আগস্টে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ যে ১৪ ডিসিপ্লিনে অংশ নেবে তার মধ্যে আছে ভারোত্তোলনও। তবে কোনো পুরুষ ভারোত্তোলক নন, এই গেমসে অংশ নেবেন একজন নারী। তিনি এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। মাস দেড়েক আগে শুরু করেছেন গেমসের অনুশীলন। নিজের পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য থাকলেও এবার আর জোরালো আশা করতে পারছেন না তিনি।
গৌহাটি এসএ গেমসে ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে ১৪৯ কেজি তুলে সোনা জিতে ছিলেন মাবিয়া। সেই দৃশ্য আজও ক্রীড়াপ্রেমীদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল।একটি স্বর্ণপদক বদলে দিয়েছে মাবিয়ার জীবন। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পেয়েছেন উত্তরায় ফ্ল্যাট। গোল্ডকোস্ট কমনওয়েলথ গেমসে ১৮০ কেজি তুলে নিজের ওজন শ্রেণিতে ষষ্ঠ হয়েছিলেন। এরপর অনেক জল গড়িয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ ভারোত্তোলন ফেডারেশন। একের পর এক বদল হয়েছেন কর্মকর্তারা। টালমাটাল অবস্থা ভারোত্তোলকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন মাবিয়া। তার ওপর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সুইমিংপুল সংলগ্ন জিমন্যাশিয়ামে অনুশীলন করছিলেন মাবিয়া। মজার বিষয় হলো, মাবিয়াকে অনুশীলন করাচ্ছেন তারই সঙ্গে গত এসএ গেমসে অংশ নেয়া আরেক খেলোয়াড়। ওই গেমসে ব্রোঞ্জ পাওয়া ফিরোজা পারভীন এখন মাবিয়ার কোচ। এক সঙ্গে খেলেছেন। বয়সে সিনিয়র দেখেই ফেডারেশন সেই ফিরোজা পারভীনকে বানিয়ে দিয়েছে মাবিয়ার কোচ। ফিরোজার অধীনে কোনো রকম প্রস্তুতি নেয়া মাবিয়া এশিয়ান গেমসে পদকের আশা নেই বাংলাদেশের। মাবিয়াও সে আশা করেন না। হয়তো এ কারণেই, মাবিয়ার প্রস্তুতি নিয়ে গুরুত্ব দেয়নি ফেডারেশন। তাইতো একজন খেলোয়াড়কে কোচ বানিয়ে তার সঙ্গে দিয়ে দিয়েছে।
যদিও এসএ গেমসের পর থেকেই মাবিয়া দাবি করে আসছিলেন অনুশীলনের জন্য ভালো জিমন্যাশিয়াম ও দক্ষ কোচ; কিন্তু মাবিয়ার চাওয়াটা বারবার ফেডারেশনের দেওয়াল থেকেই ফিরেছে। কর্মকর্তাদের কান পর্যন্ত তা পৌঁছায়নি। মাবিয়া জানান, বিদেশি কোচের অভাবে পারফরম্যান্স তলানিতে গিয়ে ঠেকছে তাদের। এশিয়াডের প্রস্তুতি নিয়ে ‘ফিরোজা পারভীন কিংবা বিদ্যুৎ কুমার রায় যুব গেমসের ভারোত্তোলকদের কোচ হতে পারেন। কিন্তু এশিয়াডে ভারোত্তোলকদের জন্য বিদেশি কোচ প্রয়োজন। ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই আমাদের পারফরম্যান্স দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।’ পদক জয়ী এই ভারোত্তলক আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে ঢাকায় এসেছিলেন রুশ কোচ অবিনাশ পান্ডে। একটি কোচেস কোর্স করিয়েছিলেন ১৫ দিন। অবিনাশ পরে ইন্দোনেশিয়ার কোচ হয়েছেন। অলিম্পিকে রুপা জিতেছে ইন্দোনেশিয়া। এমন কোচের প্রয়োজন আমাদের।’ মাবিয়া বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা ও নেপালের খেলোয়াড়রা আমাদের কাছে হারতো। আজ তারা কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতছে। বিদেশি কোচ রাখার ফলেই এটা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে। যেখানে আমাদের কোনো বিদেশি কোচ নেই, দেশি কোচদের তত্ত্বাবধানে ভবিষ্যতে পদক জেতা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না। ফলে এখন বিদেশ ট্যুর ছাড়া আর কিছুই সম্ভব নয়।’ জাকার্তা এশিয়ান গেমসে ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে অংশ নেবেন মাবিয়া। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আমি একাই ভারোত্তোলক হিসেবে যাচ্ছি। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) একজনের কথাই বলেছে। তিন থেকে পাঁচজন গেলে মানসিকভাবে আমি চাঙা থাকতাম।’
তিনি বলেন, ‘পদক জিতি বা না জিতি, আমার একটি ইচ্ছে আছে। এমন একটি রেকর্ড গড়তে চাই, ভবিষ্যতে অন্যদের পক্ষে সেই রেকর্ড ভাঙা যেন সহজ না হয়।’ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মাবিয়া ভালোমানের ভারোত্তোলক। গোল্ডকোস্টে নিজের রেকর্ড ভেঙেছে সে। তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি আমরা। আশা করি, উন্নতি করার লক্ষ্য থাকবে তার। ভালো রেজাল্ট করার চেষ্টা করবে।’ তবে কোচ ফিরোজা পারভিনও স্বীকার করলেন, ‘এশিয়ান প্রস্তুতি সময়টা অনেক কম হয়ে গেছে। গত এসএ গেমসের আগে আমরা ৬ মাস অনুশীলন করেছিলাম। তার ফলটাও এসেছিল। এখন মাবিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছে আগের চেয়ে বেশি ওজন তুলতে। দেখা যাক কী হয়।’