রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন বিষয়ে মিয়ানমারকে জরুরি সহায়তা হিসেবে ৩০ লাখ ডলার দিচ্ছে জাপান। যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরে যাবেন তাদের জন্য এ অর্থে দেয়া হবে মানবিক সহায়তা। জীবনমানের অবস্থা নির্ধারণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া, পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা, জ্বালানি ও প্লাস্টিক কন্টোইনার সরবরাহ। এসব সুবিধা নির্ধারণ করা হবে ফেরত যাওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য পুনর্বাসন স্থাপনায়। এ খবর দিয়েছে মিয়ানমারের অনলাইন দ্য মিয়ানমার টাইমস। এতে বলা হয়েছে, শুক্রবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির সঙ্গে ন্যাপিডতে সাক্ষাত করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। ওই বৈঠকেই জরুরি এ সহায়তার কথা ঘোষণা করে জাপান। এরপর উপ প্রেস সচিব তোশিহিদে আনদো সাংবাদিকদের বিষয়টি অবহিত করেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যুতে সারা বিশ্ব থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ থাকা সত্ত্বেও তাদেরই পক্ষে অবিচল জাপান। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অধিকতর সহায়তার। তোশিহিদো আনদো বলেছেন, মিয়ানমারের প্রতি আস্থাশীল জাপান। এ ছাড়া এর বর্তমান নেতৃত্বের প্রতিও তাদের অবিচল আস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, শুক্রবারের বৈঠকে জাপান সরকার মিয়ানমারকে জরুরি সহায়তা হিসেবে নতুন ওই পরিমাণ অর্থ দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এ সময়ে অং সান সুচিকে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো জানিয়েছেন, রাখাইনে সহায়তা হিসেবে আরো দুই কোটি ডলার দেয়ার কথা বিবেচনা করছে জাপান। এর মধ্যে রয়েছে নারীদেরকে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রকল্প। এর মধ্য দিয়ে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো হবে। তবে এ সহায়তার বিষয়টি জাপানের পার্লামেন্টে অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে। সফর শেষে মিয়ানমার ত্যাগ করেন তারা কোনো। তবে এর আগে তিনি রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের মংডু সফর করেন। এই এলাকাটি সদ্য অতীতের গর্ভে চলে যাওয়া বছরে সবচেয়ে জঘন্য নৃশংসতার জন্য সর্বজনবিদিত। ওই এলাকা সফরের সময় তিনি সেখানকার ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করেন। গত ২৫ শে আগস্ট রাখাইনে নৃশংসতা শুরু হয়। এর পর ওই এলাকায় সফরে যাওয়া প্রথম বিদেশী কোনো মন্ত্রীর সফর এটাই প্রথম। তারা কোনো তার সফরে বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্ত এলাকাও পরিদর্শন করেন। তিনি পরিদর্শন করেন রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার রুটগুলো। এই রুট দিয়েই ২৩ শে জানুয়ারি রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটির মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সফরের সময় মিয়ানমার সরকারকে ওই এলাকায় মানবিক সহায়তার সুবিধা বৃদ্ধি করার জন্য আহ্বান জানান জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশেষ করে জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সি ও সাংবাদিকদেরকে ওই এলাকায় প্রবেশ করার অধিকার দেয়ার দাবি জানান তিনি। তিনি আরো আহ্বান জানান, স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে রোহিঙ্গারা যাতে ফিরে যেতে পারে। তাদেরকে যেন পুনর্বাসন করা হয়। এর পাশাপাশি সঙ্কটের মূল চিহ্নিত করারও আহ্বান জানান। তোশিহিদে আনদো বলেন, বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিদ্যুত সরবরাহ লাইন আধুনিকায়ন, রাখাইন রাজ্যে ১৫টি স্কুল নির্মাণে জাপানি সহায়তার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারা কোনো। তিনি অং সান সুচির সঙ্গে ৪৫ মিনিট বৈঠক করেন। এ সময় গণতান্ত্রিক জাতিগঠনে মিয়ানমারকে পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দেযার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এ সহায়তার মধ্যে রয়েছে তিনটি এরিয়া। এক. ইয়াঙ্গুনের শহর উন্নয়ন। দুই. পরিবহন খাত ও তিন. বিদ্যুত। এসব খাতে সহায়তা করা হবে যাতে মিয়ানমারের মানুষ প্রকৃতপক্ষে ২০২০ সালের মধ্যে তাদের প্রকৃত জীবনমানের পরিবর্তন বুঝতে পারেন। এ ছাড়া মিয়ানমারে প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের সরকারি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রেখেছে জাপান। এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। ৫ বছরের মধ্যে এ সহযোগিতা বাস্তবায়ন করা হবে। উল্লেখ্য, গত ২৫ শে আগস্ট সেনা ও পুলিশের ৩০টি ক্যাম্পে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা)। এর প্রতিশোধ নিতে সেখানে নৃশংস নির্যাতন শুরু করে সেনাবাহিনী। আরসাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেয় সরকার।