গোয়েন্দা নথি নিয়ে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মাথা নত করেননি বঙ্গবন্ধু

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে পাকিস্তানি আমলের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংকলিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবনে এক অনুষ্ঠানে ১৪ খণ্ডের এ সংকলনের প্রথম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকাশিত সব তথ্য বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ছিল। তা জেনেও প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি যাতে দেশের মানুষ সত্যটা জানতে পারে। জাতির পিতা আজীবন দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি কখনো মাথা নত করেননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাক্কানী পাবলিশার্সের প্রকাশক গোলাম মোস্তফা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা ও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববিসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকাশনায় অমূল্য তথ্য ভাণ্ডার রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট সবই জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ রিপোর্ট তারপরও কেন আমরা প্রকাশ করলাম, এটা অনেকের মনে আসতে পারে? আমি জানি না পৃথিবীতে কোথাও কোনো দেশে কেউ কখনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে কোনো রিপোর্ট হলে সেটা প্রকাশ করেছে কি না? আমার মনে হয় আজ পর্যন্ত বোধহয় কেউ করেনি। কিন্তু আমার আগ্রহ এ কারণেই এই রিপোর্টের মধ্য দিয়ে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার প্রতিটি কর্মকাণ্ড, তিনি কি করেছেন, কোন মিটিং করেছেন। কোন মিটিংয়ে কী বক্তৃতা দিয়েছেন, তার অনেক তথ্য সেখানে আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কখনও মাথা নত করেননি বঙ্গবন্ধু। অথচ এক সময় বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা শুধু ভোগের জন্য নয়, ক্ষমতা ত্যাগেরও বিষয়। মানুষের জন্য দেশের জন্য কতটুকু দিতে পারলাম সেটাই মূল বিষয়। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু পারেনি।

দিন যতই যাচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাস তত সমৃদ্ধ হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নাম আরো উজ্জ্বল হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কাজ করছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখে পাকিস্তানের অনেক নাগরিক বলছে, এদেশকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শুধু সংগ্রাম করে গেছেন। তার সংগ্রাম ছিল এ দেশের মানুষকে শোষণ বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করা। তৎকালীন পূর্ব বাংলা এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে বৈষম্য ছিল সে বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বারবার জেল খেটেছেন, বারবার তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল এই দুই বছরে তৎকালীন পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার গোপন নথিগুলো নিয়ে প্রথম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করা হলো। তারা বঙ্গবন্ধুর চলাফেরা, গতিবিধির বিপক্ষে যে সমস্ত নোট দিয়েছেন সেগুলো সমৃদ্ধ করে বই প্রকাশ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত আমরা বাকি খণ্ডগুলোও প্রকাশ করতে চাই। এ প্রকাশনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তথা সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারবে বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতা শুধু ভোগের জন্য নয়, ক্ষমতা ত্যাগেরও বিষয়। মানুষের জন্য দেশের জন্য কতটুকু দিতে পারলাম সেটাই মূল বিষয়। বাংলাদেশ ২১০০ সালে কেমন হবে সেটা মাথায় রেখে আমরা ১০০ বছরের পরিকল্পনা করছি। যে গতিতে বাংলাদেশ এগুচ্ছে তাতে আগামী ৪১ সালে এই বাংলাদেশ উন্নত বাংলাদেশ হবে বলে বিশ্বাস করি। বইটির প্রকাশনা সংস্থা হাক্কানী পাবলিশার্সের গোলাম মোস্তফা বলেন, এই বইটি পড়ার সময় কেউ চোখের জল আটকিয়ে রাখতে পারবেন না। ১৪ খণ্ডের সঙ্কলনে ভাষা আন্দোলন, জমিদারি প্রথা বিলুপ্তকরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন, আওয়ামী লীগের জন্ম, শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠিপত্র, বিভিন্ন লিফলেট বিতরণ, বক্তব্য-বিবৃতি, গ্রেপ্তার, কারাবরণ, কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আত্মীয়স্বজন ও নেতাকর্মীদের সাক্ষাতের বিষয়গুলো উঠে এসেছে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের বয়ানে। ইংরেজি ভাষায় লেখা পুরনো এসব নথি দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) রেকর্ড রুমেই পড়ে ছিল অযত্ন আর অবহেলায়। বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী এসবি প্রধানের দায়িত্বে থাকার সময় প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহে সেসব নথি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন এবং ৬০৬-৪৮ ফাইল নম্বর দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে যেসব ক্লাসিফায়েড তথ্য সেখানে ছিল, সেগুলোর পাঠোদ্ধার ও সঙ্কলিত করার ব্যবস্থা করেন।

‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধাদের উদ্দেশে। ৫৮২ পৃষ্ঠার প্রথম খণ্ডের দাম রাখা হয়েছে ৯০০ টাকা। একই নকশায় প্রতিটি খণ্ডের প্রচ্ছদ করেছেন সমর মজুমদার। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খান, ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এবং হাক্কানী পাবলিশার্সের প্রকাশক গোলাম মোস্তফা। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহেনা, স্পিকার শিরীন শারিমন চৌধুরী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদও ছিলেন অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ আলী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা ও চার নির্বাচন কমিশনার, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, দেশি-বিদেশি অতিথি, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *