অমর কৌশিকের তৈরি এমন একটা চরিত্র স্ত্রী যে একই সঙ্গে দর্শকদের ভয়ও দেখায় আবার মুখে হাসিও এনে দেয়। দুই ঘণ্টা ও তার কিছুটা বেশি সময় ধরে চলা এই ছবিতে পরিচালক হাস্যরসের মধ্যে দিয়ে টানটান উত্তেজনা ধরে রাখতে পেরেছেন। ছবিতে স্ত্রী নামক ভয়ের চরিত্রকে বড় বড় সব মানুষই ভয় পায়। কিন্তু তা দেখে দর্শকের যেন ভয়ের পরিবর্তে হাসি পায় সে খেয়াল রেখেছেন পরিচালক।
পরিচালক তাঁর সমস্ত সম্পদ- লাইট, ক্যামেরা মুভমেন্ট, সাউন্ড ডিজাইন, এডিটিং সমস্ত কিছুর যথাযথ ব্যবহার করেছেন। ভয়ে কাঁটা হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যাওয়া- ‘স্ত্রী’ দেখতে দেখতে দর্শকের যেন দুই রকমেরই অভিজ্ঞতা হয় সে খেয়াল রেখেছেন পরিচালক এবং সে ক্ষেত্রে তিনি সফল।
ছবির কাস্টিং অত্যন্ত ভালো এবং রাজকুমার রাওয়ের অভিনয় দুর্দান্ত। এ ছাড়াও আর যার কথা না বললেই নয় তিনি হলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি। তাঁর অসাধারণ অভিনয় মুগ্ধ করেছে সকলকে। শ্রদ্ধা কাপুরকে একেবারেই অন্যরকম চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে এই ছবিতে। আর দক্ষতার সঙ্গে তিনি নিজের চরিত্রকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন। অপারশক্তি খুরানা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় উল্লেখযোগ্য।
ছবির শুটিং হয়েছে মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি গ্রামে। রাজ নিদিমরু, কৃষ্ণ ডিকের (এবং ছবির সহ-প্রযোজক দীনেশ বিজন) লেখা চিত্রনাট্য একেবারেই অন্যরকম এবং মুম্বাইয়ের বাণিজ্যিক ছবির থেকে রসদ খুঁজে নেওয়ার পরেও এই ছবি কোনো অংশে আলাদা হয়ে উঠেছে।
ছবিতে গ্রামের একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ইতিহাস রয়েছে। পুরুষতন্ত্র, মিসোজিনি এবং অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এক যৌনকর্মী ভালোবাসা খুঁজতে ব্যর্থ হয়ে গ্রামে আতঙ্ক ছড়াতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামের মানুষের একমাত্র আনন্দের উৎস হয়ে ওঠে চার দিনব্যাপী চলা এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
গ্রামের পুরুষরা রাতে বাড়ির বাইরে পা রাখতে ভয় পায়। কারণ পেছন থেকে কোনো নারী তার নাম ধরে ডাকলে আর পুরুষটি পেছনে ফিরে তাকালে তারপর আর পুরুষ মানুষটির কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। প্রতিটা বাড়ির দেয়ালে তাই লাল কালিতে লেখা ‘ও স্ত্রী কাল এসো’।
রাজকুমার রাও গ্রামের একজন বিখ্যাত দর্জির চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর দুই বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে অপারশক্তি খুরানা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একজন অজ্ঞাতপরিচয় নারী (শ্রদ্ধা কাপুর) যিনি গ্রামের উৎসবে চার দিনের জন্য ঘুরতে এসেছেন তাকে ঘিরে তিন বন্ধুর পাগলামি চলতে থাকে।
এই ছবিটি হলে গিয়ে দেখা যেতরেই পারে। হাস্যরস পরিবেশনের মধ্যে দিয়েই কিভাবে দর্শককে ভয় পাওয়াতে হয় তা ভালোই জানেন পরিচালক। আর এই ছবিতে তার যথাযথ ব্যবহার ঘটিয়েছেন।