রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন চুক্তি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস’ (পিএইচআর)। সংগঠনটি বলেছে, নৃশংসতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছে এ চুক্তি। স্থানীয় সময় ১৭ই জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক থেকে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে পিএইচআর। এই বিবৃতি দিয়েছেন পিএইচআরের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রামস ড. হোমার ভেন্টারস। তিনি গত মাসে একদল চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন। এ সময়ে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো শারীরিক ও যৌন নৃশংসতার বিষয়টি প্রামাণ্য হিসেবে ধারণ করেছেন তারা। তিনি ওই বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর প্রকৃতপক্ষে যা ঘটানো হয়েছিল এবং এই নৃশংসতার জন্য যারা দায়ী তাদের জবাবদিহিতার বিষয়ে কিছুই বলা হয় নি এই চুক্তিতে। বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের ওপর আমাদের টিমের চিকিৎসকরা সম্প্রতি ফরেনসিক পরীক্ষা চালিয়েছেন। তাতে আমরা দেখতে পেয়েছি, অসংখ্য নারী ও শিশু গুলি খেয়ে বেঁচে আছেন। তাদের শরীরে ক্ষত রয়েছে। কারো শরীর পুড়ে গেছে। এ ছাড়া রয়েছে শরীরের ভিতরে অনেক ক্ষত। এর মধ্যে রয়েছে গণহারে ধর্ষণ। সন্ত্রাসবিরোধী অপারেশনের অজুহাতে এই বিষয়টিকে বৈধতা দেয়া যায় না। এটা কল্পনা করাও কঠিন হয়ে গেছে যে, ২০১৮ সালে এসে দুই দেশের সরকার প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। নির্যাতিত ওইসব রোহিঙ্গা নৃশংসতার ঐতিহাসিক শিকার। তাদেরকে তাদের নিজদেশে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে তাদের ওপর ওই রকম নৃশংসতা চালানো হবে না এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। ড. হোমার ভেন্টারস তার বিবৃতিতে আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো নৃশংসতার তদন্ত, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ছাড়া প্রত্যাবর্তন নিয়ে যেকোনো আলোচনা হবে অর্থহীন। বাস্তবক্ষেত্রে আমাদের যে অভিজ্ঞতা তা থেকে বলা যায়, যদি রোহিঙ্গারা দেখে যে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত, তারা দেশে ফিরে গেলে সহিংসতা, নির্যাতন ও ধর্ষণের আবারো শিকারে পরিণত হবেন তাহলে তারা বাংলাদেশের আশ্রয় শিবির ছেড়ে যেতে চাইবেন না। তিনি বিবৃতিতে আরো বলেন, রোহিঙ্গাদেরকে পর্যায়ক্রমিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। এটা দীর্ঘদিনের এক বাস্তবতা। এ বিষয়টি অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে। যদি কেউ নির্যাতনের ভয়ে মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি না হন তাহলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন। ড. হোমার ভেন্টারস আরো বলেন, চুক্তির অধীনে রোহিঙ্গারা ফিরে গিয়ে কোনো সম্পদের মালিক হবেন না। তাদেরকে নির্ভর করতে হবে সেই সরকারের ওপর, যারা তাদেরকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত রেখেছে। দেশে ফিরে গিয়ে তারা সুরক্ষিত হবেন এমনটা ভাবা তাদের জন্য এতে কঠিন হয়ে পড়বে। এর প্রেক্ষিতে পিএইচআর মিয়ানমার সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অপরাধে জড়িতদের জবাবদিহিতায় আনতে এবং সত্য প্রতিপাদনের জন্য পক্ষপাতহীন অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে পূর্ণাঙ্গ অনুমতি দিতে হবে। এটা হলে দেশছাড়া রোহিঙ্গাদের কাছে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদায় দেশে ফিরে যাওয়ার পথ তৈরি হবে।