দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ব্যর্থতার ঝুলি নিয়ে ফেরার পর প্রত্যাশা ছিল নতুন বছরে ঘুরে দাঁড়ানো। শুরুটাও হয়েছিল উড়ন্ত। ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা তিন জয়ে উড়ছিল টাইগাররা। কিন্তু সেখান থেকে তিন ফরমেটের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে মাটিতে আছড়ে ফেলে লঙ্কানরা। এর মধ্যে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীমের ইনজুরির কারণে টি-টোয়েন্টি ফরমেটে ৬ অভিষেকে বেশ এলোমেলো হয়ে পড়ে টাইগার শিবির। এ ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন সুযোগ।শ্রীলঙ্কা আয়োজিত ত্রিদেশীয় সিরিজ বাংলাদেশ দলের জন্য দিন বদলের লড়াই বললে ভুল হবে না। তবে এ লড়াইয়ে দলকে নেত্বত্ব দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্তরাই। সাকিব ইনজুরি কারণে মাঠের বাইরে। তাই তার ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব এখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কাঁধে। অন্যদিকে প্রধান কোচ এখনো নিয়োগ দিতে না পারায় অন্তবর্তীকালীন দায়িত্ব সামলাচ্ছেন কোর্টনি ওয়ালশ। ত্রিদেশীয় সিরিজে আজ টাইগারদের প্রথম প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ভারত, যাদের বিপক্ষে এখনো টি-টোয়েন্টিতে জয় মেলেনি। তবুও আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ম্যাচেই জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামি। নিজেদের সেরাটা দিয়ে ভালো খেলতে পারলে জয় সম্ভব।’
ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলেছে ৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এর শেষটি ২০১৬তে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বেঙ্গালুরুতে, যা টাইগারদের ক্রিকেট ইতিহাসে চিরদিনই আক্ষেপ হয়ে থাকবে। বিশেষ করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহীমের জীবনে ম্যাচটি দাগ কেটে থাকবে সারা জীবন। সেই ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। হার্দিক পান্ডিয়ার করা প্রথম বলে এক রান নেন মাহমুদুল্লাহ। পরের দুই বলে মুশফিকুর রহিমের দুটি বাউন্ডারি। আগাম বিজয় উৎসবও করে ফেলেন মুশফিক। কিন্তু এর পর যা ঘটে তা গোটা বাংলাদেশকেই আক্ষেপে পুড়িয়েছে। পান্ডিয়ার বলে সীমানায় ক্যাচ দেন মুশফিক। পরের বলে ফুল টসে ক্যাচ দিলেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ বলে ১ রান নিতে পারলেও টাই হতো ম্যাচ, গড়াতো সুপার ওভারে। কিন্তু সেটিও হয়নি, ১ রানে হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে দল। অথচ সেই ম্যাচের জয়ের নায়ক হতে পারতেন বর্তমান টাইগারদের ভারপ্রাপ্ত দলপতি মাহমুদুল্লাহ। প্রায় দুই বছর পর ফের ভারতের মুখোমুখি হয়ে নিশ্চয় স্মৃতিতে সেই যন্ত্রণাময় ম্যাচটি ভেসে উঠেছে তার! কিন্তু মাহমুদুল্লাহ জানিয়ে দিলেন সেদিন নিয়ে তিনি বসে নেই। তিনি বলেন, ‘বেঙ্গালুরুর ম্যাচ সেখানেই শেষ। সেখানেই থমকে আছে। ক্রিকেটে দুর্ঘটনা হতেই পারে। ওটা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। তবে ওখান থেকে শেখাটা জরুরি। শিখতে পারলে কাজে দেবে।’
ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতের শুরুটা হয়েছে বাজে হার দিয়ে। ভারতের ছুড়ে দেয়া ১৭৫ রানের লক্ষ্য লঙ্কানরা ৯ বল হাতে রেখে তুলে নেয় ৫ উইকেটের বিনিময়ে। বাংলাদেশ থেকে ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাসটা নিজ মাটিতেও ধরে রেখেছে লঙ্কানরা। নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনি না থাকলেও ভারতকে হালকা করে নেয়ার কিছুই নেই। তাই আজ একাদশ কেমন হবে টাইগারদের সেটিও চিন্তার কারণ। তামিম ইকবাল পিএসএলে খেলে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। ওপেনিংয়ে তার সঙ্গী সৌম্য সরকার। দু’জনই ফর্মে আছেন। কিন্তু চিন্তা দলের দুটি জায়গা নিয়ে। একটি হলো ৩ আরেকটি হলো ৭ নম্বর। এর মধ্যে সবচেয়ে নড়বড়ে জায়গা ৩ এ খেলবেন কে! জানা গেছে এখানে আজ বিবেচনাতে আছে তিন ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টির তিন নম্বরে একটা লম্বা সময় ভরসা ছিলেন সাব্বির রহমান। তবে সম্প্রতি সেই ভরসার জায়গা হারিয়েছেন তিনি। গত বছর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচে ৩ এ ব্যাট করেছেন সাব্বির। নিজের সবশেষ তিন ম্যাচে ব্যাট করেছেন পাঁচ-ছয়ে। আর ৩-এ ব্যাট করেন মুশফিকুর রহীম। প্রথম ম্যাচেই ৬৬ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছিলেন অপরাজিত থেকে। এছাড়াও প্রস্তুতি ম্যাচে দারুণ ব্যাট করা লিটন কুমার দাসকে এ পজিশনে বিবেচনা করা হচ্ছে। অধিনায়ক বলেন, ‘তিন নম্বর নিয়ে অনেক দিন ধরেই আমাদের বিবেচনা দোদুল্যমান আছে। সাব্বির তিনে ভালো করছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভালো করতে পারেনি। যে কোনো ব্যাটসম্যানেরই এমন সময় যায়। আমরা ওর পাশেই আছি। মুশফিক খেলেছে আগের সিরিজে। কালকেই দেখতে পাবেন কাকে তিনে খেলাই। কারণ লিটনও খুব ভালো ফর্মে আছে। প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো করেছে।’ অধিনায়কের ইঙ্গিতে লিটনের খেলানোর বিষয়টি পরিষ্কার। এছাড়াও ৭- এ আপাতত আরিফুল হককে নিয়ে চলছে পরীক্ষা নিরীক্ষা। লঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে সফল হয়নি তিনি। এবার সুযোগ এসেছে নিজেকে প্রমাণ করার।
নিদাহাস ট্রফির প্রস্তুতি ম্যাচে লঙ্কান একাদশের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করেছে টাইগাররা। ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে ভালো করেছে বোলারাও। বিশেষ করে দুই পেসার রুবেল ও তাসকিন। আজ মোস্তাফিজের সঙ্গে অভিজ্ঞ এ দুই পেসারের খেলার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও সাকিব না থাকায় স্পিন আক্রমণে দলের ভরসা নবাগত নাজমুল ইসলাম অপুর উপরই রাখতে হবে। জিতলেই বদলে যাবে পরিস্থিতি। কিন্তু সেই জয়টি পেতে আজ ‘টিম ইন্ডিয়ার’ বিপক্ষে ‘টিম বাংলাদেশ’কে খেলতে হবে নিজেদের সেরা খেলাটা।