তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদের জামিন না-মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান নূর তার জামিন আবেদন নাকচ করেন। নওশাবা অসুস্থতা অনুভব করলে তাকে আদালত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, নওশাবার বমি হয়েছে কয়েকবার। এছাড়া পানিশূন্যতাজনিত কিছু সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এ কারণে নওশাবাকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, গতকাল ঢামেক থেকে এমআরআই টেস্ট করার জন্য রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে।সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আবার ঢামেকে পাঠানো হয় নওশাবাকে। এদিকে বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় নওশাবাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। এর আগে দুপুরে আদালতে নওশাবার জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইমরুল কায়সার। কিন্তু আদালত সে আবেদন নাকচ করে দেন। ইমরুল কায়সার বলেন, নওশাবা আদালতে থাকা অবস্থায় খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, নওশাবা নামে একজন রোগীকে সোমবার বিকাল সোয়া ৪টায় জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। যেহেতু সে ভর্তি হয়নি তাই এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. নাসের গণমাধ্যমকে বলেন, পুলিশ হেফাজতে অভিনেত্রী কাজী নওশাবাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি (নওশাবা) ডিসেন্ট্রিসহ কয়েকটি সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। আমরা তাকে ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠিয়েছি। নওশাবার ভাই জুনায়েদ আহমেদ জানান, গত দুইদিন ধরে তার বোনের রক্তচাপ উঠানামা করছে। তার ডায়রিয়া হয়েছে। এছাড়া শরীর বেশ দুর্বল। গত ৪ঠা আগস্ট রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে নওশাবাকে আটক করে র্যাব। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের মধ্যে জিগাতলায় সংঘর্ষ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর নওশাবা জানিয়েছিলেন, তিনি একজনের ফোন পেয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন।গ্রেপ্তারের পরদিন ৫ই আগস্ট আদালতে হাজির করে পুলিশ সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম নওশাবাকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠান। প্রথম দফায় রিমান্ড শেষে গত ১০ই আগস্ট আবার দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নেয়া হয় নওশাবাকে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় ১০ই আগস্ট বিকালে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। ঢাকা মহানগর হাকিম আমিরুল হায়দার চৌধুরী শুনানি শেষে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র দুই মাধ্যমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সম্পৃক্ত কাজী নওশাবা আহমেদ। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই জনপ্রিয় সব নির্মাতার ব্যতিক্রমী নানা নির্মাণে বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক হৃদয় জয় করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলার ওপর পড়াশোনা এ অভিনেত্রীর। অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও প্রায়ই অংশ নেন। আর তাই এবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টেই নওশাবার জন্ম। বড় হয়েছেন শ্যামলীর আদাবরে। বাবা কাজী সেলিম উদ্দিন ও মা নাহিদ সেলিমের তিন সন্তানের ছোট নওশাবা। তার দুই ভাই জুনায়েদ আহমেদ ও জুবায়ের আহমেদও শ্যামলীতেই থাকেন।
নওশাবার শিক্ষাজীবন শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজে শুরু হলেও হলিক্রস স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করেন। ২০০৩ সালে আহমেদ এহসানুর রহমান জিয়ার সঙ্গে নওশাবার বিয়ে হয়। তাদের ছোট্ট সংসারে প্রকৃতি নামের ৬ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে মঞ্চে অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন নওশাবা। এরপর টিভি বিজ্ঞাপন ও নাটকের মাধ্যমে পর্দায় আসেন তিনি। ছোটপর্দার পাশাপাশি উধাও নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
এরপর একে একে আরো কয়েকটি ছবিতে দেখা যায় এ অভিনেত্রীকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘চন্দ্রাবতী’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘আলগা নোঙর’, ‘স্বপ্নবাড়ি’ ও ‘নাইন্টিনাইন ম্যানশন’। অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম নওশাবার প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে বলেন, আমাদের জানামতে নওশাবা সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। ত্রাণ বিতরণ ও শিশুতোষ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পছন্দ করেন। সমাজসেবামূলক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও সে সম্পৃক্ত ছিল।
শিশুদের নিয়ে সিসিমপুর নামে একটি অনুষ্ঠানে ইকরি চরিত্রে দীর্ঘদিন গলাদিয়ে অভিনয় করে বাচ্চাদের কাছে খুব পপুলার হয়েছিলেন। নওশাবাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি যেহেতু আদালতের তদন্তাধীন তাই পরিবার চাচ্ছে খুব দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে তার বাচ্চার কাছে ফেরত যাক। সে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পছন্দ করে। নওশাবাকে আদালত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নওশাবার একটু ঠাণ্ডাজনিত বা অ্যাজমার সমস্যা আছে।
আমরা অভিনয় শিল্পী সংঘের পক্ষ থেকে বলতে চাই, যতদূর জানি নওশাবা একজন মানবিক এবং সামাজিক মানুষ। যেকোনো মহৎ ও মানবিক কাজের সঙ্গে সে নিজেকে জড়াতে পছন্দ করেন। শিল্পী হিসেবে সে সবার সঙ্গে বন্ধুসুলভ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাকে নিয়ে শিল্পীদের মধ্যে এ পর্যন্ত কারোর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। একটি স্পর্শকাতর কারণে সে যেহেতু গ্রেপ্তার হয়েছে তাই কোনোভাবে আমরা সে মামলাকে প্রভাবিত করতে চাই না। একই সঙ্গে আমরা চাই সদা হাস্যোজ্জ্বল মেয়েটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুক।