অভিযানের মুখে গুদামজাত কিছু চাল বাজারে সরবরাহ করলেও বেশিরভাগ চালই গোপনে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন চট্টগ্রামের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। লুকিয়ে মজুদ গড়ে তোলা এমন দুটি চালের গুদামের সন্ধান মিলেছে চট্টগ্রামের শহরের অদুরে সীতাকুন্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে পুরোনো মর্ডাস ব্রিকস কারখানায়। গুদাম দুটি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের প্রতিষ্ঠান মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন দুটি গুদামে তাদের ৬ হাজার ৮০০ টন চাল রয়েছে বলে জানান। খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার দিনগত রাতে সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম ভুইঁয়া ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে চালসহ গুদাম দুটি সীলগালা করে দেন।
আদালত সূত্র জানায়, কালাম ভান্ডারী ও মালেক মাঝির গুদাম হিসেবে পরিচিত গুদাম দুটিতে গোপনে অবৈধ চাল মজুদ করা হয়েছে। গোপন সূত্রে এ খবর পেয়ে রাতেই ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে বিপুল পরিমাণ চাল ও চালভর্তি ১৭টি কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। কিন্তু মালিকপক্ষের কাউকে না পাওয়ায় গুদাম দুটি সীলগালা করে সব ধরনের গাড়িতে মালামাল তোলা ও নামানোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
গুদাম দুটির সিকিউরিটি ইনচার্জ মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, মালেক মাঝির একটি গুদামে চাল ও অন্যটিতে ডাল রয়েছে। কালাম ভান্ডারীর সবকটি গুদামেই ভুসি। গত ৭-৮ দিনের বিভিন্ন সময়ে চালের গুদামে চাল প্রবেশ করলেও কোনো চাল বাইরে যায়নি। প্রশাসন সিলগালা করে তাঁর দায়িত্বে বুঝিয়ে দিয়ে যান।
তিনি বলেন, মর্ডাস ব্রিকসের মালিক আবুল কালামের কাছ থেকে গুদাম দুটি ভাড়া নেন চট্টগ্রাম নগরের খাতুনগঞ্জের প্রতিষ্ঠান মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স। সেখানে কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকে এনে চাল মজুদ করেন। গোপনে এ চাল মজুদ করেছেন কি না তা তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক মো. আনোয়ার হোসেন চালগুলো গোপনে লুকিয়ে রাখার কথা অকপটে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি (২৮ শতাংশ) ডিউটি ফি দিয়ে চাল আমদানি করেছে। তার মধ্যে প্রশাসনের অভিযানের চাপে চালগুলো নগরীর বিভিন্ন গুদাম থেকে বাইরে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিন জায়গায় চাল রেখেছেন। তার মধ্যে সীতাকুন্ডে ৬ হাজার ৮০০ টন চাল রেখেছেন। বাকিগুলোও নগরীর অন্য জায়গায় গোপনে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অভিযানের মুখে নগরীর কয়েকটি গুদাম থেকে বাজারে চাল সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছি। যা লোকসান দিয়েই দিচ্ছি। আমাদের মতো সব আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের চাপের মুখে চাল সরবরাহ করলেও বেশিরভাগ চাল নগরীর বাইরে অন্যত্র সরিয়ে লুকিয়ে রাখছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের চাল আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা নগর থেকে জেলার উপজেলা সমূহে গুদাম ভাড়া নিয়ে গোপনে চাল সরিয়ে নিচ্ছেন। বিশেষ করে সীতাকুন্ড, মিরসরাই, ফেনী, পটিয়া, আনোয়ারা, হাটাহাজারীসহ যেখানে সড়ক যোগাযোগ ভাল সেখানে গোপনে চালের মজুদ গড়ে তুলছেন।
এসব গুদামে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টন চাল লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে চাল ব্যবসায়ীদের একটি নির্ভরযোগ্যসূত্র মানবজমিন’কে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, প্রশাসন চাল নিয়ে চট্টগ্রামে যেভাবে বাড়াবাড়ি শুরু করেছেন তাতে জনগণেরই কষ্ট বাড়বে। ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করবে না। ফলে ইতোমধ্যে চাল আমদানিও করছে না। আগে আমদানি করা চালে লোকসান এড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রসঙ্গত, হাওড়ে বন্যার পর থেকে সারাদেশের সাথে চট্টগ্রামেও চালের মূল্য বেড়ে যায়। প্রথম দফায় দ্বিগুণ পরে চালের মূল্য আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার নড়েচড়ে বসে। ফলে অবৈধ মজুদ ও চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযান শুরুর পর মজুদ চাল জব্দ, গুদাম সীলগালা, অর্থ ও কারাদ- প্রদানে মজুদ ছেড়ে বাধ্য হয় চাল ব্যবসায়ীরা। এতে চালের মূল্য বস্তাপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা কমে আসে। কেজিতেও ২-১টাকা কমেছে। দাম আরো কমাতে খুচরা পর্যায়েও সতর্কতা জারী করেছে প্রশাসন।