কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আমরা যদি পঁচাত্তরের আন্দোলন সংগ্রামের ভিত গড়ে না দিতাম তাহলে আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষমতার স্বাদ পেতো না। এখন তাদের কবর রচনা হয়ে যেত। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শোকই আমাদের শক্তি, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও তার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ সংগ্রাম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন ।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘটনা হচ্ছে টাঙ্গাইল গিয়ে আমাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পরে ঐতিহাসিক ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অস্ত্র জমা নিয়েছিলেন। সময় পার হয়ে গেলে আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। মনে রাখতে চাই না।অনেক মানুষই আমাদের কথা মনে রাখে না।জাসদের কর্ণেল তাহেরকে কবর দেয়ার বিরুদ্ধাচারণ করে তিনি বলেন, তাকে কেনো কবর দেয়া হলো, সে তো বঙ্গবন্ধু হত্যায় খুশি হয়েছিল। তাকে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া হলো না কেনো? এখন তার দলের প্রধানকে, তার বউকে এমপি বানানো হয়েছে। তার ভাইকে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির ভিসি বানানো হয়েছে।
আমরা আজ রাজনৈতিক কথাবার্তা বলতে আসিনি। আগষ্টের শেষদিনে বঙ্গবন্ধুর আত্মার জন্য কথা বলতে এসেছি। না হলে জননেত্রীর দেশ বিরোধীর কর্মকান্ড তাকে করতে দেয়া হত না।
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, সব মানুষ দিয়ে সবকিছু হয় না। মওলানা ভাসানীর সেক্রেটারি আর শেখ হাসিনার সেক্রেটারি জিল্লুর রহমান এক নয়। দিনাজপুরে কয়লা হাওয়া হয়ে গেছে। কয়লা চুরির তদন্ত নয় বিচার হওয়া উচিৎ। এদেশে কিছুর বিচার হয় না।
কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, একজন সাধারণ নাগরিক, তরুণ সিদ্দিকী স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি এলাকায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেটা একটি বিশাল কিছু। বঙ্গবন্ধুর হত্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিহাসে এমন একটি বর্বরোচিত হত্যা দেশে হয়েছে এমনটা আর ঘটেনি। এর প্রতিবাদ এত বছরের ক্ষমতাসীন দলটির কাছে তেমন দেখা যায় না। আজ যত মুক্তিযোদ্ধা দেখি তত মুক্তিযোদ্ধা পাঁঁচ বছর আগে দেখিনি। এখন অনেককে দেখি তারা মুক্তিযোদ্ধা, তার ছেলেমেয়ে মুক্তিযোদ্ধা।
সাবেক এমপি ও ডাকসুর ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, কাদের সিদ্দিকী হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি বিদেশিদের কাছে প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর হত্যা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। একাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত আবদুল কাদের সিদ্দিকী তার বীরত্বের জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন টাইগার সিদ্দিকী বা বাঘা সিদ্দিকী নামে। আজ ওনাকেও দ্বিধাবিভক্ত করা হয়েছে। একাত্তরের ইতিহাস লিখতে হলে কাদের সিদ্দিকীর ইতিহাস লিখতেই হবে। তাকে বাদ দেয়া যাবে না। আজকে অনেকেই অবহেলিত। তখনকার নেত্রীর কাছের লোকজনই অবহেলিত। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে যিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্জন্ম দিয়েছিলেন সেই জহুরা তাজউদ্দিনের নাম আজ কেউ নেয় না।
সরকার যদি পঁচাত্তরের আন্দোলন সংগ্রামকারীদের স্বীকৃতি দেন তাহলে তিনি অমর হবেন। আর যদি না দেন তাহলে অনেকের মত তাকেও ইতিহাস অস্তাকুড়ে মারবে।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন কৃষক শ্রমিক লীগের সাধারণ-সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, নাসরিন সিদ্দিকী, সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ। আলোচনা সভার শুরুতেই পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের সম্মননা ব্যাচ পরিয়ে দেয়া হয়।