আওয়ামী লীগ মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকারের সকল কর্মকাণ্ডের বৈধতা দিয়েছিল মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই আওয়ামী লীগ ১/১১-এর বেনিফিশিয়ারি। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে (একাংশ) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে (একাংশ)-এর আয়োজনে সাংবাদিক নির্যাতনবিরোধী সংহতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভকালে কর্তব্যরত ৪০ জন সাংবাদিকের ওপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একটি মারাত্মক কথা বলেছেন। তিনি ১/১১-এর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন। আমি বলবো- পদধ্বনি শোনার পরও আপনারা সরকারে আছেন? এখনও পদত্যাগ করছেন না? সরকার আপনাদের, অথচ আপনারাই ১/১১-এর পদধ্বনি শুনছেন।আমাদের একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না। ১/১১-এর বেনিফিশিয়ারি কিন্তু আওয়ামী লীগ। এতটাই বেনিফিশিয়ারি যে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে আপনাদের নেত্রী বলেছিলেন, মইনউদ্দিন ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকারের সকল কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেবো। দিয়েছেনও। পার্লামেন্টে আইন পাস করেছেন। এর পরও আপনারা ১/১১-এর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন কেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখে যা আসছে তিনি তাই বলছেন। আপনি রাজনীতিবিদ, আপনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, আপনার মুখ দিয়ে অর্বাচীনের মতো এ ধরনের কথাবার্তা কখনোই শোভা পায় না। কিন্তু এটা আপনার স্বভাব। আপনি আপনার স্বভাবের মধ্য দিয়ে এ ধরনের হাস্যকর কথাবার্তা বলেন। দয়া করে এসব বন্ধ করুন। আমরা এই ধরনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের নির্দেশে পুলিশ রাতের অন্ধকারে মেয়েদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের অপরাধ তারা নাকি নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উস্কানি দিয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ তো তারা সব সময় করে। আজকেও তারা মানববন্ধন করে বলেছে, আমরা নাকি উস্কানি দিচ্ছি। আমরাতো প্রথমদিন থেকেই সমর্থন দিয়েছি। প্রকাশ্যে ছাত্রদের এই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে সমর্থন করেছি। সেই সমর্থন অব্যাহত রেখেছি। আমরা ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনকে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে সমর্থন করেছি। জনগণকে আবার আহ্বান জানাবো- শুধু নিরাপদ সড়ক নয়, নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আপনারা এগিয়ে আসুন। আপনারা জেগে উঠুন। আপনার দেশকে স্বাধীন করুন। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশকে, দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। এজন্য আমরা প্রথম থেকেই ঐক্যের কথা বারবার বলে আসছি। আমাদের নেত্রী জেলে যাওয়ার আগে মিটিংয়ে বলে গেছেন। আসুন আমরা দল-মত নির্বিশেষে এক হয়ে এই যে দানব আমাদের বুকের ওপর ভর করে বসে আছে, এই দানবকে সরিয়ে দেই। তিনি বলেন, যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের মুখে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়, সে দেশে আপনি কি আশা করছেন? একটা মেয়ে জামিন আবেদন করেছে, সেটা কোর্ট থেকে রিজেক্ট করেছে। তার কি অপরাধ? সেকি খুনি না ডাকাত? সেকি চোরাচালানি, সেকি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে? যে আজকে আপনি তার জামিন আবেদন বাতিল করে দিচ্ছেন। যেসব ছেলে-মেয়ে ঢাকার বাইরে থেকে এসে কষ্ট করে মেসে থেকে লেখাপড়া করছে, তাদের রিমান্ড বাতিল করা যাবে না বলছেন। আর যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে, স্টক মার্কেট লুট করেছে তাদের প্রতিবেদন পর্যন্ত প্রকাশ করেন না। কারণ তারা সবাই আপনাদের লোক। মির্জা আলমগীর বলেন, এই সরকার একটি ফ্যাসিস্ট সরকার। অনির্বাচিত ও দখলদার সরকার। তারা নির্যাতনের কারণে নতুন প্রজন্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আগে তারা বড়াই করতো নতুন প্রজন্ম তাদের সঙ্গে আছে। নতুন প্রজন্মকে জিজ্ঞেস করে দেখেন তো কেউ সরকারের পক্ষে আছে কি-না। একজনও নেই। যখন সরকার দেখছে জনগণ তাদের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে, তখন একের পর এক নতুন নতুন আইন তৈরি করছে। এই সরকার কাউকেই রেহায় দেবে না। কারণ সরকারের ক্ষমতায় থাকা ও তাদের বেঁচে থাকার জন্যই জনগণকে নিপীড়ন করা প্রয়োজন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজকে যে সমাবেশ করছি তার কারণ পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের উপর হামলা করা হয়েছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- সবাইকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। চিহ্নিত করতে যে এতোদিন লাগে তা আগে জানতাম না। এটা কোন ধরনের সরকার। এই সরকারের মধ্যে যাই থাকুক- এদের মধ্যে মানবতা নেই। এদের আমলে ১৪ বছরের শিশুরাও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ইনকাম বৈষম্য সব চেয়ে বেশি। পার্শ্ববর্তী ভুটান, মালদ্বীপের মতো দেশেও তারা জিডিপিকে গুরুত্ব দেয় না। অথচ মালদ্বীপে কোনো নাগরিক অসুস্থ হয়ে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে হেলিকপ্টারে করে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। তারা জিডিপি বোঝে না। জিডিপি বোঝে খালি শেখ হাসিনা।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সব জায়গায় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র ভূত দেখতে পান। জিয়া পরিবারের ভূত দেখতে পান। তা না হলে ১৯৭৫ সালের ঘটনায় কিভাবে তিনি জোর করে খালেদা জিয়াকে যুক্ত করেন? জিয়াউর রহমানকে কিভাবে যুক্ত করেন?
বিএফইউজে’র (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএফইউজে’র (একাংশ) মহাসচিব এম. আবদুল্লাহ, ডিইউজে’র সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, আবদুস শহীদ, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ।