দুর্বল চরিত্রের পুরুষগুলোকে প্রথম টার্গেট করে রুবেল হাসান। তারপর হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগায় নারী সদস্যদের। তাদের দিয়ে তৈরি করা হয় প্রেমের ফাঁদ। প্রেমের জালে বন্দি করতে পারলেই ব্ল্যাকমেইল শুরু হয়। টাকা, স্বর্ণগহনা এমনকি মোটরসাইকেলসহ অনেক দামি জিনিস হাতিয়ে নেয়। কিন্তু খুব বেশিদূর এগোতে পারলো না রুবেল।অন্যকে জালে আটকাতে গিয়ে নিজেই পুলিশের জালে ধরা পড়লো। গত ২৭শে জুন ভোরে তাকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, রুবেলের টার্গেট থাকে দুর্বল চরিত্রের পুরুষরা। পরে নারী সদস্য দিয়ে সেসব পুরুষকে প্রেমের জালে আটকে নানান প্রতারণা করে। ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেয় নগদ টাকা, বিকাশ, চেক ও মূল্যবান জিনিস। এসবের সঙ্গে রুবেল একা জড়িত নয়। এই চক্রের আরো সদস্য রয়েছে। তারা পলাতক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। এখন বাকি সদস্যদের ধরার চেষ্টা চলছে।
রুবেলের প্রতারণা শিকার হয়ে মো. রমিজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি মামলা করেছে যাত্রাবাড়ি থানায়। তারই সূত্র ধরে গত কয়েকদিন অভিযান চালিয়ে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সাইদুর রহমান টিটুকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবার রুবেল ধরা পড়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সে তার অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়েছে।
রুবেল বলেছে, প্রথমে ব্ল্যাকমেইলের পরিকল্পনা করে। তারপর নারীর নেশা রয়েছে এমন ব্যবসায়ী ও ধনী ব্যক্তিদের টার্গেট করে। রুবেলের দলে রয়েছে আরো কয়েকজন সক্রিয় সদস্য। তাদের দিয়ে ওইসব ব্যক্তিদের প্রেমের ফাঁদ তৈরি করা হয়। একবার প্রেমের জালে বন্দি করতে পারলেই হলো। ওই পুরুষদের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা এসব নিয়মিত চলতে থাকে। কিন্তু এসব তাদের সঙ্গে যে প্রতারণা করা হচ্ছে সেটা বোঝার অবস্থা রাখে না। তার আগেই প্রতারণা শুরু করে। ওইসব পুরুষদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে ছবি তুলে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। সবার আগে সবচেয়ে দুর্বল জায়গা স্ত্রীদের ওইসব ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি পাঠানো হবে বলে হুমকি দেয়। কিংবা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেয় রুবেল তার সহযোগীরা। শুধু তাই নয়, পুলিশে দেয়ার ভয় আর মিডিয়ায় ছবিসহ নিউজ করার ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা, চেক ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে নেয়া। একসময় ছেড়ে দিলেও দিনের পর দিন রুবেলরা ব্ল্যাকমেইল করতেই থাকে। লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে তাদের চাহিদা পূরণ করে। ঈদের আগে ভুক্তভুগীদের একজনের কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা আর একটি মোটরসাইকেল নিয়ে নেয় রুবেলের সহযোগীরা।
এসআই ইকবাল হোসেন বলেন, রুবেল ও তার দলের অন্য সদস্যরা প্রায়ই এসব কাজ করে বেড়ায়। অনেকে মানসম্মানের ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে আসেন না। এজন্য ওরা অপরাধ দিন দিন করেই যায়। সর্বশেষ রমিজ উদ্দিনের অভিযোগের ভিত্তিতে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। তবে পুরো চক্রটি এখনো ধরা পড়েনি। আমরা চেষ্টায় আছি। তিনি বলেন, রুবেলের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। ঢাকায় কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। কখনো যাত্রাবাড়ী, কখনো কেরানীগঞ্জ থাকে। সর্বশেষ আমাদের বলেছে উত্তর যাত্রাবাড়ীতে তার বাসা।