মার্কিন নির্বাচনে সম্ভাব্য রাশিয়ান হস্তক্ষেপ শনাক্ত করতে ভোটের দিন তদন্ত চালিয়েছিল এফবিআই। এবারই প্রথম এ তথ্য সামনে এসেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানতে পেরেছে, নির্বাচনের দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় সন্দেহভাজন ‘রাশিয়ান ভুল-তথ্য প্রচারণা’র ওপর চোখ রেখেছিল দেশটির কেন্দ্রীয় এই গোয়েন্দা সংস্থা। প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের আগের কয়েক মাস ধরে ভুয়া তথ্য, বানোয়াট সংবাদ, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আর গুজব ছড়ানোর আদর্শ ক্ষেত্রে পরিণত হয় টুইটার ও ফেসবুক। এসব ফেইক নিউজের অনেকগুলোর লক্ষ্য ছিল ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে নেতীবাচক মিথ্যা নানা তথ্য প্রচার করা।
নির্বাচনের দিন কয়েক ডজন এজেন্ট ও বিশ্লেষক ওয়াশিংটনে এফবিআই সদর দপ্তরের একটি কমান্ড সেন্টারে ব্যস্ত সময় কাটান। বড় স্ক্রিনগুলোতে চোখ রাখেন বিশেষজ্ঞ এসব এজেন্ট ও অ্যানালিস্টরা। তাদের টার্গেট ছিল সম্ভাব্য সাইবার হুকমিসহ নিরাপত্তা হুমকিগুলো শনাক্ত করা। একাধিক সূত্রের কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে সিএনএন। এদিন, সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণের জন্যও নিয়োজিত ছিল এফবিআইয়ের সাইবার ও গোয়েন্দা বিশ্লেষক এবং তদন্তকারীদের একটি দল।
এতে এফবিআই বিশ্লেষকরা ফেইক নিউজ ও গুজব ছড়ানো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো শনাক্ত করেন। জানা যায়, এরকম অনেক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা হচ্ছিল অন্যান্য দেশ থেকে। তদন্ত নিয়ে অবগত দুটি সূত্র জানিয়েছে, এগুলোর কিছু অন্তত রাশিয়ার মিথ্যা তথ্য প্রচারণার অংশ হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ ছিল। এফবিআই এ প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এফবিআই-এর জন্য এমন তৎপরতা চালানো ছিল কিছুটা অস্বস্তিদায়ক। কেননা, বানোয়াট সংবাদের ক্ষেত্রেও মার্কিন সংবিধানের ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টে দেয়া বাক স্বাধীনতার সুরক্ষা প্রযোজ্য হয়।
এফবিআই-এর ওই তদন্ত নিয়ে অবগত এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক বৈধতার একদম কিনারায় ছিলাম। আমরা সংবাদ পর্যবেক্ষণ করছিলাম।’
একাধিক সূত্রমতে, নির্বাচনের দিন এফবিআই টিমগুলো, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট এবং ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স পরিচালকের কার্যালয় প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমের একটি দলের সঙ্গে কনফারেন্স কলে যোগ দেয়। সম্ভাব্য সমস্যাগুলো নিয়ে তারা আলোচনা করেন।
আলাস্কা থেকে শুরু করে জর্জিয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোটখাটো নানা ইস্যু উঠে আসে। দিন শেষে শীর্ষ কর্মকর্তারা ভোটে কোন বিঘ্ন ঘটা ছাড়া নির্বাচনের দিন শেষ করতে পারায় একে অপরকে অভিনন্দন জানান।
ওবামা হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এসব অভিনন্দন বার্তার জবাব দিয়েছিলেন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। তিনি বলেছিলেন, রাশিয়ার তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন সরকারের জবাব ছিল, ‘কল্পনাশক্তির ব্যর্থতা’।
হোয়াইট হাউসে যখন সবাই সফল একটি নির্বাচন উদযাপন করছিল তখন তিনি অন্যদের বলেছিলেন, ‘কী যে বলেন, তারা যা করেছে, তা কাজ করেছে!’
প্রসঙ্গত, মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণা মৌসুমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেইক নিউজ ও ভুল তথ্য প্রচারণা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এবারই প্রথম জানা গেলো এ নিয়ে এফবিআই বিশেষ তৎপরতা চালিয়েছিল নির্বাচনের দিন। নির্বাচনের আগ থেকেই প্রচারণাকালীন কয়েক মাস রাশিয়ান হস্তক্ষেপের অভিযোগ আসতে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে শুরু করে পলিসি থিংক ট্যাংক ও অঙ্গরাজ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা পর্যন্ত মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিটি অংশ টার্গেট করার অভিযোগ ওঠে।
নির্বাচনে অন্য একটি দেশের হস্তক্ষেপ প্রচেষ্টা সন্দেহে সৃষ্ট গুরুতর হুমকির পরিপ্রেক্ষিতেই এফবিআই নির্বাচনের দিন ওই তদন্ত চালিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এফবিআই আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও ওই তদন্তের কথা প্রকাশ না করলেও একাধিক সূত্র থেকে তা নিশ্চিত হয়েছে সিএনএন।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এবং প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের সঙ্গে মস্কোর যোগসূত্রের অভিযোগ তদন্ত করছেন স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুয়েলার। তিনি এ তদন্তে গ্র্যান্ড জুরিও গঠন করেছেন। এই জুরি তলবনামা পাঠিয়েছেন তদন্ত আওতাভুক্ত কয়েকজনকে। এছাড়া মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষের একাধিক কমিটি রাশিয়া কানেকশন নিয়ে তদন্ত করছে। রাশিয়া কানেকশন কেন্দ্র করে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইতিমধ্যে ইস্তফা দিয়েছেন বা পদচ্যুত হয়েছে কয়েকজন কর্মকর্তা। সর্বশেষ, এ কেলেঙ্কারির অভিযোগে যোগ হয়েছে ট্রাম্পপুত্র ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের নাম। প্রচারণা মৌসুমে তিনি রাশিয়ার এক আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন বলে জানা যায়।
এরপর কংগ্রেসের কমিটির সামনে শুনানিতে সাক্ষ্যও দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প প্রশাসন রুশ যোগসূত্রের বেড়াজালে ক্রমেই আরো বেশি জড়িয়ে পড়লেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবরই এসব অভিযোগ সাফ অস্বীকার করে আসছেন।