বেপরোয়া চালকের কারণে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু: বিআরটিএ

রাজধানীর কুর্মিটোলায় উড়ালসেতুর ঢালে দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ব্রেক, ইঞ্জিন, চাকা সবই ঠিক ছিল। বেপরোয়া গতির কারণে বাসটি শিক্ষার্থীদের চাপা দিয়েছিল। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে পাঠিয়েছে বিআরটিএ।

গত ২৯ জুলাই উড়ালসেতুর ঢালে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দেয় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস। এতে দুই শিক্ষার্থী নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম। দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ৩০ বছর ধরে ঢাকা-রাজশাহী পথে দূরপাল্লার বাস চালাচ্ছেন। ঘটনার পর থেকে তিনি বলে আসছেন, বাসটির চালক অদক্ষ ও বেপরোয়া ছিলেন। দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সারা দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের বাস চাপা দেওয়ার ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ঘটনায় যুক্ত থাকা তিনটি বাস পরিদর্শন করে ৫ আগস্ট পুলিশের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয় বিআরটিএ। বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক সামসুদ্দিন আহমেদ এই প্রতিবেদন তৈরি করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনটি বাস প্রতিযোগিতামূলকভাবে চালালে দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও ১০-১২ জন আহত হন। শিক্ষার্থীদের চাপা দেয় টাটা কোম্পানির তৈরি ২০১৬ মডেলের (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৯২৯৭) বাসটি। চাপা দেওয়া বাসটির ইঞ্জিন, স্টিয়ারিং হুইল, ব্রেক, সাসপেনসন ও চাকা ভালো রয়েছে। বাসের উইন্ডশিল্ড (সামনের কাচ), কিছু লাইট ও সামনের বাঁ পাশের অংশ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাসটিতে এমন কোনো যান্ত্রিক গোলযোগ বা ত্রুটি নেই, যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চালকের দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বাসটির ফিটনেস ঠিক থাকলেও কোনো রুট পারমিট নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বাসের চালক মাসুম বিল্লাহর যাত্রীবাহী হালকা যান চালানোর লাইসেন্স রয়েছে।

দুর্ঘটনায় যুক্ত থাকা তিনটি বাসের পাঁচজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে দেয় র‍্যাব। তাঁরা হলেন চাপা দেওয়া বাসের চালক মাসুম বিল্লাহ এবং তাঁর সহকারী (হেলপার) এনায়েত হোসেন, অন্য দুই বাসের তিন কর্মী মো. জোবায়ের, সোহাগ আলী ও রিপন হোসেন।

পুলিশ সূত্রগুলো জানায়, মাসুম বিল্লাহ চালকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করার পর গত বছর হালকা যান চালানোর লাইসেন্স পান। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, বাসটির ব্রেক ফেল করে নিয়ন্ত্রণ হারান।

মামলাটি এখন তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর ডিবির উত্তর বিভাগ। ডিবি উত্তরের উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সব দিক মিলিয়েই তদন্ত করছেন তাঁরা। চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চলতি মাসেই মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *