কবীর সুমন। ছবি: সংগৃহীত
(স্বদেশ নিউজ ২৪.কম) দীর্ঘদিন বাংলাদেশে আসেন না ওপার বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী কবীর সুমন। শেষ কবে বাংলাদেশে এসেছেন, তাও মনে করতে পারছেন না। কিন্তু কেন তিনি তার ‘ভালোবাসার দেশ’ বাংলাদেশে আসছেন না? বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন সময়কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে সে কারণটিই জানালেন গুণী এ শিল্পী।
১৯৯৬ ও ‘৯৮ সালে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অমন্ত্রণে দুবার বাংলাদেশে আসেন কবীর সুমন। তখন তার নাম ছিল সুমন চট্টোপাধ্যায়। ওই দুটি সংগীত সফরে পাঁচটি করে মোট ১০টি শো করেন তিনি। এসব শোতে একক শিল্পী হিসেবে সংগীত পরিবেশন করে যে অর্থ আয় হয়েছে, তার পুরোটাই তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে দান করে দিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আমন্ত্রণে ঢাকায় গিয়ে সংগীত শো করা প্রসঙ্গে কবীর সুমন বলেন, ‘ভারতের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বাংলাদেশকে আমি ভালোবাসি। আমাদের দেশ যদি বাংলাদেশ হতো, তাহলে আমার খুব ভালো লাগতো। আমি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য টাকা তুলেছিলাম। একটি পয়সাও নিজে নিইনি।’
ভারতের নাগরিক হয়েও বাংলাদেশের প্রতি তার আলাদা ভালোবাসার কথা জানান বাংলাদেশকে নিয়ে বহু গানের রচয়িতা ও শিল্পী কবীর সুমন। তিনি বলেন, ‘আমি ভারতের নাগরিক। এই দেশ আমায় জল দেয়, অসুখ করলে চিকিৎসা দেয়। আলাদা কোনো গর্ব আমার ভারতের জন্য নেই। কিন্তু সংগীত যা শিখেছি এই মাটিতেইতো (ভারত) শিখেছি। কিন্তু ভারতের একজন নাগরিক হয়ে ওদের আমন্ত্রণে দুটি সঙ্গীত সফর করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য টাকা তুলে দিয়েছিলাম।’
ওই শোগুলো থেকে কত অর্থ আয় হয়েছে তার সঠিক হিসাব কবীর সুমনের জানা না থকলেও উত্তর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা পত্রিকার বরাত দিয়ে তিনি এ সংখ্যাটি ৫২ লাখ বলে দাবি করেন।
ওই দুটি সফল সফরের পর ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে কবীর সুমনের আরেকটি সংগীতানুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কিছু মানুষের প্রতিবাদে সে অনুষ্ঠানটি আর করা যায়নি।
‘তারা (আয়োজকরা) হল বুক করলেন, তাদের হাতে সেই কাগজ ছিল, এমনকি আমার ওখানে যাওয়া নিয়ে যা যা কর্তব্য… আয়কর ইত্যাদি দেওয়া, সব তারা দিয়েছেন। আমি গিয়ে জানতে পারলাম আমাকে ওখানে গান গাইতে দেবেন না। বাংলাদেশের কারা যেন ওখানে পিকেট (বাধা) করছেন যে কবীর সুমন ভারতের শিল্পী। তাকে এখানে গান গাইতে দেওয়া হবে না,’ হতাশ কণ্ঠে বলেন কবীর সুমন।
এ দুঃখবোধ থেকেই বাংলাদেশে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানান কবীর সুমন। তিনি বলেন, ‘আমি এইজন্য আর বাংলাদেশে যাইনি এবং যাব বলে আর মনেও হয় না। কারণ আমি ভারতের লোক।’
বাংলাদেশ সরকার আমন্ত্রণ জানালে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে কবীর সুমন বলেন, ‘মার্জনা করবেন। যাব কেন? তখন বাংলাদেশ সরকার কী করছিলেন? বা বাংলাদেশের অতগুলো লোক কী করছিলেন? তখন তাদের মনে পড়ল না যে এই লোকটা ‘৯৬ এবং ’৯৮ সালে দুদফা টাকা তুলে গেছে গান গেয়ে, তার ভালোবাসার জায়গা থেকে।’
বাংলাদেশ এখন রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি সংকটজনক সময় পার করছে। এ সময়ে বাংলাদেশের জন্য কিছু করবেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের নানা দুঃসময়ে পাশে থাকা এ শিল্পী বলেন ‘না, এবারে অন্যান্য শিল্পীরা আছেন। বাংলাদেশের শিল্পীরাতো আরও অনেক বড় শিল্পী। তারা টাকা তুলুন না।’
দুঃখ থাকলেও বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসা জানাতে ভোলেননি। কবীর সুমন বলেন, ‘বাংলাদেশকে যা চেনার, চিনে নিয়েছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার কোনো বৈরীতা আছে।’