সিলেট আখাউড়া রেল সেকশনের আওতাভূক্ত ২৬টি রেল ষ্টেশন ও সংলগ্ন এলাকার কয়েক হাজার কোটি টাকার মূল্যবান জমি, পরিত্যক্ত রেল-কোয়ার্টার, গুদাম ঘর, অফিসসহ রেল স্টেশনের আশপাশের পরিত্যক্ত জায়গা জমি প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এসব জমি উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের তেমন কোন তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ষ্টেশন সংলগ্ন এলাকার রেল লাইনের দুই পাশের ভূমি দখল করে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবও ভূমি বেদখল হওয়ার অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে একের পর এক দখল করে নিচ্ছে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ের শত, শত একর ভূমি ও দিঘী। ইতোমধ্যে অনেক স্থানে তৈরী করা হয়েছে বাণিজ্যিক মার্কেট, বাসা বাড়ী।
এসব ব্যাপারে ভুক্তভূগীরা অভিযোগ দিলেও কর্ণপাত করছেন না রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এছাড়াও প্রতিরাতেই চুরি হচ্ছে রেল লাইনের মূল্যবান লোহার পাত, নাট বল্টু, স্লিপার ইত্যাদি। অপর দিকে প্রভাবশালী মহল কর্তৃক শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ- বাল্লা- হরষপুর, মনতলা, নোয়াপাড়া, লস্করপর, রশিদপুর, সাতগাওসহ বিভন্ন ষ্টেশনের পাশের জমি দখল করে কোথাও কাঁচা আবার কোথাও অর্ধপাকা টিনসেডের ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছেন।এসব ঘর নি¤œ আয়ের লোক জনেকে ভাড়া দিয়ে নারী, শিশু ও পুরুষ শ্রমিকদের দিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। আবাসিক কোয়ার্টার গুলোতে বাইরের লোকজন বসবাস করলেও সেখানে সরবরাহকৃত পানি, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে।
সরজমিনে রেলওয়ে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র, শহরের পূর্ব পশ্চিম দিকে হবিগঞ্জ রোড, সিলেট ঢাকা রোড, শাহাজিবাজার রোড, লস্করপুর রোড সহ বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে রেলওয়ের কয়েকশ’ একর জায়গা যার সঠিক হিসাব কারো জানা নেই। এলাকাবাসী জানান স্বাধীনতার পর যখন যে সরকার ক্ষমতায় গেছে সেসব স্বার্থান্বেষী মহল একের পর এক দখল করে নিচ্ছে রেলওয়ের পতিত ভূমি। কোথাও কোথাও আধা কাঁচাপাকা ও আবার কোথাও ইটের গাঁথুনি দিয়ে রেলওয়ের জায়গার ওপর র্মাকেট, দোকান তৈরী করেছে। রেলওয়ে বস্তিতে কয়েকযুগ থেকে বসবাসরত লোকজনের সাথে কথাবলে জানাযায় শায়েস্তাগঞ্জ পৌরশহরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করার সার্মথ্য নাই। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এমন লোকজন আশ্রয় নিচ্ছে স্বল্প ভাড়ার এই রেলওয়ে বস্তিতে। টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন, আবার হাত বদল হচ্ছে এসব বস্তির নিয়ন্ত্রণ। অনেকে নতুন করে তৈরী করে নিচ্ছেন মার্কেট। ফলে ক্রমশঃ সংর্কীণ হয়ে পড়ছে রাস্তা ঘাট বাজার। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় রেল এষ্টেট বিভাগ ২০০৩ সালের প্রথম দিকে শায়েস্তাগঞ্জ রেলের জমি থেকে দুই সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। তৎকালীন সময়ে রহস্যজনক কারণে অবৈধভাবে দখলকৃত মাত্র ১০ একর ভূমিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযানের বাইরে থেকে যায় কয়েকশ একর ভূমি।
বর্তমানে শায়েস্তাগঞ্জ রেলষ্টেশনের আপ ও ডাউন লাইনে উভয় প্রান্তে এসব ভূমিতে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনার মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি কলোনী, বস্তিঘর, ঝুপড়িঘর ও দোকান পাট। এসব স্থাপনাকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অপরাধীদের আস্তানা। মাদক সেবন মাদক বিক্রি থেকে শুরু করে পতিতাবৃত্তি, জুয়া চোরাচালান, চোলাই মদের আসর সবই চলে এখানে। চোর ডাকাত সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতরা নির্বিঘেœ বসবাস করছেন এসব বস্তিতে। অভিযোগ রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে বৈধভাবে এসব জমির কিছু অংশ লিজ নিয়েছিলেন তাদের অনেকের লিজের সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও রেল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে সেখানে বসবাস করছেন।
সূত্র জানায়, রেলওয়ে ভূসম্পত্তি বিভাগের অনুমোদন ব্যতিত কারো কোন জায়গা লীজ দেয়ার কথা নয় কিন্তু এক শ্রেণীর কর্মকর্তা অবৈধ টাকার বিনিময়ে জাল অনুমোদনপত্র ব্যবহার করে লীজ দিচ্ছেন, যে করণে অবৈধ লোকজনদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছেনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে চরম দায়িত্বহীনতা উদাসীনতার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি এখন রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দখলে। ফলে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।
জানাগেছে, শায়েস্তাগঞ্জের এক শ্রেণীর ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাযোসে রেলওয়ের বানিজ্যিক ভূমিগুলো চর দখলের মত চলেগেছে অবৈধ দখলে। এসব ভূমিতে গড়ে উঠেছে কয়েক শত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ভবন। এভাবে রেলওয়ে কর্মচারী কর্মকর্তা অবৈধ উপায়ে আয় করছে লাখ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ের কয়েক শত একর ফাঁকা ভূসম্পত্তি এবং রেলওয়ে কর্মচারীদের বসবাসের জন্য প্রায় ৪ শতটি কোর্য়াটারের মধ্যে ৩০০টি বেদখল হয়েগেছে। এসব কোর্য়াটারের সামনে-পেছনে ও বিভিন্ন স্থনে ফাঁকা জায়গাগুলো মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ের ভূমিদস্যুদের হাতে তুলে দেয় একশ্রেণীর ভূসম্পত্তি ও শ্রমিক নেতা। ফলে এসব এসব সম্পত্তি থেকে সরকার কোন ধরনের রাজস্ব পাচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবী আইনী জটিলতার কারণে ওইসব সম্পত্তি ও কোর্য়াটার উদ্ধার করা যাচ্ছে না। রেলওয়ে কোর্য়াটারগুলোতে অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। রেলওয়ের গুদাম ঘরটির সাথে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের হালকা এবং ভারী যানবাহনের তথাকথিত অবৈধ ষ্ট্যান্ড। এদিকে রেলের কতিপয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা নামধারী শ্রমিক নেতাদের যোগসাজশে দখল প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে।