মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে নিয়োজিত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তথ্য সংগ্রহ করে তাদের কারণ দর্শাতে বলা হবে। গতকাল সকাল ১১টায় ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশ মাইগ্রেন্ট-এর উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ বন্ধের খবর সঠিক নয় বলেও দাবি করেন। বলেন, বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাওয়া অব্যাহত আছে, থাকবে। তবে ১লা সেপ্টেম্বর থেকে কর্মী নিয়োগের পদ্ধতির পরিবর্তন হবে।জিটুজি প্লাস পদ্ধতির অধীনে ১০ এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী যাবে না। এক্ষেত্রে পূর্বের পদ্ধতিতে কর্মী যাবে। এ ব্যাপারে দেশটির সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী জানান, জিটুজি প্লাস পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে ২ লাখ ৬৯ হাজার কর্মীর চাহিদা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে ২ লাখ ৩৫ হাজার কর্মীর ভিসা সত্যায়ন করেছে মালয়েশিয়া দূতাবাস। ৮৬টি কোম্পানির ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে প্রায় ৩২ হাজার ভিসা সত্যায়ন করা হয়নি। এর মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ২ লাখ কর্মীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। অনুমতির অপেক্ষায় আছে ২৫-৩০ হাজার কর্মীর ছাড়পত্র। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ কর্মী মালয়েশিয়া চলে গেছে। ৩০শে আগস্টের মধ্যে যারা ভিসা পাবেন কিংবা ছাড়পত্রের অপেক্ষায় থাকা ২৫-৩০ হাজার কর্মীও মালয়েশিয়া যেতে পারবেন, এতে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর্মীর ব্যাপারে তাদের বিশেষ চাহিদা আছে, এটা বন্ধ হবে না। নুরুল ইসলাম বিএসসি জানান, বর্তমানে মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে কর্মী নেয়ার জন্য তাদের পক্ষ থেকে নিয়োজিত আউটসোর্সিং কোম্পানি সিনারফ্ল্যাক্সের এসপিপিএ সিস্টেম ১লা সেপ্টেম্বর থেকে বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে এই সিস্টেমে আমাদের কাছে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে যে কলিং/ভিসা আসত, তা আর আসবে না।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে মন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশকে কিছু জানায়নি। ভুক্তভোগীদের দরখাস্ত করে অভিযোগ জানাতে হবে। এ বক্তব্যের পরই তিনি সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন। পরে তিনি এ আহ্বান পরিবর্তন করে সিন্ডিকেটকে শোকজ করার ঘোষণা দেন। মন্ত্রী বলেন, যে ১০ এজেন্সির কথা বলা হচ্ছে তাদের আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না, তাদেরকে মালয়েশিয়া সরকার কাজ দিয়েছে। কিন্তু একটা অভিযোগ যেহেতু উঠেছে তাদের আমরা শোকজ করবো।
তিনি বলেন, আমি বরাবরই সিন্ডিকেটের বিপক্ষে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এখনও চালু আছে, শুধু পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কথা বলছে তারা। এখনও ৩০ হাজার ভিসা সম্বলিত অপেক্ষমাণ শ্রমিক আছে। তারা তো বলেনি যে এরাও যেতে পারবে না। শুধু ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত যে এসপিপিএ সিস্টেম আছে সেই সিস্টেমে যেতে পারবে না। ১লা সেপ্টেম্বর থেকে অটোমেটিক্যালি পুরোনো পদ্ধতিতে যাবে। মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে তা স্পষ্ট হওয়ার জন্য আমরা মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে একটি ‘ভারবাল নোট’ দিয়েছি। আশা করি খুব শিগগির একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সৌদি আরবের শ্রমবাজার নিয়েও কথা বলেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সৌদি আরব থেকে ফেরত আসার খবর যে হারে আসছে তা সত্য নয়। কিছু নারীকর্মী চলে আসছে খাবার সমস্যার কারণে। কারণ অনেকেই রুটি খেতে পারেন না। এ ছাড়া ভাষা ও কালচারের কারণেও কেউ কেউ ফেরত চলে আসছে। তিনি বলেন, আমাদের মাধ্যমে যারা যায়, তাদের ট্রেনিং দেয়া হয়। কিন্তু এর বাইরেও অনেকে যাচ্ছে, তাদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার বলেন, যাদের ভিসা হয়ে গেছে তাদের অনেকেই ৩১শে আগস্টের মধ্যে চলে যাবেন। যারা যেতে পারবেন না তারা এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে টাকা ফেরত নেবেন। সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতাও নিতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা, রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্রেন্ট-এর সভাপতি ফিরোজ মান্না, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।