হাসপাতালের অতিরিক্ত বিল দেখে সন্তান রেখে পালিয়ে গেলেন বাবা-মা

কুমিল্লার একটি হাসপাতালে বিলের চাপে চিকিৎসাধীন শিশু সন্তানকে হাসপাতালে রেখেই পালিয়ে গেছেন বাবা-মা।
এদিকে এই ঘটনায় বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফেলে যাওয়া শিশুটির রক্ষণাবেক্ষণে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। দুই লক্ষাধিক বিল আদায় করাতো দূরের কথা, এখন শিশুটিকে নিয়ে তারা কি করবেন তাই ভেবে পাচ্ছেন না। এদিকে এই ঘটনা জানার পর বাচ্চাটির চিকিৎসার ব্যয়ভার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বহন করা হবে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ।
জানা যায়, গেল ১৮ আগস্ট চাঁদপুরের শাহ আলম ও রোকেয়া দম্পতি অপরিণত ও অপেক্ষাকৃত কম ওজনের সন্তানকে বাঁচাতে কুমিল্লায় নিয়ে আসেন।
চিকিৎসার জন্য সন্তানকে ভর্তি করান নগরীর ঝাউতলার সিভিক স্কয়ারের মা ও শিশু স্পেশালাইজড হসপিটালে। ছয় দিন পর তাদের হাতে বিল হিসেবে তুলে দেয়া হয় দুই লাখ টাকার রশিদ। আর এই বিল দেখেই সন্তানকে রেখে ফেলে পালিয়ে যান বাবা-মা। বিষয়টি এখন গড়িয়েছে পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন পর্যন্ত।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, মাত্র ৭০০ গ্রাম ওজন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুকে চিকিৎসায় ইতিবাচকভাবে সবকিছু চলছিল। এ কদিনে বেশ আরোগ্যও হয় শিশুটির। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় বিল নিয়ে। ৬ষ্ঠ দিনে নবজাতকের চিকিৎসার বিলের পরিমাণ ওই দম্পতিকে জানানো হয়। টাকার অঙ্কে ছয় দিনে দুই লাখ টাকা বিল হয়েছে। ওই বিল দেখেই সবার অজান্তে সন্তানকে হাসপাতালের এসআইসিইউতে রেখেই গত ২৪ আগস্ট হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান দম্পতি। দিনভর বাবা-মায়ের সন্ধান না পেয়ে ওই শিশুর বিষয়ে কোতয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
সোমবার তিন সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিশুটির চিকিৎসা খরচ দুই লাখ ৩০ হাজার টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে বলে জানান কুমিল্লা মা ও শিশু স্পেশালাইজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বদিউল আলম।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে শিশুটির চিকিৎসা খরচ বহনের আশ্বাস দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য সেবায় অনেকটা এগিয়ে গেলেও মানবিক দিক দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি। চিকিৎসা সেবায় জড়িতদের আরও মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানার ওসি আবু সালাম মিয়া বলেন, ধারণা করা হচ্ছে চিকিৎসায় অতিরিক্ত ব্যয়ভারের কারণেই নবজাতকটির পিতা-মাতা পালিয়ে গেছে। তবে হাসপাতালে দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী তাদের সন্ধান পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আবু সাঈদ মো. তারেক জানান, শিশুটি আগের চেয়ে সুস্থ আছে। তবে তার এখন মায়ের বুকের দুধ প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *