বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বোরকা বা নিকাবের ওপর আংশিক বা পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। ওইসব দেশে বোরকা বা নিকাব পরলে জরিমানার বিধান রয়েছে। অর্থের পরিমাণের বিচারে এই জরিমানা হয়তো খুব বেশি নয় কিন্তু এইসব নারীদের জন্য এগিয়ে এসেছেন আলজেরীয় বংশোদ্ভূত এক ফরাসি ব্যক্তি। রাচিদ নেক্কাজ নামের এই ব্যক্তিকে ‘জোরো অব দ্য নিকাব’ বলা হয়।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে ফ্রান্স জনসম্মুখে বোরকা নিষেধ করে। এরপর একে একে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং সবশেষ ডেনমার্কে বোরকা বা নিকাবের ওপর আংশিক কিংবা পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এসব দেশে কোনও নারী বোরকা বা নিকাব পরলে আইন লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানার বিধান রয়েছে।
তবে এই ফরাসি নাগরিক রাচিদ নেক্কাজ বোরকা বা নিকাব পরার দায়ে কেউ অভিযুক্ত হলে তার জরিমানা শোধ করে দেন। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জরিমানা পরিশোধ করতে ‘ডু নট টাচ মাই কন্সটিটিউশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানও খুলেছেন নেক্কাজ। নিজের এই উদ্যোগের ব্যাপারে নেক্কাজ বলেন, আমি এইসব নারীদের পক্ষ নিচ্ছি না, কিন্তু ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য তারা যে কাজ করছেন সেটিকে সমর্থন করছি।
তবে সমালোচকরা বলছেন তিনি মূলত প্রচারণা পেতেই এ ধরনের কাজ করছেন। তাদের দাবি, রাজনীতির ময়দানে ব্যর্থ হয়েই অন্য দিকে পা বাড়ান। আর সেটি হচ্ছে, বোরকা-নিকাব পরিহিত নারীদের জরিমানার অর্থ দিয়ে প্রচারণায় আসা।
উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে ৪৬ বছর বয়সী নেক্কাজ জানান, তিনি এখন পর্যন্ত এক হাজার পাঁচশ ৩৮ জন নারীর জরিমানা শোধ করেছেন। নেক্কাজ বলেন, কতজনের জরিমানা শোধ করবো তা আমি জানি না। কেননা স্বাধীনতার কোনও সীমা নেই।
চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে সবশেষ ডেনমার্কে বোরকা বা নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। সেখানকার বোরকা বা নিকাব পরা মুসলিম নারীদের প্রতি সংহতি জানাতে আগামী মাসে ডেনমার্ক যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নেক্কাজ।
ডেনমার্কে বোরকা-নিকাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ
ডেনমার্কে নতুন এই আইন কার্যকর হওয়ার পর একজন তরুণীকে জরিমানা গুনতে হয়েছে এমন খবরের দুইদিন পর নেক্কাজ এমন ঘোষণা দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ডেনমার্কের জাতীয় দৈনিক বার্লিনংস্কে পত্রিকাকে বলেন, সব জরিমানা শোধ করতে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর আমি কোপেনহেগেন থাকবো। যদিও আমি নিকাবের পক্ষে নই তারপরও আমি সেখানে প্রতি মাসেই যাবো। আমি সবসময় বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষে কথা বলে যাবো। সেটা নিকাব পরার স্বাধীনতার পক্ষে একইসঙ্গে হিজাব না পরার স্বাধীনতার পক্ষে।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে আলজেরীয় অভিবাসী বাবা-মার ঘরে প্যারিসের একটি শহরতলীতে জন্মগ্রহণ করে নেক্কাজ। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় সফল আবাসন খাতের এই ব্যবসায়ী ২০০৭ সালে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন। পরে ২০১৩ সালে ফ্রান্সের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন নেক্কাজ।