পাঁচ বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে বাপ্পী চৌধুরীর ২৭টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। দেশের প্রথম ডিজিটাল ছবি ‘ভালোবাসার রঙ’-এর এই নায়কের ভাষ্য, ‘এরমধ্যে বেশিরভাগ ছবি হিট হয়েছে।’ সর্বশেষ ৬ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছে চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী অভিনীত ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’ ছবিটি। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বড় বাজেটের দুটি ছবি মুক্তি সত্বেও সেগুলো টপকে আলোচনায় রয়েছে বাপ্পীর ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’। এই ছবি এবং অন্যান্য কাজ নিয়ে বাপ্পী কথা বলেছেন স্বদেশ নিউজ২৪.কমের সঙ্গে…
‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’ দ্বিতীয় সপ্তাহে কেমন চলছে?
ভালো। হল মালিক, আমার ছবির পরিচালক ও প্রযোজক কিন্তু খুশি আছেন। প্রথম সপ্তাহে ৭১ হলে মুক্তি পেয়েছিল। দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪৩ সিনেমা হলে চলছে। তৃতীয় সপ্তাহেও কিছু হলে চলছে। বৈশাখে দুই ছবি মুক্তির পরেও দ্বিতীয় সপ্তাহে দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’। এর চেয়ে খুশির খবর আর কি হতে পারে! তাছাড়া ব্যাবসায়িকভাবেও সফল হতে যাচ্ছে।
অনেকেই বলছেন, ‘আমি নেতা হবো’ ছবির পর ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’ ছবির বিক্রি বাট্টা ভালো?
আমিও তেমনটা জেনেছি। প্রথমেই টেবিল কালেকশন ছিল ৭৬ লাখ টাকা। এটা সম্ভব হয়েছে দর্শকদের সাপোর্টের জন্য। আর ছবির সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে, প্রচারণা ছাড়াই সাফল্যের মুখ দেখছে। মাত্র দুদিন প্রমোশনে এই অবস্থা। আরো ভালো প্রচারণা করলে, হাতে সময় থাকলে আরো ভালো চলতো। আমার আগের ছবির রিসিপশন সেল অনেক ভালো। এর আগে লাভার নাম্বার ওয়ান, আমি তোমার হতে চাই ছবিতে তাই হয়েছে। তবে এই ছবির ক্ষেত্রে একবার যারা ছবি দেখছেন তারাই অন্যদের জানাচ্ছেন, ভালো ছবি। পরবর্তীতে নতুন দর্শক আসছে। এতে ছবির ব্যবসা ভালো গেছে।
ভালো ব্যবসা করলেও ছবির কালার গ্রেডিং নিয়ে অনেকেই আঙুল তুলছেন?
যিনি এই কথাটা বলছেন আগে জানতে চাই তিনি কোন হলে ছবি দেখছেন? অনেক হলের মধ্যে কালারের কিছু সমস্যা থাকে। যেমন আনন্দ সিনেমা হলে যদি কেউ ছবি দেখে তবে কালারে সমস্যা হয়। অনেক সময় কালার ভালো লাগে, আবার অনেক সময় বাজে লাগে। এটা নির্ভর করে হলের স্ক্রিনের উপর। এটা কারণ হতে পারে। ইউটিউবে গান বা ট্রেলার আপলোড হয়েছে সেখানে কিন্তু কোনো সমস্যা নেই। ছবিটা ফুল লেন্থে শুট করা। মানে ট্রাডিশনালি শুট করা। ছবির মধ্যে এক্সট্রা কালার নেই।
বড় বাজেটের, বিগ ধামাকার আর কী কী ছবিতে কাজ করছেন?
আমি এখন যেসব ছবিতে কাজ করছি তার বাজেট যে অনেক বড় এমনটা বলবো না। এভারেজ বাজেটের ছবি। এরমধ্যে মুক্তির অপেক্ষায় আছে দাগ, ডেঞ্জার জোন, প্রেমের বাঁধন, আসমানি ইত্যাদি। ছবিগুলো ভালো যাবে এটাই আশা করছি। কারণ একেক ছবি একেক ধরণের। হয়তো ছবিতে অনেক বেশি বাজেট নেই, কিন্তু ছবির মান খুব ভালো।
আগের তুলনায় আপনার কম ছবি মুক্তি পাচ্ছে কেন?
আগে আমি যে প্রোডাকশন হাউজে কাজ করতাম সেখান থেকে বেশি ছবি নির্মাণ হতো। উৎসব টার্গেট করে বেশি ছবি আসতো। শাকিব ভাইয়ার ছবির সাথে আমার ছবি মুক্তি পেত। এখন আমি ওই প্রোডাকশন হাউজে কাজ করছিনা। তারাই উৎসবগুলো দখল করে রাখছে। এই কারণে ছবি কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে আমার কয়েকটি ছবি কিন্তু রেডি আছে। একে একে সবগুলো মুক্তি পাবে।
‘রাজ দ্য সুলতান’ ছবি শুরু হবে কবে?
লন্ডনসহ আরো তিন দেশে শুটিং শুরুর কথা ছিল গত বছর সেপ্টেম্বরে। তবে একটু সমস্যা হয়েছে। সমস্যাটা প্রযোজকের। তাই কাজটা শুরু হয়নি। গত বছর এফডিসিতে আন্দোলন হয়, তখন প্রযোজক লন্ডন যান। এর বেশি খবর নেই এই ছবির জন্য।
বছরে ৬০টি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু তারমধ্যে হিট-সুপারহিট বা প্রসংশিত হচ্ছে দু-তিনটি। কেন?
এটা নির্ভর করে ছবির ম্যারিটের উপর। ভালো যে ছবিটা হচ্ছে তার টাকা উঠে যাচ্ছে। খারাপ হলে লস হচ্ছে। আবার অনেক সময় ছবি ভালো হচ্ছে কিন্তু টাকা উঠছে না। এর কারণ দুটো। প্রথমত, কাস্টিং ভ্যালু এবং দ্বিতীয়ত দর্শক ভ্যালু। কাস্টিং ভ্যালু ভালো থাকলে টাকা ওঠা খুব সহজ।
এফডিসি ঘরানার বাইরের নির্মাতাদের ছবিগুলো বেশি দর্শকন্দিত হচ্ছে, কী বলবেন?
এফডিসি ঘরানার বাইরের নির্মাতারা নতুন করে ভাবছে। দর্শকদের কথা মাথায় নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন। এফডিসি থেকে হিট ছবি আসছেনা তা কিন্তু নয়। হিট যদি না আসতো তবে আমি নেতা হবো কিংবা পলকে পলকে তোমাকে চাই হিটের তালিকায় আসতো না। আমি বলবো তারা ব্যর্থ নন। তবে আমি এটা একমত যে, এফডিসির বাইরের নির্মাতারা ছবির প্রচারণায় বেশ পটু! তাদের মধ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া একটু বেশি। তারা প্রচুর স্টাডি করছে কাজ নিয়ে। যেটা আমাদের এফডিসি ঘরানার নির্মাতাদের মধ্যে কম দেখা যায়। তবে আমি বিশ্বাস করি এই অবস্থার উত্তরণ হবে শিগগির।
চিত্রনায়ক বাপ্পীর সঙ্গে কথা বলার পর ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’ ছবির ব্যবসায়িক হিসেব জানতে ছবির পরিচালক শাহনেওয়াজ শানুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, প্রথম সপ্তাহে ৭১ সিনেমা হল থেকে টেবিল কালেকশন আসে ৭৬ লাখ। শেয়ার এসেছে ৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা (অ্যারাউন্ড ১০ লাখ)। ৭১ হলের মধ্যে ২১ হলেই দ্বিতীয় সিনেমা হল চলছে পলকে পলকে তোমাকে চাই। নতুন করে ১৭ টি হলসহ মোট ৪৩ হলে চলছে।
দ্বিতীয় সপ্তাহে আয় ১৫ লাখের মতো। এছাড়া তৃতীয় সপ্তাহে ৩০টি মতো হলে চালাবো সেখান থেকেও আয় হবে। দ্বিতীয় সপ্তাহে ৭০ লাখের মতো টাকা পাচ্ছি। এছাড়া ইউটিউবে লাইভ টেকনোলজিসের কাছে ভালো মূল্যে ছবি বিক্রি করছি। কলার টিউন হিসবে গান দিয়েছি। কিছু টাকা ঘাটতি রয়েছে, আগামী ঈদের সময় বা তার পর টাকা চলে আসবে। আর বছর শেষে হিসেবে করলে এই ছবি ব্যবসাসফল তালিকায় আসবে।