সারা দেশে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করবে সরকার। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সৌদি আরব অনুদান না দেওয়ায় সরকার এখন নিজেদের অর্থেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
দেশের ইতিহাসে ধর্মীয় খাতে এককভাবে সর্বোচ্চ ব্যয়ের প্রকল্প এটিই। সৌদি অর্থ এখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প সরকার কেন নিজেরাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে?
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণত সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘নির্বাচনের আগে জনতুষ্টির জন্য জনপ্রিয় প্রকল্পে সরকার অর্থায়ন করতে চায়, এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
নির্বাচনের আগে প্রত্যেক সরকারের একটা প্রবণতা থাকে জনপ্রিয় কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়ার, যাতে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। সে কারণে জাতীয় বাজেটেও এমন কিছু প্রকল্প থাকে যেগুলো হয়ত খুব প্রয়োজনীয় না, কিন্তু তাতে বরাদ্দ থাকে। এটিও তেমন একটি প্রকল্প বলেই মনে হয়।’
নতুন সময়সমী অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির এ প্রকল্প শেষ হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, প্রকল্পে অর্থায়নে এখনো অস্বীকৃতি জানায়নি সৌদি আরব। ‘তবে মসজিদের কাজ ফেলে রাখতে পারি না’ বলেই কাজ শুরু করে দেওয়া হচ্ছে।
সৌদি আরব কেন প্রতিশ্রুত অর্থায়ন করছে না? সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘ওই প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে এখনো নেতিবাচক কিছু জানায়নি সৌদি আরব।
এটা এমন নয় যে তাদের অর্থায়ন করার কথা, আমরা রিকোয়েস্ট করেছিলাম, তারা সম্মত হয়েছে। এখন তারা আমাদের মানা করেনি, বা রিগ্রেট করেনি। তবে কি, এ ধরনের বড় প্রকল্পে কিছুটা সময় লাগে, বারো পনের মাস লাগে। নাথিং আনইউজুয়াল।’
মসীহ আরও জানিয়েছেন, হজ্জের মৌসুমের পর একটি সৌদি দল বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে বাংলাদেশে আসবে, এর পরেই হয়তো বিষয়টি সুরাহা হয়ে যাবে।
এর আগে সৌদি আরব ১০০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকায় ‘প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প গত বছর একনেকে পাস হয়।
কিন্তু সৌদি সরকার এখন ওই অর্থ দিতে না চাওয়ায় মঙ্গলবার ৩৪০ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা। আর পুরো ব্যয়ই সরকারের থেকে বহন করা হবে। এটি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাস্তবায়ন করবে।
সৌদি অর্থায়ন পাওয়া না গেলে সরকার নিজেই কেন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে এমন প্রশ্নে ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, ‘তারা বলেছিল তারা টাকা দেবে, কিন্তু সেটা এখনো হাতে না পাওয়ায় সরকার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এটা আল্লাহর ঘরের কাজ, পরে কেউ শরিক হতে চাইলে হবে, তাতে বাধা নেই। কিন্তু মসজিদের কাজ, আমরা তো ফেলে রাখতে পারি না।’
বাংলাদেশ সরকার বলছে, ২০১৪ সালে প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ তৈরি করার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। পরে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের সময় তার সঙ্গে বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদের বৈঠকের পর বাংলাদেশের ওই প্রকল্পে অর্থায়ন করতে সম্মত হয় দেশটি।
পরে ২০১৭ সালে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। সেসময়ই ২০১৯ সালের ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়। কিন্ত এরপর এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও সৌদি আরবের অর্থায়ন না পাওয়ায় মঙ্গলবার সরকারের সাহায্য প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি।
একনেকের সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরের সময় সৌদি সরকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য এক বিলিয়ন ডলারের অনুদানের প্রস্তাব দেয়। তাদের (সৌদি সরকার) আগ্রহেই প্রধানমন্ত্রী রাজি হয়েছিলেন। এখন সৌদি সরকার এ অনুদান অস্বীকার করায় সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে একই মডেলের ৫৬০টি মসজিদ কাম ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। একে ইসলামী সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’