেয় লাইলিকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়িটি ঘেরাও করে ভাঙচুর শুরু করে। বাড়িটির পাঁচতলার গৃহকর্মী রুবি বেগম জানান, গত ২ বছর আগেও তিনি মাঈনুদ্দিনের বাড়িতে কাজ করতেন। বেতনের কথা বললে তাকে টাকা চুরির মামলায় হুমকি দেয়া হতো। তিনি জানান, নিহত লাইলি বেগমের পাঁচ বছর বয়সী মরিয়ম এবং আতিকুর রহমান নামে আড়াই বছরের দুই ছেলে আছে। মরিয়মের বাবা নজরুল ইসলাম একটি মামলায় জেলখানায় আছেন। তাদের দুইজনের ভবিষ্যৎ এখন কি হবে তার চিন্তা সবাইকে ভর করেছে। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি জানান। নিহত লাইলি বেগমের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীর উপজেলার আজুয়াটারী এলাকায়।
ঘটনাস্থলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ ঘটনায় বাড়ির মালিককে আটক করা হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে যে, কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো জানান, পুলিশ স্থানীয় জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। তারাই জনতার আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এতে পুলিশের কয়েকজন আহতও হয়েছেন। কিন্তু, পুলিশ অতি ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
এদিকে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে লাইলিকে হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে মাঈনুদ্দিন জানান, লাইলি সকালে তার বাসায় গিয়ে একটি কক্ষে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় পরে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মাঈনুদ্দিন দাবি করেন লাইলি আত্মহত্যা করেছে।