সেমাই কারখানায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে মাথা থেতলিয়ে দেয়। বগুড়া শহরের কানছগাড়ীর ময়েজ মিয়ার বাগানবাড়ী এলাকার তেসলা নিউরোসাইন্স হসপিটালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে শিশুটি। এঘটনায় অভিযুক্ত ম্যানেজার গ্রেফতার হলেও পুলিশের নজরে আসেনি কারখানার মালিক। অথচ দীর্ঘদিন ধরে শিশু শ্রমিক দিয়ে কারখানায় কাজ করাচ্ছেন তিনি। এনিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতনের শিকার সজীব (১৩) জেলার কাহালু উপজেলার শেখাহার উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র ও স্থানীয় ডেপুইল পশ্চিমপাড়া গ্রামের ভ্যান চালক ফেরদৌস আলী ছেলে।
সূত্রমতে, সেমাই কারখানায় শ্রমিকের কাজ না করায় রবিবার (৩ জুন) দুপুরে উপজেলার শেখাহার বাজারের ‘ভাই ভাই’ সেমাই কারখানার ম্যানেজার রবিউলের নির্দেশে রুহানী রনি, মাসুদ ও ওয়ারিশ সহ কয়েকজন ব্যক্তি সজীবকে কারখানায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে মাথা থেতলিয়ে দেয়। এনিয়ে এলাকায় স্থানীয় জনতার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে ঘটনার দিন রাতেই অভিযুক্ত কারখানার ম্যানেজার রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, পুলিশের তৎপরতা ও মামলা থেকে রক্ষা পেতে স্কুলছাত্র সজীবের চিকিৎসার কিছুটা খচর দিয়েছেন সেমাই কারখানার অসাধু মালিক সাজ্জাদ হোসেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে চলছে টাকা খেলা। দীর্ঘদিন ধরে ওই মালিকের তিনটি সেমাই কারখানায় শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করে আসলেও বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসেনি। ওই কারখানায় ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সহ নি¤œমানের সেমাই তৈরী করার রেকর্ড থাকলেও তা জনতার মুখে মুখেই থেকে গেছে। দেখতে আসেনি প্রশাসনের কেউই। কারখানার মধ্যে স্কুলছাত্রকে অমানবিক নির্যাতনের আলোচিত ঘটনার মামলায় অন্তর্ভূক্ত হননি করখানার মালিক সাজ্জাদ। শিশু শ্রম করলেন দেদারছে, তারই কারখানার মধ্যে ঘটনা, অথচ এজাহার ও তদন্তে নাম নেই, বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা।
সংসারে অভাবের কারণে স্কুলছাত্র সজীব লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেল ও বৃত্তবানদের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে। কিছুদিন ধরে সজীব কাজ নেয় শেখাহার বাজারে সাজ্জাদ হোসেনের ভাই ভাই লাচ্চা সেমাইয়ের কারখানায়। রবিউল ইসলাম নামের ব্যক্তি সেখানকার ম্যানেজার। সজীবের শরীর খারাপ ছিল, তাই কাজে আসেনি। কাজে আসতে পারবে না বলতে রবিবার দুপুরে কারখায় গিয়েছিল। ক্ষিপ্ত হয়ে ম্যানেজার রবিউলের নির্দেশে রুহানী রনি, মাসুদ ও ওয়ারিশ সহ কয়েকজন ব্যক্তি স্কুলছাত্র সজীবকে কারখানায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। তখন ম্যানেজার রবিউল উচ্চকন্ঠে বলছিল, ‘সালাকে পিটা কত টাকা লাগবে দেখব, মুখের উপর বলছে কাজ করবে না’ এর অবস্থা দেখে সবাই চুপচাপ কাজ করবে। পিটা সালারে, কুত্তার বাচ্চারে গরম তেলে ডুবা। নির্যাতনের সময় স্কুলছাত্রের মাথায় লোহার রড দিয়ে থেতলিয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীর লোকজন। অচেতন অবস্থায় সজীবকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা এখনো আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বগুড়ার তেসলা নিউরোসাইন্স হসপিটালে স্কুলছাত্র সজীব মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। পরিবারটি খুবই গরীব। শেষ সম্বল বিক্রি করে হলেও সজীবের চিকিৎসার খরচ উঠবে না। অসচ্ছল সংসারে বাবা একজন ভ্যান চালক।
এপ্রসঙ্গে কাহালু থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. শওকত কবির বলেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত ম্যানেজার রবিউলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারখানার মালিক ঘটনার সময় ছিলেন না। তিনি কন্ট্রাকে লেবার খাটিয়ে সেমাই তৈরীর কাজ করান। কারা কাজ করছে, কারখানার মালিক সেটা কীভাবে জানবে ! তবুও তিনি স্কুলছাত্র সজীবের চিকিৎসার জন্য সহায়তা করছেন।
এম নজরুল ইসলাম
বগুড়া অফিস
০৬-০৬-২০১৮ইং
০১৭৭৪ ৬১৪৭১৯