পাবনায় এক নারী সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তার নাম সুবর্ণা নদী (৩২)। তিনি জাগ্রত বাংলা অনলাইনের সম্পাদক ও প্রকাশক। তাছাড়া বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি এবং স্থানীয় পত্রিকাতে কাজ করতেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, পাবনা পৌর সদরের রাধানগর মহল্লায় আদর্শ গার্লস হাইস্কুলের পাশের গলিতে বসবাস করতেন তিনি। ঘটনার আগে মোটরসাইকেলে আসা মুখ বাঁধা অজ্ঞাতনামা কয়েকজন দুর্বৃত্ত বাসার কলিং বেল টিপে।এ সময় সুবর্ণা নদী নিজে গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। একপর্যায়ে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় নদীর মা মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং ৯৩ তারিখ ২৯শে আগস্ট ১৮। মামলায় পাবনার শিল্পপতি আবুল হোসেনকে প্রধান আসামি তার ছেলে রাজিব হোসেন ও কেয়ার টেকার মিলনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েক জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ প্রধান আসামি শিল্পপতি আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ঘটনা জানার পরে স্থানীয় সাংবাদিকরা হাসপাতালে ছুটে যান। তারা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এবং হত্যাকারী যে-ই হোক তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান। সুবর্ণা নদীর জান্নাত নামে ৬ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
সাংবাদিক সুবর্ণা নদীকে হত্যার প্রতিবাদে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে পাবনায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা। বুধবার সকালে পাবনা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন পাবনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি শিবজিত নাগ, সম্পাদক আঁখিনূর ইসলাম রেমন, পাবনা টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতির আহবায়ক রাজিউর রহমান রুমী, সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি, আনন্দ টিভির বার্তা সম্পাদক আফজাল হোসেনসহ অনেকে। বক্তরা হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রকৃত জড়িতদের দৃষ্টানন্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে বুধবার তার ময়নাতদন্ত শেষে বাদ আসর পাবনা এডয়ার্ড কলেজ মাঠে জানাজার পর পাবনা বালিয়া হালট কবরস্থানে দাফন করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান আসামি আবুল হোসেনের ছেলে নদীর সাবেক স্বামী রাজিব হোসেনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে একটি যৌতুক মামলা করেছিলেন সাংবাদিক নদী। মামলা নং-সিআর ২৯৭/১৭ (পাবনা)। মঙ্গলবার ঘটনার দিন নিহতের বড় বোনের সাক্ষ্য ছিল। সাক্ষী আসামির বিপক্ষে হওয়ায় তাদের সঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে বাকবিতণ্ডা হয়। মামলার কাজ সেরে নদী তার অফিসে এসে বসে এবং রাতে অফিসের কাজ শেষে বাড়ির গেটে ঢোকা মাত্রই ৩/৪ দুর্বৃত্ত এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তার মা পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বড় বোন চম্পা বেগম বলেন, মঙ্গলবার সকালে আমার বোনের যৌতুক মামলার সাক্ষ্য ছিল। আমার সাক্ষ্য আসামির বিপক্ষে যাওয়ায় আসামি রাজীব ও তার সহযোগীরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। একপর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমরা তখন সেখান থেকে বাড়িতে চলে আসি।
এ ব্যাপারে নিহতের মা মর্জিনা বেগম জানান, আমি আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেয়ার পথে সে আমাকে তার ওপর হামলাকারীদের নাম বলে। সে বলে আবুলের ছেলে রাজীব, সহকারী মিলনসহ কয়েকজন আমাকে কুপিয়েছে। আমি তাদের চিনতে পেরেছি। এ সময় রাজীবের ফাঁসি চাই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বাড়ির কেয়ারটেকার ইমরান হোসেনের ছোট ভাই মেহেদি বলেন, আমার ভাই এই বাড়ির কেয়ারটেকার। ঘটনার সময় আমার ভাই বাড়িতে ছিলেন না। পরে খবর পেয়ে ভয়ে বাড়ি ফেরেন নাই। রাত আড়াইটার দিকে বাড়ি আসলে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এবং সঙ্গে তার আরও কয়েকজন বন্ধুকে ধরেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিমলা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, রাতেই আমাদের মালিক আবুল হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস আরো বলেন, থানায় মামলা হয়েছে। আমরা প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদেরও খুব তাড়াতাড়ি আইনের আওতায় আনা হবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে।