জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে নবম শ্রেণির এক ছাত্রের পকেটে ইয়াবা দিয়ে সেই ছাত্রসহ চারজনকে মাদকাসক্ত হিসেবে হাতকড়া পরিয়ে আটক করে সরিষাবাড়ী থানার দুই এসআইসহ চারজন পুলিশ সদস্য। এ সময় ঘটনার সত্যতা বুঝতে পেরে গ্রামবাসীরা তাদের প্রতিহত করে। অবশেষে গ্রামবাসীর রোষানল থেকে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছেন সেই চার পুলিশ সদস্য। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কোনাবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রতিবাদে গ্রামের বিক্ষুব্ধ তিন শতাধিক মানুষ রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করে ঘটনার সাথে জড়িত সরিষাবাড়ী থানার দুই এসআইয়ের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী থানার এসআই আমিনুর রহমান ও এসআই আবু সামাসহ আরো দুজন কনস্টেবল গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে সরিষাবাড়ী পৌরসভার কোনাবাড়ী গ্রামে মাদকবিরোধী অভিযানে যান।তারা সিভিল পোশাকে দুটি মোটরসাইকেলে কোনাবাড়ী গ্রামের হাবুর মোড়ে নবম শ্রেণির ছাত্র মামুন মিয়ার পকেটে কয়েকটি ইয়াবা দিয়ে তাকে হাতকড়া পরিয়ে আটক করেন। এসময় বাবলু মিয়া ও মো. বাবলু নামের আরো দুই ছাত্র এবং স্থানীয় মুদি দোকানি মো. মোস্তফা তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। পুলিশ ওই তিনজনকেও হাতকড়া পরিয়ে সেখান থেকে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে পুলিশের তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে সেখানে শত শত গ্রামবাসী জড়ো হতে থাকলে পুলিশ হাতকড়া খুলে দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়েন।
পুলিশের হয়রানির শিকার নবম শ্রেণির ছাত্র মামুন মিয়া জানায়, সে মাদকাসক্ত নয়। সে স্থানীয় মোস্তফার মুদির দোকানে চা খেয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে ধরে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে তাকে হাতকড়া পড়ানো হয়। এ ঘটনা মুদি দোকানি ও আরো দুই ছাত্র দেখে ফেলায় পুলিশ তাদেরকেও আটক করা হয়।
এ ঘটনা সম্পর্কে সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজেদুর রহমান ও ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ মোহাব্বত কবীর অবগত হলে তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় গিয়ে স্কুলছাত্র মামুনসহ চারজনের বক্তব্য শুনেন। প্রায় ঘন্টাখানেক বৈঠকের পর ওসি মো. মাজেদুর রহমান দাবি করেন ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটেছে। আর ভবিষ্যতে সাধারণ জনগণ আর হয়রানির শিকার যেন না হয় সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে ওসি গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার অভিযুক্ত দুই এসআই বলেন, মাদকের অভিযান চলাকালে সন্দেহভাজন হিসেবে চার জনের শরীর তল্লাশি করতে গেলে গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়। এক পর্যায়ে তাদেরকে রেখে আমরা চলে আসি। তাদের পকেটে ইয়াবা দেয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।
সরিষাবাড়ী থানার (ওসি) মো. মাজেদুর রহমান বলেন, ভুল ইনফরমেশনের ভিত্তিতে মাদকাসক্তদের ধরতে গিয়ে কোনাবাড়ী গ্রামবাসীর সাথে একটু সমস্যা হয়েছিল। তবে বিষয়টি গ্রামবাসীদের বোঝানোর পর তারা এলাকায় ফিরে গেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।