বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)কে চিঠি দিয়ে চুক্তি বাতিল করেছে রবি আজিয়াটা। ১০ মাস বাকি থাকতেই এ মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান জাতীয় দলের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনার ঠিক পরদিনই এশিয়া কাপকে লক্ষ্য রেখে নতুন জার্সিতে নেমেছে জাতীয় দল। এ কারণেই বলার অপেক্ষা রাখে না রবির সরে যাওয়ার বিষয়টি বেশ আগে বুঝতে বা জানতে পেরেছিল বিসিবি। এ সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে রবি দায়ী করেছে ক্রিকেটারদের। কারণ তারা জাতীয় দলের স্পন্সর হলেও সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মুর্তজারা অন্য মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন।বিসিবিও এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে দ্রুতই নয়া স্পন্সর যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন। তবে এ সরে যাওয়ার পিছনে যে কারণ জানিয়েছে রবি তা মানতে নারাজ বিসিবি। সিইও’র দাবি অন্য কোনো কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা যে কারণটা বলেছে সেটা হলো আমাদের খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগতভাবে যে চুক্তি অন্য অপারেটরদের সঙ্গে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকায় রবির আপত্তি ছিল। এবং সেটা পুরোপুরিভাবে সুরাহা না হওয়ার কারণেই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে। তবে আমাদের ধারণা হলো বিষয়টা তাদের অন্য কোনো কৌশলগত কারণে হতে পারে। বিষয়টা আমরা পুরোপুরি গ্রহণ করতে রাজি নই। কারণ আমরা এ ব্যাপারে বেশকিছু পদক্ষেপ রবির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নিয়েছিলাম। এরই মধ্যে সাকিব, তামিম অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। অন্যদেরটাও প্রক্রিয়াধীন ছিল।’
অন্যদিকে বিসিবি’র সিইও’র এ বক্তব্যের পর নতুন কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয় রবি কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে রবি আগে যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সেটিই বহাল রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নতুন কোনো কিছু সিদ্ধান্ত হলে তাও জানানো হবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। এ বিষয়ে রবির মিডিয়া বিভাগের এক কর্মকর্তা মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছি। এর বাইরে কথা বলতে পারবো না।’ অন্যদিকে রবির এভাবে সরে যাওয়াতেও বিস্মিত বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, সাকিব আল হাসানের সঙ্গে একটি টেলিকম কোম্পানির চুক্তি বাতিল করা হয়েছিল। তামিম ইকবালও করেছিল। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফিরটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। আমরা এমন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারপরও রবির নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে অবাক করার মতো।’
দুই বছরের চুক্তি থাকলেও তার আগেই রবির এ সরে যাওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে অন্যতম রবির কাছে বিসিবি জরিমানা দাবি করবে কি-না! এছাড়াও রবি বিসিবি’র কাছে অর্থ দাবি করবে কি-না? এরই মধ্যে বিসিবি’র দাবি রবিকে পরিশোধ করতে হবে দুই বছরে চুক্তির নির্ধারিত অর্থই। এ বিষয়ে নিজামুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট ও তাদের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট মিলে বিষয়টি সুরাহা করবে। আমাদের দাবি থাকবে যতদিন পর্যন্ত আমাদের চুক্তি ছিল তার পুরো টাকা প্রাপ্তির। আমরা এখন এই সিদ্ধান্তে অটল আছি। তারপর যদি কোনো দাবি-দাওয়ার আসে বা আইনগতভাবে যেটা হয় সেটা দেখা হবে।’
নিজামুদ্দির চৌধুরীর বক্তব্যে স্পষ্ট কোনোভাবেই তারা রবিকে ছাড় দিতে নারাজ। যদিও রবি ক্রিকেটারদের ইস্যু তুলে অর্থ দাবি করতে পারে সেটিও জানে বিসিবি। এর আগেও যখন সাহারা জাতীয় দলের স্পন্সর ছিল তখন একজন ক্রিকেটারের কারণে বিসিবিকে ৭ লাখ ডলার জরিমানা গুনতে হয়েছিল। এ সব কারণে ধারণা করা হচ্ছে দুই পক্ষ দাবি-দাওয়া আপসে সুরাহা না হলে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্তই গড়াতে পারে। অবশ্য মামলার প্রসঙ্গটি বিসিবি’র সিইও কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমাদের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট বিষয়গুলো দেখছে। আমরাও বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো। এখনই এমন কোনো কিছু বলতে পারবো না।’
এরই মধ্যে বিসিবি নতুন স্পন্সর খোঁজার ঘোষণা দিয়েছে। নিজামুদ্দিন চৌধুরী আশা করছেন এশিয়া কাপের আগেই নতুন স্পন্সর পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে বিসিবি’র সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, ‘দুই-একদিনের মধ্যেই আমরা সার্কুলার দেবো। শুধু এশিয়া কাপের জন্য হতে পারে কিংবা দীর্ঘমেয়াদেও হতে পারে।’ তবে নতুনভাবে যার সঙ্গে চুক্তি হোক সেখানেও ক্রিকেটের স্বাধীনতা থাকবে কি-না তা একটি প্রশ্ন। তবে সিইও স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন আগামীতে এমন হবে না। তিনি বলেন, ‘আগামীতে কোনো ক্রিকেটার কনফ্লিক্ট অব ইনটারেস্টে জড়াতে পারবে না। বিতর্ক এড়াতে নতুন স্পন্সরের সঙ্গে সেভাবেই চুক্তি হবে। ব্যক্তিগতভাবে কোনো ক্রিকেটার একই ঘরানার কোনো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।’