পাবনার সাঁথিয়ায় পেট্রোল সন্ত্রাসের শিকার পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুক্তি খাতুন ৯ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে
হার মানলেন। সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মুক্তি খাতুন সাঁথিয়া উপজেলার নাগডেমড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হকের মেয়ে। তার মৃত্যুর সংবাদ নিজ এলাকায় এসে
পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মানুষের মধ্যে চাপাক্ষোভ বিরাজ করচ্ছে। সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আব্দুল মজিদ জানান, এলাকায় আইনশৃঙ্খলা যাতে অবনতি না হয় সেজন্য পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে সন্ত্রাসীদের ঢেলে দেয়া পেট্রোলে অগ্নিদগ্ধ, নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদ এবং বিচার দাবিতে পাবনা শহরে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শহরের প্রধান সড়ক আব্দুল হামিদ রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাবনা জেলা শাখা ও ‘আমরাই পারি’ পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে নিহত মুক্তির সহপাঠী পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের দর্শন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা একাত্মতা প্রকাশ করে অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে সমাবেশে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার জলি, আমরা পারি জোটের সদস্য সচিব আব্দুর রব মন্টু ও প্রজেক্ট কো-অডিনেটর নার্গিস পারভীন মুক্তি প্রমুখ।
গত ১৯শে আগস্ট দুপুরে সাঁথিয়া উপজেলার নাগডেমরা গ্রামের উন্মুক্ত জলাশয় দখলকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক ও সালাম গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে সালামের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জনের একটি দল দেশি অস্ত্র নিয়ে মোজ্জাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালায়। ঘটনার সময় মোজ্জাম্মেলসহ পরিবারের অন্যান্য পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে যান। এ সময় হামলাকারী সন্ত্রাসীরা মোজাম্মেল হকের মেয়ে মুক্তি খাতুনকে (২২) ঘর থেকে টেনে উঠানে নিয়ে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই হামলায় তার চাচাতো বোন আফরোজা খাতুন (৩০) এগিয়ে গেলে তারা তাকেও পিটিয়ে আহত করে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার একটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। অগ্নিদগ্ধ মুক্তি খাতুনকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ৯ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে হার মানলেন মুক্তি।
এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জাম্মেল হক বাদী হয়ে ঘটনার দিন রাতেই ৩২ জনকে আসামি করে সাঁথিয়া থানায় একটি মামলা করেন (নং-১৭)। পরে পুলিশ রাতে ও পরদিন সোমবার অভিযান চালিয়ে ১৯ জনকে আটক করে। ঘটনার পর রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পাবনা পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম, সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও র্যাবের প্রতিনিধি দল।
সাঁথিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আব্দুল মজিদ জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুক্তি খাতুন মারা গেছে। তিনি বলেন, মুক্তি খাতুনের ওপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে ৩২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে মামলার প্রধান আসামিকে এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি। খুব শিগগিরই মামলার প্রধান আসামি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবে- এমন দাবি জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তবে এলাকাবাসী জানান, প্রধান আসামি সরকারদলীয় রাজনীতির প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।