ঢাকায় পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানো ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে মেয়র সাঈদ খোকনকে দায়িত্ব দিয়ে তাকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বৈঠক শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বৈঠকে সড়কের নিরাপত্তা ও পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে মোট ২০টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তগুলোর কয়েকটি যদিও আগেই ছিল। তবে পুরাতনসহ নতুন নেয়া এ সিদ্ধান্তগুলো এখন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদ।সভায় গৃহীত বাকি সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় সড়কে জিরো গতির গাড়ি চলতে দেয়া হবে না। সড়ক ও মহাসড়কে ইজিবাইক, লেগুনা, নছিমন-করিমন জাতীয় ছোট যানগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করবে রোড ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি)। যে সমস্ত জেলায় আরটিসি নেই, সেখানে অতিসত্বর আরটিসি গঠন ও নিয়মিত সভা করে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য ডিসিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে চলমান বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহনের বাম্পার, হুক ও অ্যাঙ্গেল অপসারণ করতে হবে। ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ অপসারণ করা হয়েছে। বাকি ১০ শতাংশও অপসারণ করা হবে। জাতীয় মহাসড়কগুলোতে ইজিবাইকসহ ছোট ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরি করতে সড়ক পরিহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মালেককে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিআরটিএ’র চলমান সেবা কার্যক্রম শুক্রবার ব্যতীত সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা অব্যাহত থাকবে। সেতুমন্ত্রী বলেন, নতুন আট জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে ঢাকায় বিআরটিএ-তে ম্যাজিস্ট্রেট তিন জনের স্থলে ১১ জন করা হয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিন ১১টি মোবাইলকোর্ট চালানো হবে। ইজিবাইক, লেগুনা, নসিমন, করিমন, অটোরিকশার খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমতি না দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধপত্র পাঠানো হবে। দেশের মহাসড়কগুলোর কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধাসহ পাঁচটি স্থানে চালক ও হেলপারদের জন্য বিশ্রামাগার করা হবে। কোনো গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড, হুটার, স্টিকার ও মনোগ্রাম লাগানো চলবে না। হাইওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে ৮০ কিলোমিটার। এর বেশি থাকবে না। এই কাজের জন্য যন্ত্রপাতি আমদানি ও হাইওয়ে পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। রাজধানীতে গরিব চেহারার গাড়িগুলোর বডির রং আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিবর্তন করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের ২২টি মহাসড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমন ও অটোরিকশা দেখতে পাবেন না। সেখানে এসব মুক্ত করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বছর ঈদের সময় যে তিনটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনটিই হাইওয়েতে এবং প্রত্যেকটি হাইওয়েতেই ডিভাইডার ছিল। কাজেই সড়কগুলোতে ডিভাইডার দিলেই দুর্ঘটনা কমে যাবে, তা সত্য নয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ঢাকা উত্তরের প্যানেল মেয়র, পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, সড়ক পরিবহন সচিব নজরুল ইসলাম, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব আফরোজা খান, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।