দ্রব্যমূল্য ও কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে জর্দানে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। রোববার রাজধানী আম্মানসহ দেশের প্রধান শহরগুলো বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। দাবি মানতে ব্যর্থ হলে সরকারের পদত্যাগও দাবি করেছেন তারা। টানা চারদিন ধরে এ আন্দোলন চলছে। রোববার ছিল আন্দোলনের চতুর্থ দিন। অব্যাহত এই আন্দোলনে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে স্থিতীশীল দেশটিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, রোববার আম্মানে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি জর্দান সরকার আইএমএফ এর নির্দেশনা অনুযায়ী কর ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত মাসে এ সংক্রান্ত একটি বিল ইতিমধ্যে পার্লামেন্টে পাঠানো হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্লামেন্টে বিলটি পাস হলে জর্দানের মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যাবে। দেশটির সাধারণ মানুষও সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারে নি। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিক্ষোভ শুরু করেছে তারা। রোববার প্রায় পুরো রাজধানী বিক্ষোভকারীদের দখলে ছিল। সচিবালয়ের কাছে জড়ো হয়ে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী হানি মুলকির পদত্যাগ দাবি করেন। তারা ঘোষণা দেন, করবৃদ্ধির জন্য পার্লামেন্টে পাঠানো ওই বিল বাতিল না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পরে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কার্যালয়ে দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় তারা শ্লোগান দিতে থাকে, ‘বিল বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এটি নির্লজ্জ সরকার।’ বিক্ষোভকারীরা বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহর কাছে করবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান। তারা বলেন, ‘আমাদের দাবি বৈধ। আমরা দুর্নীতির পক্ষে নই।’ রোববার দিনের শুরুতে প্রায় তিন হাজার বিক্ষোভকারী আম্মানে অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। এসময় তারা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন, আমরা পরাজয় মানবো না।
জর্দানে বিক্ষোভের সূচনা হয় গত বুধবার থেকে। এদিন ট্রেড ইউনিয়নগুলো করবৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনের ডাক দেয়। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আম্মানের রাজপথে নেমে আসে লাখো জনতা। রাজধানীসহ অন্য শহরগুলোতে বিক্ষোভকারীরা সরকার পতনের ডাক দেয়। বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, মায়েরা আবর্জনার স্তুপে সন্তানের জন্য খাবার খোজা শুরু করেছেন। প্রতিদিনই আমরা মুদ্রাস্ফীতি ও নতুন নতুন করের শিকার হচ্ছি। ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাবিয়া বলেন, নাগরিকদের আয় এ ধরণের করের জন্য উপযুক্ত না। এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ জানানোর অধিকার রয়েছে।
এদিকে, রোববারের আন্দোলন শেষে জর্দানের সিনেট অধিবেশন বসে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা পেত্রা’র খবরে বলা হয়েছে, সব পক্ষের মত নিয়ে খসড় আইনটি পুনর্বিবেচনা করতে রাজি হয়েছে সিনেট। সিনেটের স্পিকার ফয়সাল ফায়েজ বলেন, এই আইনের বিষয়ে দেশে গঠনমূলক সংলাপের প্রয়োজন। সরকারের উচিত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও চাপের সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের স্বার্থের সামঞ্জস্য রাখা। তবে সহিংসতার বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিচার করার দাবি জানান।