ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে বল করছিলেন ব্রেটলি, স্টুয়ার্ট ক্লার্ক, জেসন গিলেস্পি, মাইকেল ক্লার্ক, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলরা। কিন্তু শাহরিয়ার নাফীসের সেঞ্চুরি, রাজিন সালেহ ও অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনের জোড়া ফিফটিতে পাত্তাই পাচ্ছিল না অস্ট্রেলয়ার বোলাররা। এরপর হেইডেন, মাইক হাসি, গিলক্রিস্টদের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করে ব্যাট করতে এসে। ২০০৬ সালের রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন দলটি এখনো অজিদের সেরা একাদশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একাই সেই দলের পাঁচ উইকেট নিয়ে ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্পিনার মোহাম্মদ রফিক। দুই ইনিংসে ৯ উইকেট। সব মিলিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১১ উইকেট নেন দেশসেরা এই স্পিনার। এরপর গড়িয়ে গেছে ১১ বছর। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আর টেস্ট খেলা হয়নি বাংলাদেশের। অবশেষে ২৭ আগস্ট ফের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই দল। তবে এত বছরে বদলে গেছে সবকিছুই। টেস্ট একাদশে থাকা কোন ক্রিকেটারই নেই দুই দলে। অস্ট্রেলিয়াকে নিজেদের মাটিতে কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে কথা মোহাম্মদ রফিকের সঙ্গে বলেছেন দৈনিক মানবজমিন-এর স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজ। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: ১১ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেমন টেস্ট লড়াই আশা করেন?
রফিক: তখন যে অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে আমরা খেলেছিলাম সেই দলটি এখনো ওদের সেরা দল হিসেবেই পরিচিত। আর তখন আমরা যারা ওদের বিপক্ষে খেলেছিলাম তারাও এখন একজনও দলে নেই। বলতে পারেন দুই দলই একেবারেই নতুন। তবে এখন যেটা হয়েছে সময়ের পার্থক্য, যা দুই দলের অবস্থান অনেক বদলে দিয়েছে। তাই এখন দুই দল মুখোমুখি হলেও আমাদের সময়ের মতো হবে না। বাংলাদেশ এখন দেশের মাটিতে অনেক বেশি শক্তিশালী হলে আমরা যেমন দেশের মাঠে ওদের বিপক্ষে প্রথম নেমেই প্রায় জিতে যাচ্ছিলাম এখন সেটি করা আরো কঠিন হবে। টেস্টে এই নতুন অস্ট্রেলিয়ার দলের সঙ্গে লড়াটাই বেশ কঠিন ও চ্যালেঞ্জেরই হবে। বলতে পারেন এই সিরিজটি হবে বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক বড় পরীক্ষা।
প্রশ্ন: কেন কঠিন হবে বলে মনে করেন?
রফিক: আমরা যখন ২০০৬ সালে খেলি তখন ওদের কিন্তু আমাদের উইকেট ও ক্রিকেটারদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানতো না। এখন কিন্তু ওরা সব ক্রিকেটারদের শক্তির জায়গা আর দুর্বলতা জানে। বাংলাদেশের উইকেট সম্পর্কেও বেশ ধারণা রাখে। আমরা যদি স্পিন সহয়াক উইকেট করি ওদেরও কিন্তু দারুণ স্পিনার আছে। পেসারতো আছেই। সব মিলিয়ে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই দারুণ দল ওদের। যে কারণে বলছি কঠিনতো হবেই, মুশফিকের জন্য বড় পরীক্ষাও হবে। পরীক্ষা বলছি এ কারণে যে দেশে আমরা কতটা উন্নতি করেছি তা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলার পরই আমরা বুঝতে পারবো।
প্রশ্ন: কোচ হাতুরুসিংহে বলেছেন দুই টেস্ট জিততে চায় বাংলাদেশ। এটা কতটুকু সম্ভব?
রফিক: আমি বলবো এমন কথা না বলে আগে একটি টেস্ট জিতে দেখান। কারণ টেস্ট হলো পাঁচ দিনের খেলা। আমাদের লক্ষ্য থাকতে হবে যেন আগে পাঁচদিন খেলতে পারি। এমনভাবে খেলবো যেন জিততে না পারলেও ম্যাচ ড্র হয়। এখন আগেই জেতার কথা বলে তিনদিনেই টেস্ট খেলা শেষ করে দিলে হবে? আমাদের লক্ষ্য থাকতে হবে একটা টেস্টের একেকটা দিন যেন আমরা এগিয়ে থাকি সেই দিকে নজর দেয়ার।
প্রশ্ন: উইকেট কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
রফিক: ফতুল্লায় কিন্তু আমি দুই ইনিংসে ৯ উইকেট পেয়েছিলাম। স্পিন ওরা খেলতে পারেনি। এবারও আমাদের স্পিনারদের কাজে লাগাতে হবে। আর উইকেটতো এবার এমনিতে বেশ স্পিন সহয়াক হবে। কারণ দেখেন বেশ কিছুদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে উইকেট কিন্তু নরম হয়ে গেছে। তাই বল লো হবে। বাউন্স কম করবে। স্পিন ধরবে। এখানে আলাদাভাবে স্পিন উইকেট বানানোর কিছুই নেই।
প্রশ্ন: সাকিব আর মিরাজকে দিয়ে স্পিন আক্রমণ কতটা কার্যকর হবে?
রফিক: দুইজনই এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলেনি। তাই বলা কঠিন কতটা কার্যকর হবে। তবে যে স্পিনারই খেলুক তাদের খেয়াল রাখতে হবে এটা টেস্ট, এখানে ভুল হলেও নতুন করে শুরুর সুযোগ আছে। তাই যখনই বল হাতে পাবে তখনই যেমন নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করে।
প্রশ্ন: স্কোয়াড কেমন হলে ভাল বলে মনে করেন?
রফিক: দেখেন এখানে টিম ম্যানেজমেন্টের উপর আমি বিষয়টা ছাড়বো। কারণ প্রতিটি ক্রিকেটারই মুখিয়ে আছে খেলার জন্য। আমি তাই কারো নাম বলে অন্য কারো মন ছোট করতে চাই না। শুধু বলবো যেই খেলেন সে যেন তার নিজের দায়িত্বটা পালন করে।
প্রশ্ন: দলের জন্য আপনার পরামর্শ কি থাকবে?
রফিক: দোয়া করো যেন সবাই ভালো খেলে। তবে আমরা যারা আগে খেলেছি তাদের যদি সাহায্যের বা মতামতের প্রয়োজন হয় তারা আমাদের কাছ থেকে নিতে পারে। সাকিব, মিরাজ যদি আমার কাছে আসে বা টিম ম্যানেজমেন্ট যদি বলে আমার সেই অভিজ্ঞতা স্পিনারদের সঙ্গে শেয়ার করতে আমি রাজি আছি।