অনেক দিন পর প্রাণ ফিরেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। ১০ হাজারের অধিক দর্শকের মনে প্রাণের সঞ্চার করেছেন তরুণ উদ্যমী ফুটবলাররা। প্রায় বছর দুয়েক আগে যারা ভুটানের কাছে হেরে তলানিতে নিয়ে গিয়েছিলেন দেশের ফুটবলকে, তারাই কাল ভুটানকে হারিয়ে টেনে তোলার ইঙ্গিত দিলেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দলকে এনে দিলেন দারুণ এক জয়। সুফিল, তপুর কল্যাণে জয় আসলো ২-০ গোলে। সুফিল একটি গোল করলেও কমপক্ষে তিন-চারটি গোল করার মতো সুযোগ তৈরি করেছিলেন। এদিকে দিনের প্রথম ম্যাচে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছে পাকিস্তান। আগামীকাল গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ পাকিস্তানের আর নেপাল খেলবে ভুটানের বিপক্ষে।এদিন একাদশ নির্বাচনে শুরুতে চমক দেন কোচ জেমি ডে। কাতার ও কোরিয়ায় কন্ডিশনিং ক্যাম্প এবং ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান গেমসে দলের সঙ্গে ছিলেন না গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল। কিন্তু দেশে ফিরেই নীলফামারীর বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে তাকে খেলিয়ে দেন জেমি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই ম্যাচে হতাশ করেন দীর্ঘদেহী এই গোলরক্ষক। তার কারণেই ১-০ গোলে ম্যাচটি হারে স্বাগতিকরা। এশিয়ান গেমসে নিয়মিত খেলা আশরাফুল ইসলাম রানাকে বাদ দিয়ে সোহেলকে রেখে একাদশ সাজান জেমি। তার শুরুর একাদশে ছিলেন না অভিজ্ঞ মামুনুল ইসলাম নাসিরউদ্দিন চৌধুরীও। মূলত এশিয়াডের দলে দুটি পরিবর্তন এনে তরুণে আস্থা রেখে একাদশ সাজানোর প্রতিদান জেমি ডে পেয়েছেন। পুরো ম্যাচে দারুণ খেলেছে বাংলাদেশ। ডিফেন্সে দুই একটি ভুলের কথা বাদ দিলে দুই প্রান্তে সুফিল বিপলু ছিলেন অসাধারণ। ভুটানের বড় তারকা চেনচো গেইলশেনকে খেলতে দেয়নি বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিল ভুটানের বিপক্ষে। কেরালার ত্রিবান্দ্রামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কাল যেন সেখান থেকেই শুরু করে জামাল-সুফিলরা। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে দারুণ এক কর্নার আদায় করেন সুফিল। ওয়ালি ফয়সালের নেয়া কর্নারে সাদউদ্দিনকে বক্সের মধ্যে পুশ করেন থিসং দর্জি। এতে পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। তাতে থেকে গোল করে লিড এনে দেন তপু বর্মন (১-০)। কেরালা সাফেও ভুটানের বিপক্ষে প্রথম গোল করেছিলেন এই ডিফেন্ডার। সপ্তম মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোল প্রায় করেই ফেলেছিলেন মাহবুবুর রহমান সুফিল। বিপলুর থ্রো ধরে বল নিয়ে একাই এগিয়ে যাচ্ছিলেন সুফিল। তবে আগুয়ান গোলরক্ষক থিসরিং দেনদুপকে ফাঁকি দিতে পারেননি এই মিডফিল্ডার।
মাঝে ডিফেন্ডার তপু, বাদশার দুটি ভুলে গোল হজমও করতে পারতো বাংলাদেশ। ২৮ মিনিটে জামালের থ্রু সুফিলের শট বাইরে চলে যায়। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে সুফিল বিপলুর কম্বিনেশন দারুণ এক আক্রমণ শানায় বাংলাদেশ। বল নিয়ে বক্সে ডোকার আগমুহূর্তে বিপলুকে বল দেন সুফিল। তাতে বিপলুর নেয়া শট কর্নারে রক্ষা করেন ভুটানি গোলরক্ষক। ওয়ালির কর্নারে ফাহাদের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে দ্বিতীয় গোলবঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। ৪৭ মিনিটে সুফিলের গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে স্বাগতিকরা। বিপলু দেয়া বাড়ানো বলে ডান দিক দিয়ে দারুণ ফিনিশিং করেন এই মিডফিল্ডার (২-০)। মাঝ মাঠে জামাল ভুঁইয়ার সঙ্গে ফাহাদ যেমন ছিলেন অবিচল, তেমনি দুই প্রান্তে মাসুক মিয়া জনি ও সুফিল ছিলেন দুর্দান্ত। বিশেষ করে ডান দিক দিয়ে বিশ্বনাথ ঘোষ সুফিল, বিপলু ব্যস্ত রাখেন ভুটানের রক্ষণভাগ। গত তিন আসরে বাংলাদেশের জয় ছিল যেখানে একটি, সেখানে আসরের প্রথম ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষের এই জয় ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণাই যোগাবে। যে প্রেরণায় ভরে যাবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারি।
বাংলাদেশের একাদশ: শহিদুল আলম সোহেল (গোলরক্ষক); ডিফেন্ডার: বিশ্বনাথ ঘোষ, তপু বর্মন, টুটুল হোসেন, ওয়ালি ফয়সাল; মাঝমাঠ: জামাল ভূঁইয়া, আতিকুর রহমান ফাহাদ, মাসুক মিয়া জনি (ইমন বাবু); আক্রমণ ভাগ: মাহবুবুর রহমান সুফিল, বিপলু আহমেদ ও সাদউদ্দিন (ফয়সাল মাহমুদ) (মামুনুল ইসলাম)।