১০ বছর পর আবারও টেস্টে ব্যাটিং লজ্জায় পড়লো বাংলাদেশ দল। দক্ষিণ আফ্রিকাতে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ৯০ রানে। হেরেছে ৩৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। একদিকে যেমন ছিল চরম ব্যাটিং ব্যর্থতা অন্যদিকে বোলিং ছিল অনেক দুর্বল। দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারলেও এখনো বিদেশের মাটিতে ধুঁকতে হচ্ছে টাইগারদের। দলের এমন ব্যর্থতা নিয়ে গতকাল কথা বলেছেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার মতে বাজে দিন ভুলে এখন আমাদের সামনে তাকাতে হবে। চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতাই দলের উন্নতি হবে। সেই সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটেও লঙ্গার ভার্সনে ক্রিকেটারদের মন দিতে হবে। নয়তো টেস্টে ভালো করা সহজ হবে না বলেই তিনি মনে করেন। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: টেস্টে আমরা ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে পারছি না কেন?
মাশরাফি: আমার কাছে মনে হয়, একটা বাজে দিন গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে আমাদের টেস্ট অনেক কঠিন। তবে প্রথম টেস্টে উইকেট যতটা কঠিন আশা করেছিলাম তারচেয়ে কিন্তু ভালো ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংয়ে যে সক্ষমতা, সে অনুযায়ী আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য এতটা সহজ না। তারপরও আমরা প্রথম ইনিংসে একটা পর্যায়ে গিয়ে ভালো করেছি। কয়েকজন ব্যাটসম্যান সেটও হয়ে গিয়েছিল। তারা যদি ইনিংসটা বড় করতে পারতো তাহলে অন্যরকম কিছু হতো। আর দ্বিতীয় ইনিংসে যা ঘটেছে এমন বাজে দিন ক্রিকেটে খুব কমই আসে। অবশ্য এটি আমাদের জন্য নেতিবাচক। আমাদের থেকে আরো বেশি নেতিবাচক যারা সেখানে খেলছে। এখন এটা ভুলে গিয়ে যারা সেখানে খেলছে তাদেরকে আমাদের বাইরে থেকে অনুপ্রেরণা দেয়া উচিত। আমরা এর আগে যতবার সেখানে গেছি ইনিংস ব্যবধানে হেরেছি। এবার যে উন্নতি নেই তা নয়। শুধু আমরাই নই, এ উপমহাদেশের অনেক দলই সেরা ব্যাটিং লাইন নিয়ে সেখানে স্ট্রাগল করে। আমি বাংলাদেশ দলের যে মানসিকতা আছে, সেটার কথা বলবো দারুণ। ক্রিকেটাররা এমন পরিস্থিতিতেও সংবাদ সম্মেলনে বলেছে যে, ম্যাচ ড্র হবে। এ মানসিকতা থাকলে আশা করি আরো ভালো হবে।
প্রশ্ন: টেস্ট ক্রিকেটে বোলিং দুর্বলতা নিয়ে কি বলবেন?
মাশরাফি: আমাদের টেস্ট ক্রিকেটে বোলিং নিয়ে সবসময়ই একটা চিন্তা ছিল। কারণ এখানে অনেক লম্বা সময় বল করতে হয়। দ্রুত দলের জন্য ব্রেক থ্রু এনে দিতে হবে। আপনারা যদি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় বলেন, সেখানে কিন্তু স্পিনাররাই কাজটা করতে পেরেছে। এখন টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের যে বোলিং তা রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এখানে যারা জাতীয় দলের বাইরে থাকবে তাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে মন দিয়ে খেলতে হবে। অনেক ম্যাচ খেলতে হবে লম্বা সময় ধরে। আবার দু’/তিনটা ম্যাচ খেলেই ভাবলে হবে না যে, আমরা টেস্টে ভালো করবো। যদি ঘরোয়া ক্রিকেট বেশি খেলে সেই অভিজ্ঞতাতে টেস্ট ভালো খেলা যাবে।
প্রশ্ন: আরো একটু ভালো হতে পারতো কিনা?
মাশরাফি: আমরা সরাসরি ফলাফল নিয়ে কথা বলি। এখানে ছেলেরা যে চারটা দিন লড়াই করেছে সেটার কথা চিন্তা করি না। এটা ঠিক যে, কিছু ভুল না করলে এমন ফলাফল হতো না। কিন্তু আমরা ঘরে বসে যদি এতটুকু চিন্তা করতে না পারি যে, দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন কী? দেখেন বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এসে তিনদিনে টেস্ট ম্যাচ হেরে যাচ্ছে, এটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে-কেন। সেই হিসেবে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাতে খেলতে গেছি, আমাদেরও চিন্তা করতে হবে সেখানে ছেলেরা কেমন কন্ডিশনে খেলছে, কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব চিন্তা করতে না পারলে আমার মনে হয় ক্রিকেট নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে যেটা হয়ে গেছে অবশ্য এটা আমরা কেউ আশা করি না। তবে হয়ে গেছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে। এমন ঘটনা কিন্তু ১০ বছর পরে হলো। সেখানে যারা খেলেছে তারা আমার-আপনার চেয়ে বেশি মনোক্ষুণ্ন্ন। এখন পরের ম্যাচ আছে। এ দলটাই ক’দিন আগে আমাদের টেস্ট জিতিয়েছে। তাই আমাদের চিন্তা করতে হবে তাদের পাশে থেকে কিভাবে অনুপ্রেরণা দেয়া যায়।
প্রশ্ন: ওয়ানডে দল নিয়ে কী আশা করেন?
মাশরাফি: খুব বড় পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। সেখানে আমি আর সাকিব যাব। তবে টিম দিলে বুঝা যাবে কী হয়। আর এখন আমাদের জন্য ওয়ানডে ও টি- টোয়েন্টির চেয়ে টেস্ট খেলাটাই জরুরি। সবাই কিন্তু দেখেন, টেস্ট নিয়ে ভাবছে। কারণ আমরা কিন্তু বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পাই না।
প্রশ্ন: সামনে কতটা চ্যালেঞ্জ আশা করছেন?
মাশরাফি: প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সামনে দ্বিতীয় টেস্ট, সেটাই এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমি ফাফ ডু প্লেসিকে দেখলাম আরো বাউন্সি উইকেট চাচ্ছে। তাই চ্যালেঞ্জতো আরো বাড়বে। ওয়ানডেতে যে কী উইকেট করবে তাও জানি না। তবে যেটা দক্ষিণ আফ্রিকাতে স্বাভাবিক হয় সাড়ে তিনশ’র বেশি রান হয় এমন উইকেট করে। আবার এমন নয় যে, উইকেট করলেই আমরা সেখানে ৩৭০ করতে পারবো। আমাদের কাছে মনে হয় অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জই সেখানে আমাদের এখনো মুখোমুখি হতে হবে। তবে এখন মনে হয় টেস্ট ম্যাচ যেটা হচ্ছে সেটা নিয়েই ভাবা উচিত। আমরা ৮/৯ তারিখে যাব দক্ষিণ আফ্রিকাতে, তখন ওয়ানডে নিয়ে ভাববো।